Kazi Nazrul Islam

Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #1

- কাজী নজরুল ইসলাম


[কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আজি হতে শতবর্ষ পরে” পড়িয়া]

আজি হ’তে শত বর্ষ আগে!
কে কবি, স্মরণ তুমি ক’রেছিলে আমাদেরে শত আনুরাগে,
আজি হ’তে শত বর্ষ আগে।

ধেয়ানী গো, রহস্য-দুলাল!
উতারি’ ঘোমটাখানি তোমার আঁখির আগে
কবে এল সুদূর আড়াল?

আনাগত আমাদের দখিন-দূয়ারী
বাতায়ন খুলি তুমি, হে গোপন হে স্বপ্ন-চারী,
এসেছিলে বসন্তের গন্ধবহ-সাথে,
শত বর্ষ পরে যেথা তোমার কবিতাখানি পড়িতেছি রাতে।
নেহারিলে বেদনা-উজ্জ্বল আঁখি-নীরে,
আনমনা প্রজাপতি নীরব পাখায়
উদাসীন, গেলে ধীরে ফিরে।

আজি মোরা শত বর্ষ পরে
যৌবন-বেদনা-রাঙা তোমার কবিতাখানি
পড়িতেছি অনুরাগ-ভরে ।।
জড়িত জাগর ঘুমে শিথিল শয়নে
শুনিতেছি প্রিয়া মোর তোমার ইঙ্গিত গান সজল নয়নে।

আজো হায়
বারে বারে খুলে যায়
দক্ষিণের রুদ্ধ বাতায়ন,
গুমরি গুমরি কাঁদে উচাটন বসন্ত-পবন
মনে মনে বনে বনে পল্লব মর্মরে,
কবরীর অশ্রুজল বেশী-খসা ফুল-দল পড়ে ঝ’রে ঝ’রে!

ঝিরি ঝিরি কাঁপে কালো নয়ন-পল্লব,
মধুপের মুখ হতে কাড়িয়া মধুপী পিয়ে পরাগ আসব!
কপোতের চষ্ণুপুটে কপোতীর হারায় কূজন
পরিয়াছে বনবধূ যৌবন-আরক্তিম কিংশুক-বসন।
রহিয়া রহিয়া আজো ধরনীর হিয়া
সমীর উচ্ছ্বাস্ব যেন উঠে নিঃশ্বসিয়া!

তোমা হ’তে শত বর্ষ পরে--
তোমার কবিতাখানি পড়িতেছি,
হে কবীন্দ্র, অনুরাগ ভরে!
আজি এই মদালসা ফাগুন-নিশীথে
তোমার ইঙ্গিত জাগে তোমার সঙ্গীতে!
চতুরালি, ধরিয়াছি তোমার চাতুরী।
করি' চুরি

আসিয়াছ আমাদের দুরন্ত যৌবনে,
কাব্য হ’য়ে, গান হ’য়ে, সিক্তকন্ঠে রঙ্গীলা স্বপনে।
আজিকার যত ফুল- বিহঙ্গের যত গান যত রক্ত-রাগ
তব অনুরাগ হ’তে হে চির-কিশোর কবি,
আনিয়াছে ভাগ !
আজি নব-বসন্তের প্রভাত-বেলায়
গান হ’য়ে মাতিয়াছে আমাদের যৌবন-মেলায়।

আনন্দ দুলাল ওগো হে চির অমর।
তরুণ তরুণি মোরা জাগিতেছি আজ তব মাধবী বাসর।
যত গান গাহিয়াছ ফুল-ফোটা রাতে--
সবগুলি তার
একবার--তা’ পর আবার
প্রিয়া গাহে, আমি গাহি, আমি গাহি প্রিয়া গাহে সাথে।
গান-শেষে অর্ধরাতে স্বপনেতে শুনি
কাঁদে প্রিয়া, “ওগো কবি ওগো বন্ধু ওগো মোর গুণী--”
স্বপ্ন যায় থামি',
দেখি, বন্ধু, আসিয়াছ প্রিয়ার নয়ন-পাতে অশ্রু হ’য়ে নামি'।
মনে লাগে, শত বর্ষ আগে
তুমি জাগো--তব সাথে আরো কেহ জাগে
দূরে কোন্ ঝিলিমিলি-তলে
লুলিত-অঞ্চলে।
তোমার ইঙ্গিতখানি সঙ্গীতের করুণ পাখায়
উড়ে যেতে যেতে সেই বাতায়নে ক্ষণিক তাকায়,
ছুঁয়ে যায় আখি-জল রেখা,
নুয়ে যায় অলক-কুসুম,
তারপর যায় হারাইয়া,--তুমি একা বসিয়া নিঝ্‌ঝুম।
সে কাহার আঁখিনীর- শিশির লাগিয়া,
মুকুলিকা বাণী তব কোনটি বা ওঠে মঞ্জুরিয়া,
কোনটি বা তখনো গুঞ্জরি ফেরে মনে
গোপনে স্বপনে।

সহসা খুলিয়া গেল দ্বার,
আজিকার বসন্ত প্রভাতখানি দাঁড়াল করিয়া নমস্কার।
শতবর্ষ আগেকার তোমারি সে বাসন্তিকা দূতি
আজি তব নবীনের জানায় আকুতি!...
হে কবি-শাহান-শাহ। তোমারে দেখিনি মোরা,
সৃজিয়াছ যেতাজমহল-
শ্বেতচন্দনের ফোঁটা কালের কপালে ঝলমল--
বিস্ময়-বিমুগ্ধ মোরা তাই হেরি,
যৌবনেরে অভিশাপি-- “কেন তুই শতবর্ষ করিলি রে দেরী?”
হায়, মোরা আজ
মোম্‌তাজে দেখিনি, শুধু দেখিতেছি তাজ!

শতবর্ষ পরে আজি হে কবি-সম্রাট!
এসেছে নূতন কবি--করিতেছে তব নান্দীপাঠ!
উদয়াস্ত জুড়ি' আজো তব
কত না বন্দনা-ঋক ধ্বনিছে নব নব।
তোমারি সে হারা-সুরখানি
নববেণু-কুঞ্জে-ছায়ে বিকশিয়া তোলে নব বাণী।

আজি তব বরে
শতবেণু-বীণা বাজে আমাদের ঘরে।
তবুও পুরে না হিয়া ভরে না ক' প্রাণ,
শতবর্ষ সাঁতরিয়া ভেসে আসে স্বপ্নে তব গান।
মনে হয়, কবি ,
আজো আছ অস্তপাট আলো করি' আমাদেরি রবি!
আজি হ’তে শত বর্ষ আগে
যে অভিবাদন তুমি ক’রেছিলে নবীনেরে রাঙা অনুরাগে,
সে-অভিবাদনখানি আজি ফিরে চলে
প্রণামী-কমল হ’য়ে তব পদতলে!

মনে হয়, আসিয়াছ অপূর্ণের রূপে
ওগো পূর্ণ আমাদেরি মাঝে চুপে চুপে।
আজি এই অপূর্ণের কম্প্র কন্ঠস্বরে
তোমারি বসন্তগান গাহি তব বসন্ত-বাসরে--
তোমা হ’তে শতবর্ষ পরে!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #2

- কাজী নজরুল ইসলাম


ঐ ঘাসের ফুলে মটরশুটির ক্ষেতে
আমার এ-মন-মৌমাছি ভাই উঠেছে আজ মেতে।।

এই রোদ-সোহাগী পউষ-প্রাতে
অথির প্রজাপতির সাথে
বেড়াই কুঁড়ির পাতে পাতে
পুষ্পল মৌ খেতে।
আমি আমন ধানের বিদায়-কাঁদন শুনি মাঠে রেতে।।

আজ কাশ-বনে কে শ্বাস ফেলে যায় মরা নদীর কূলে,
ও তার হলদে আঁচল চ’লতে জড়ায় অড়হরের ফুলে!
ঐ বাবলা ফুলের নাকছবি তার,
গা’য় শাড়ি নীল অপরাজিতার,
চ’লেছি সেই অজানিতার
উদাস পরশ পেতে।।

আমায় ডেকেছে সে চোখ-ইশারায় পথে যেতে যেতে।।
ঐ ঘাসের ফুলে মটরশুটির ক্ষেতে
আমার এ-মন-মৌমাছি ভাই উঠেছে তাই মেতে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #3

- কাজী নজরুল ইসলাম


ঋতুর খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণীর সওগাত?
নবীন ধানের আঘ্রানে আজি অঘ্রান হ'ল মাৎ।
'গিন্নি-পাগল' চা'লের ফিরনী
তশতরী ভ'রে নবীনা গিন্নী
হাসিতে হাসিতে দিতেছে স্বামীরে, খুশীতে কাঁপিছে হাত।
শিরনী রাঁধেন বড় বিবি, বাড়ী গন্ধে তেলেসমাত!

মিঞা ও বিবিতে বড় ভাব আজি খামারে ধরে না ধান।
বিছানা করিতে ছোট বিবি রাতে চাপা সুরে গাহে গান!
'শাশবিবি' কন, 'আহা, আসে নাই
কতদিন হ'ল মেজলা জামাই।'
ছোট মেয়ে কয়, 'আম্মা গো, রোজ কাঁদে মেজো বুবুজান!'
দলিজের পান সাজিয়া সাজিয়া সেজো-বিবি লবেজান!

হল্লা করিয়া ফিরিছে পারার দস্যি ছেলের দল!
ময়নামতীর শাড়ী-পরা মেয়ে গয়নাতে ঝলমল!
নতুন পৈঁচি বাজুবন্দ প'রে
চাষা-বৌ কথা কয় না গুমোরে,
জারী গান আর গাজীর গানেতে সারা গ্রাম চঞ্চল!
বৌ করে পিঠা 'পুর'-দেওয়া মিঠা, দেখে জিভে সরে জল!

মাঠের সাগরে জোয়ারের পরে লেগেছে ভাটির টান।
রাখাল ছেলের বিদায়-বাঁশীতে ঝুরিছে আমন ধান!
কৃষক-কন্ঠে ভাটিয়ালী সুর
রোয়ে রোয়ে মরে বিদায়-বিধুর!
ধান ভানে বৌ, দুলে দুলে ওঠে রূপ-তরঙ্গে বান!
বধূর পায়ের পরশে পেয়েছে কাঠের ঢেঁকিও প্রান!

হেমন্ত-গায় হেলান দিয়ে গো রৌদ্র পোহায় শীত!
কিরণ-ধারায় ঝরিয়া পড়িছে সূর্য - আলো-সরিৎ!
দিগন্তে যেন তুর্কী-কুমারী
কুয়াশা-নেকাব রেখেছে উতারি'!
চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া নিশি জাগিছে একা নিশীথ,
নতুনের পথ চেয়ে চেয়ে হ'ল হরিৎ পাতারা পীত!

নবীনের লাল ঝান্ডা উড়ায়ে আসিতেছে কিশলয়,
রক্ত নিশান নহে যে রে ওরা রিক্ত শাখার জয়!
'মুজদা' এনেছে অগ্রহায়ণ-
আসে নৌরোজ খোল গো তোরণ,
গোলা ভ'র রাখ সারা বছরের হাসি-ভরা সঞ্চয়।
বাসি বিছানায় জাগিতেছে শিশু সুন্দর নির্ভয়!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #4

- কাজী নজরুল ইসলাম


অনাদি কাল হতে অনন্ত লোক
গাহে তোমারই জয়।
আকাশ-বাতাস রবি-গ্রহ তারা চাঁদ,
হে প্রেমময়।।
সমুদ্র-কল্লোল নির্ঝর-কলতান-
হে বিরাট, তোমারই উদার জয়গান;
ধ্যান গম্ভীর কত শত হিমালয়
গাহে তোমারই জয়।।
তব নামের বাজায় বীণা বনের পল্লব
জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব।
সকল জাতির কোটি উপাসনালয়
গাহে তোমারই জয়।।
আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায়
তব জয়গান বাজে অপরূপ মহিমায়,
কোটি যুগ-যুগান্ত সৃষ্টি প্রলয়
গাহে তোমারই জয়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #5

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমারে বন্দনা করি
স্বপ্ন-সহচরী
লো আমার অনাগত প্রিয়া,
আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!
তোমারে বন্দনা করি….
হে আমার মানস-রঙ্গিণী,
অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী!
তোমারে বন্দনা করি….
নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা!
আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা….
গোপণ-চারিণী মোর, লো চির-প্রেয়সী!
সৃষ্টি-দিন হ’তে কাঁদ’ বাসনার অন্তরালে বসি’-
ধরা নাহি দিলে দেহে।
তোমার কল্যাণ-দীপ জ্বলিলে না
দীপ-নেভা বেড়া-দেওয়া গেহে।
অসীমা! এলে না তুমি সীমারেখা-পারে!
স্বপনে পাইয়া তোমা’ স্বপনে হারাই বারে বারে
অরুপা লো! রহি হ’য়ে এলে মনে,
সতী হ’য়ে এলে না ক’ ঘরে।
প্রিয় হ’য়ে এলে প্রেমে,
বধূ হয়ে এলে না অধরে!
দ্রাক্ষা-বুকে রহিলে গোপনে তুমি শিরীন্‌ শরাব,
পেয়ালায় নাহি এলে!-
‘উতারো নেকার’-
হাঁকে মোর দুরন্ত কামনা!
সুদুরিকা! দূরে থাক’-ভালোবাসা-নিকটে এসো না।

তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা।
তুমি মরীচিকা,
তুমি জ্যোতি।-
জন্ম-জন্মান্তর ধরি’ লোকে-লোকান্তরে তোমা’ করেছি আরতি,
বারে বারে একই জন্মে শতবার করি!
যেখানে দেখেছি রূপ,-করেছি বন্দনা প্রিয়া তোমারেই স্মরি’।
রূপে রূপে, অপরূপা, খুঁজেছি তোমায়,
পবনের যবনিকা যত তুলি তত বেড়ে যায়!
বিরহের কান্না-ধোওয়া তৃপ্ত হিয়া ভরি’
বারে বারে উদিয়াছ ইন্দ্রধনুসমা,
হাওয়া-পরী
প্রিয় মনোরমা!
ধরিতে গিয়োছি-তুমি মিলায়েছ দূর দিগ্বলয়ে
ব্যথা-দেওয়া রাণী মোর, এলে না ক’ কথা কওয়া হ’য়ে।

চির-দূরে থাকা ওগো চির-নাহি-আসা!
তোমারে দেহের তীরে পাবার দুরাশা
গ্রহ হ’তে গ্রহান্তরে ল’য়ে যায় মোরে!
বাসনার বিপুল আগ্রহে-
জন্ম লভি লোকে-লোকান্তরে!
উদ্বেলিত বুকে মোর অতৃপ্ত যৌবন-ক্ষুধা
উদগ্র কামনা,
জন্ম তাই লভি বারে বারে,
না-পাওয়ার করি আরাধনা!….
যা-কিছু সুন্দর হেরি’ ক’রেছি চুম্বন,
যা-কিছু চুম্বন দিয়া ক’রেছি সুন্দর-
সে-সবার মাঝে যেন তব হরষণ
অনুভব করিয়াছি!-ছুঁয়েছি অধর
তিলোত্তমা, তিলে তিলে!
তোমারে যে করেছি চুম্বন
প্রতি তরুণীর ঠোঁটে
প্রকাশ গোপন।

যে কেহ প্রিয়ারে তার চুম্বিয়াছে ঘুম-ভাঙা রাতে,
রাত্রি-জাগা তন্দ্রা-লাগা ঘুম-পাওয়া প্রাতে,
সকলের সাথে আমি চুমিয়াছি তোমা’
সকলের ঠোঁটে যেন, হে নিখিল-প্রিয়া প্রিয়তমা!
তরু, লতা, পশু, পাখী, সকলের কামনার সাথে
আমার কামনা জাগে,-আমি রমি বিশ্ব-কামনাতে!
বঞ্চিত যাহারা প্রেমে, ভুঞ্জে যারা রতি-
সকলের মাঝে আমি-সকলের প্রেমে মোর গতি!
যে-দিন স্রষ্টার বুকে জেগেছিল আদি সৃষ্টি-কাম,
সেই দিন স্রষ্টা সাথে তুমি এলে, আমি আসিলাম।
আমি কাম, তুমি হ’লে রতি,
তরুণ-তরুণী বুকে নিত্য তাই আমাদের অপরূপ গতি!
কী যে তুমি, কী যে নহ, কত ভাবি-কত দিকে চাই!
নামে নামে, অ-নামিকা, তোমারে কি খুঁজিনু বৃথাই?
বৃথাই বাসিনু ভালো? বৃথা সবে ভালোবাসে মোরে?
তুমি ভেবে যারে বুকে চেপে ধরি সে-ই যায় স’রে।
কেন হেন হয়, হায়, কেন লয় মনে-
যারে ভালো বাসিলাম, তারো চেয়ে ভালো কেহ
বাসিছে গোপনে।

সে বুঝি সুন্দরতর-আরো আরো মধু!
আমারি বধূর বুকে হাসো তুমি হ’য়ে নববধূ।
বুকে যারে পাই, হায়,
তারি বুকে তাহারি শয্যায়
নাহি-পাওয়া হ’য়ে তুমি কাঁদ একাকিনী,
ওগো মোর প্রিয়ার সতিনী।….
বারে বারে পাইলাম-বারে বারে মন যেন কহে-
নহে, এ সে নহে!
কুহেলিকা! কোথা তুমি? দেখা পাব কবে?
জন্মেছিলে জন্মিয়াছ কিম্বা জন্ম লবে?
কথা কও, কও কথা প্রিয়া,
হে আমার যুগে-যুগে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!

কহিবে না কথা তুমি! আজ মনে হয়,
প্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়।
জন্ম যার কামনার বীজে
কামনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে।
দিকে দিকে শাখা তার করে অভিযান,
ও যেন শুষিয়া নেবে আকাশের যত বায়ু প্রাণ।
আকাশ ঢেকেছে তার পাখা
কামনার সবুজ বলাকা!

প্রেম সত্য, প্রেম-পাত্র বহু-আগণন,
তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন।
মদ সত্য, পাত্র সত্য নয়!
যে-পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়!
চির-সহচরী!
এতদিনে পরিচয় পেনু, মরি মরি!
আমারি প্রেমের মাঝে রয়েছ গোপন,
বৃথা আমি খুঁজে মরি’ জন্মে জন্মে করিনু রোদন।
প্রতি রূপে, অপরূপা, ডাক তুমি,
চিনেছি তোমায়,
যাহারে বাসিব ভালো-সে-ই তুমি,
ধরা দেবে তায়!
প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু,
বহু পাত্রে ঢেলে পি’ব সেই প্রেম-
সে শরাব লোহু।
তোমারে করিব পান, অ-নামিকা, শত কামনায়,
ভৃঙ্গারে, গোলাসে কভু, কভু পেয়ালায়!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #6

- কাজী নজরুল ইসলাম


পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।

কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই ( রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।

তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাসখানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।

মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #7

- কাজী নজরুল ইসলাম


অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে
পথ ছিল গো চলার, যদি দুদিন আগে আসতে
আজকে মহাসাগর স্রোতে চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা, সেই আঁধারে ভাসতে
যাই সেই আঁধারে ভাসতে।

গহন রাতি ডাকে আমায়, এসে তুমি আজকে
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে
আসতে যদি হে অতিথি, ছিল যখন শুক্লা তিথি
ফুটতো চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #8

- কাজী নজরুল ইসলাম


জাগো–
জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত!
যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’
হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,
নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী
ওরে ওই আগত।।

আদি শৃঙ্খলা সনাতন শাস্ত্র-আচার
মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার!
ভেদি’ দৈত্য-কারা!
আয় সর্বহারা!
কেহ রহিবে না আর পর-পদ-আনত।।

কোরাস্‌ :
নব ভিত্তি ’পরে
নব নবীন জগৎ হবে উত্থিত রে!
শোন্‌ অত্যাচারী! শোন্‌ রে সঞ্চয়ী!
ছিনু সর্বহারা, হব’ সর্বজয়ী।।
ওরে সর্বশেষের এই সংগ্রাম-মাঝ,
নিজ নিজ অধিকার জুড়ে দাঁড়া সবে আজ!
এই ‘অন্তর-ন্যাশনাল-সংহতি’ রে
হবে নিখিল-মানব-জাতি সমুদ্ধত।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #9

- কাজী নজরুল ইসলাম


অনেক ক’রে বাসতে ভালো পারিনি মা তখন যারে,
আজ অবেলায় তারেই মনে পড়ছে কেন বারে বারে।।
আজ মনে হয় রোজ রাতে সে ঘুম পাড়াত নয়ন চুমে,
চুমুর পরে চুম দিয়ে ফের হান্‌তে আঘাত ভোরের ঘুমে।
ভাব্‌তুম তখন এ কোন্‌ বালাই!
কর্‌ত এ প্রাণ পালাই পালাই।
আজ সে কথা মনে হ’য়ে ভাসি অঝোর নয়ন-ঝরে।
অভাগিনীর সে গরব আজ ধূলায় লুটায় ব্যথার ভারে।।
তরুণ তাহার ভরাট বুকের উপ্‌চে-পড়া আদর সোহাগ
হেলায় দু’পায় দ’লেছি মা, আজ কেন হায় তার অনুরাগ?
এই চরণ সে বক্ষে চেপে
চুমেছে, আর দু’চোখ ছেপে
জল ঝ’রেছে, তখনো মা কইনি কথা অহঙ্কারে,
এম্‌নি দারুণ হতাদরে ক’রেছি মা, বিদায় তারে।।
দেখেওছিলাম বুক-ভরা তার অনাদরের আঘাত-কাঁটা,
দ্বার হ’তে সে গেছে দ্বারে খেয়ে সবার লাথি-ঝাটা।
ভেবেছিলাম আমার কাছে
তার দরদের শানি- আছে,
আমিও গো মা ফিরিয়ে দিলাম চিন্‌তে নেরে দেবতারে।
ভিক্ষুবেশে এসেছিল রাজাধিরাজ দাসীর দ্বারে।।
পথ ভুলে সে এসেছিল সে মোর সাধের রাজ-ভিখারী,
মাগো আমি ভিখারিনী, আমি কি তাঁয় চিন্‌তে পারি?
তাই মাগো তাঁর পূজার ডালা
নিইনি, নিইনি মণির মালা,
দেব্‌তা আমার নিজে আমায় পূজল ষোড়শ-উপচারে।
পূজারীকে চিন্‌লাম না মা পূজা-ধূমের অন্ধকারে।।
আমায় চাওয়াই শেষ চাওয়া তার মাগো আমি তা কি জানি?
ধরায় শুধু রইল ধরা রাজ-অতিথির বিদায়-বাণী।
ওরে আমার ভালোবাসা!
কোথায় বেঁধেছিলি বাসা
যখন আমার রাজা এসে দাঁড়িয়েছিল এই দুয়ারে?
নিঃশ্বসিয়া উঠছে ধরা, ‘নেই রে সে নেই, খুঁজিস কারে!’
সে যে পথের চির-পথিক, তার কি সহে ঘরের মায়া?
দূর হ’তে মা দূরন-রে ডাকে তাকে পথের ছায়া।
মাঠের পারে বনের মাঝে
চপল তাহার নূপুর বাজে,
ফুলের সাথে ফুটে বেড়ায়, মেঘের সাথে যায় পাহাড়ে,
ধরা দিয়েও দেয় না ধরা জানি না সে চায় কাহারে?
মাগো আমায় শক্তি কোথায় পথ-পাগলে ধ’রে রাখার?
তার তরে নয় ভালোবাসা সন্ধ্যা-প্রদীপ ঘরে ডাকার।
তাই মা আমার বুকের কবাট
খুলতে নারল তার করাঘাত,
এ মন তখন কেমন যেন বাসত ভালো আর কাহারে,
আমিই দূরে ঠেলে দিলাম অভিমানী ঘর-হারারে।।
সোহাগে সে ধ’রতে যেত নিবিড় ক’রে বক্ষে চেপে,
হতভাগী পারিয়ে যেতাম ভয়ে এ বুক উঠ্‌ত কেঁপে।
রাজ ভিখারীর আঁখির কালো,
দূরে থেকেই লাগ্‌ত ভালো,
আসলে কাছে ক্ষুধিত তার দীঘল চাওয়া অশ্র”-ভারে।
ব্যথায় কেমন মুষড়ে যেতাম, সুর হারাতাম মনে তরে।।
আজ কেন মা তারই মতন আমারো এই বুকের ক্ষুধা
চায় শুধু সেই হেলায় হারা আদর-সোহাগ পরশ-সুধা,
আজ মনে হয় তাঁর সে বুকে
এ মুখ চেপে নিবিড় সুখে
গভীর দুখের কাঁদন কেঁদে শেষ ক’রে দিই এ আমারে!
যায় না কি মা আমার কাঁদন তাঁহার দেশের কানন-পারে?
আজ বুঝেছি এ-জনমের আমার নিখিল শানি–আরাম
চুরি ক’রে পালিয়ে গেছে চোরের রাজা সেই প্রাণারাম।
হে বসনে-র রাজা আমার!
নাও এসে মোর হার-মানা-হারা!
আজ যে আমার বুক ফেটে যায় আর্তনাদের হাহাকারে,
দেখে যাও আজ সেই পাষাণী কেমন ক’রে কাঁদতে পারে!
তোমার কথাই সত্য হ’ল পাষাণ ফেটেও রক্ত বহে,
দাবাললের দার”ণ দাহ তুষার-গিরি আজকে দহে।
জাগল বুকে ভীষণ জোয়ার,
ভাঙল আগল ভাঙল দুয়ার
মূকের বুকে দেব্‌তা এলেন মুখর মুখে ভীম পাথারে।
বুক ফেটেছে মুখ ফুটেছে-মাগো মানা ক’র্‌ছ কারে?
স্বর্গ আমার গেছে পুড়ে তারই চ’লে যাওয়ার সাথে,
এখন আমার একার বাসার দোসরহীন এই দুঃখ-রাতে।
ঘুম ভাঙাতে আস্‌বে না সে
ভোর না হ’তেই শিয়র-পাশে,
আস্‌বে না আর গভীর রাতে চুম-চুরির অভিসারে,
কাঁদাবে ফিরে তাঁহার সাথী ঝড়ের রাতি বনের পারে।
আজ পেলে তাঁয় হুম্‌ড়ি খেয়ে প’ড়তুম মাগো যুগল পদে,
বুকে ধ’রে পদ-কোকনদ স্নান করাতাম আঁখির হ্রদে।
ব’সতে দিতাম আধেক আঁচল,
সজল চোখের চোখ-ভরা জল-
ভেজা কাজল মুছতাম তার চোখে মুখে অধর-ধারে,
আকুল কেশে পা মুছাতাম বেঁধে বাহুর কারাগারে।
দেখ্‌তে মাগো তখন তোমার রাক্ষুসী এই সর্বনাশী,
মুখ থুয়ে তাঁর উদার বুকে ব’লত,‘ আমি ভালোবাসি!’
ব’ল্‌তে গিয়ে সুখ-শরমে
লাল হ’য়ে গাল উঠত ঘেমে,
বুক হ’তে মুখ আস্‌ত নেমে লুটিয়ে যখন কোল-কিনারে,
দেখ্‌তুম মাগো তখন কেমন মান ক’রে সে থাক্‌তে পারে!
এম্‌নি এখন কতই আমা ভালোবাসার তৃষ্ণা জাগে
তাঁর ওপর মা অভিমানে, ব্যাথায়, রাগে, অনুরাগে।
চোখের জলের ঋণী ক’রে,
সে গেছে কোন্‌ দ্বীপান-রে?
সে বুঝি মা সাত সমুদ্দুর তের নদীর সুদূরপারে?
ঝড়ের হাওয়া সেও বুঝি মা সে দূর-দেশে যেতে নারে?
তারে আমি ভালোবাসি সে যদি তা পায় মা খবর,
চৌচির হ’য়ে প’ড়বে ফেটে আনন্দে মা তাহার কবর।
চীৎকারে তার উঠবে কেঁপে
ধরার সাগর অশ্রু ছেপে,
উঠবে ক্ষেপে অগ্নি-গিরি সেই পাগলের হুহুঙ্কারে,
ভূধর সাগর আকাশ বাতাস ঘুর্ণি নেচে ঘিরবে তারে।
ছি, মা! তুমি ডুকরে কেন উঠছ কেঁদে অমন ক’রে?
তার চেয়ে মা তারই কোনো শোনা-কথা শুনাও মোরে!
শুনতে শুনতে তোমার কোলে
ঘুমিয়ে পড়ি। - ও কে খোলে
দুয়ার ওমা? ঝড় বুঝি মা তারই মতো ধাক্কা মারে?
ঝোড়ো হওয়া! ঝোড়ো হাওয়া! বন্ধু তোমার সাগর পারে!
সে কি হেথায় আসতে পারে আমি যেথায় আছি বেঁচে,
যে দেশে নেই আমার ছায়া এবার সে সেই দেশে গেছে!
তবু কেন থাকি’ থাকি’,
ইচ্ছা করে তারেই ডাকি!
যে কথা মোর রইল বাকী হায় সে কথা শুনাই কারে?
মাগো আমার প্রাণের কাঁদন আছড়ে মরে বুকের দ্বারে!
যাই তবে মা! দেখা হ’লে আমার কথা ব’লো তারে-
রাজার পূজা-সে কি কভু ভিখারিনী ঠেলতে পারে?
মাগো আমি জানি জানি,
আসবে আবার অভিমানী
খুঁজতে আমায় গভীর রাতে এই আমাদের কুটীর-দ্বারে,
ব’লো তখন খুঁজতে তারেই হারিয়ে গেছি অন্ধকারে!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #10

- কাজী নজরুল ইসলাম


যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি'
যেদিন আমায় খুঁজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, -
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব'লবে সবাই - 'সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?'
আসবে ভেঙে কান্না!
প'ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'!
বুকের মালা ক'রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #11

- কাজী নজরুল ইসলাম


একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন–
ঝন রনরন রন ঝনঝন!
সেকি দমকি দমকি
ধমকি ধমকি
দামা-দ্রিমি-দ্রিমি গমকি গমকি
ওঠে চোটে চোটে,
ছোটে লোটে ফোটে
বহ্নি-ফিনিকি চমকি চমকি
ঢাল-তলোয়ারে খনখন!
একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন
রণ ঝনঝন ঝন রণরণ!

হৈ হৈ রব
ঐ ভৈরব
হাঁকে, লাখে লাখে
ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে
লাল গৈরিক-গায় সৈনিক ধায় তালে তালে
ওই পালে পালে,
ধরা কাঁপে দাপে।
জাঁকে মহাকাল কাঁপে থরথর!
রণে কড়কড় কাড়া-খাঁড়া-ঘাত,
শির পিষে হাঁকে রথ-ঘর্ঘর-ধ্বনি ঘররর!
'গুরু গরগর' বোলে ভেরী তূরী,
'হর হর হর'
করি চীৎকার ছোটে সুরাসুর-সেনা হনহন!
ওঠে ঝন্‌ঝা ঝাপটি দাপটি সাপটি
হু-হু-হু-হু-হু-হু-শনশন!
ছোটে সুরাসুর-সেনা হনহন!

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ খল খল খল
নাচে রণ-রঙ্গিণী সঙ্গিনী সাথে,
ধকধক জ্বলে জ্বলজ্বল
বুকে মুখে চোখে রোষ-হুতাশন!
রোস্ কোথা শোন্!

ঐ ডম্বরু-ঢোলে ডিমিডিমি বোলে,
ব্যোম মরুৎ স-অম্বর দোলে,
মম-বরুণ কী কল-কল্লোলে চলে উতরোলে
ধ্বংসে মাতিয়া তাথিয়া তাথিয়া
নাচিয়া রঙ্গে! চরণ-ভঙ্গে
সৃষ্টি সে টলে টলমল!

ওকি বিজয়-ধ্বনি সিন্ধু গরজে কলকল কল কলকল!
ওঠে কোলাহল,
কূট হলাহল
ছোটে মন্থনে পুন রক্ত-উদধি,
ফেনা-বিষ ক্ষরে গলগল!
টলে নির্বিকার সে বিধাত্রীরো গো
সিংহ-আসন টলমল!
কার আকাশ-জোড়া ও আনত-নয়ানে
করুণা-অশ্রু ছলছল!

বাজে মৃত সুরাসুর-পাঁজরে ঝাঁজর ঝম্‌ঝম,
নাচে ধূর্জটি সাথে প্রমথ ববম্ বম্‌বম্!
লাল লালে-লাল ওড়ে ঈশানে নিশান যুদ্ধের,
ওঠে ওঙ্কার রণ-ডঙ্কার,
নাদে ওম্ ওম্ মহাশঙ্খ বিষাণ রুদ্রের!
ছোটে রক্ত-ফোয়ারা বহ্নির বান রে!
কোটি বীর-প্রাণ
ক্ষণে নির্বাণ
তবু শত সূর্যের জ্বালাময় রোষ
গমকে শিরায় গম্‌গম্!
ভয়ে রক্ত-পাগল প্রেত পিশাচেরও
শিরদাঁড়া করে চন্‌চন্!
যত ডাকিনী যোগিনী বিস্ময়াহতা,
নিশীথিনী ভয়ে থম্‌থম্!
বাজে মৃত সুরাসুর-পাঁজরে ঝাঁঝর ঝম্‌ঝম্!

ঐ অসুর-পশুর মিথ্যা দৈত্য-সেনা যত
হত আহত করে রে দেবতা সত্য!
স্বর্গ, মর্ত, পাতাল, মাতাল রক্ত-সুরায়;
ত্রস্ত বিধাতা,
মস্ত পাগল পিনাক-পাণি স-ত্রিশূল প্রলয়-হস্ত ঘুরায়!
ক্ষিপ্ত সবাই রক্ত-সুরায়!

চিতার উপরে চিতা সারি সারি,
চারিপাশে তারি
ডাকে কুক্কুর গৃহিনী শৃগাল!
প্রলয়-দোলায় দুলিছে ত্রিকাল!
প্রলয়-দোলায় দুলিছে ত্রিকাল!!
আজ রণ-রঙ্গিণী জগৎমাতার দেখ্ মহারণ,
দশদিকে তাঁর দশ হাতে বাজে দশ প্রহরণ!
পদতলে লুটে মহিষাসুর,
মহামাতা ঐ সিংস-বাহিনী জানায় আজিকে বিশ্ববাসীকে–
শাশ্বত নহে দানব-শক্তি, পায়ে পিষে যায় শির পশুর!
'নাই দানব
নাই অসুর,–
চাইনে সুর,
চাই মানব!'–
বরাভয়-বাণী ঐ রে কার
শুনি, নহে হৈ রৈ এবার!

ওঠ্ রে ওঠ্,
ছোট্ রে ছোট্!
শান্ত মন,
ক্ষান্ত রণ!–

খোল্ তোরণ,
চল্ বরণ
করব্ মা'য়;
ডর্‌ব কায়?
ধরব পা'য় কার্ সে আর,
বিশ্ব-মা'ই পার্শ্বে যার?
আজ আকাশ-ডোবানো নেহারি তাঁহারি চাওয়া,
ঐ শেফালিকা-তলে কে বালিকা চলে?
কেশের গন্ধ আনিছে আশিন-হাওয়া!
এসেছে রে সাথে উৎপলাক্ষী চপলা কুমারী কমলা ঐ,
সরসিজ-নিভ শুভ্র বালিকা
এল বীণা-পাণি অমলা ঐ!

এসেছে গনেশ,
এসেছে মহেশ,
বাস্‌রে বাস্!
জোর উছাস্!!
এল সুন্দর সুর-সেনাপতি,
সব মুখ এ যে চেনা-চেনা অতি!
বাস্ রে বাস্‌ জোর উছাস্!!

হিমালয়! জাগো! ওঠো আজি,
তব সীমা লয় হোক।
ভুলে যাও শোক– চোখে জল ব'ক
শান্তির– আজি শান্তি-নিলয় এ আলয় হোক!
ঘরে ঘরে আজি দীপ জ্বলুক!
মা'র আবাহন-গীত্ চলুক!
দীপ জ্বলুক!
গীত চলুক!!
আজ কাঁপুক মানব-কলকল্লোলে কিশলয় সম নিখিল ব্যোম্!
স্বা-গতম্!
স্বা-গতম্!!
মা-তরম্!
মা-তরম্!!
ঐ ঐ ঐ বিশ্ব কণ্ঠে
বন্দনা- বাণী লুণ্ঠে-'বন্দে মাতরম্!!!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #12

- কাজী নজরুল ইসলাম


আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে -
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে -
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #13

- কাজী নজরুল ইসলাম


আজি মনে মনে লাগে হোরী
আজি বনে বনে জাগে হোরী।।
ঝাঁঝর করতাল খরতালে বাজে
বাজে কংকন চুড়ি মৃদুল আওয়াজে
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
প্রেম-উল্লাসে শ্যামল গৌরী।।
আজি কদম্ব তমাল রঙ্গে লালে লাল
হলো কৃষ্ণ ভ্রমর ভ্রমরী
রঙ্গের উজান চলে কালো যমুনার জলে
আবীর রাঙ্গা হলো ময়ূর-ময়ূরী।।
মোর হৃদি বৃন্দাবন যেন রাঙে
রাধা শ্যাম যুগল চরণ রাগে
ও চরণ ধূলি যেন ফাগ হ’য়ে মেশে রে
অন্তরে পড়ে মোর ঝরি’।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #14

- কাজী নজরুল ইসলাম


আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?

মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি
খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি।
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা,
মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা।

তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে
রক্ত-তৃষার 'ময়-ভুখা-হু'র কাঁদন-কেতন কণ্বে ধরে।-
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা,
আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা।
দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা
দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।..

'ময় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী
কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #15

- কাজী নজরুল ইসলাম


[চারিদিকে নিস্তব্ধ নির্বাক। সেই মৌনা নিশীথিনীকে ব্যথা দিতেছিল শুধু কাফ্রি-সাস্ত্রীর পায়চারির বিশ্রী খট্‌খট্ শব্দ। ঐ জিন্দানখানায় মহাবাহু আনোয়ারের জাতীয়-সৈন্যদলের সহকারী এক তরুণ সেনানী বন্দী। তাহার কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশ, ডাগর চোখ, সুন্দর গঠন– সমস্ত-কিছুতে যেন একটা ব্যথিত-বিদ্রোহের তিক্ত-ক্রন্দন ছলছল করিতেছিল। তরুণ প্রদীপ্ত মুখমণ্ডলে চিন্তার রেখাপাতে তাহাকে তাহার বয়স অপেক্ষা অনেকটা বেশি বয়স্ক বোধ হইতেছিল।
সেইদিনই ধামা-ধরা সরকারের কোর্ট-মার্শালের বিচারে নির্দ্ধারিত হইয়া গিয়াছে যে, পরদিন নিশিভোরে তরুণ সেনানীকে তোপের মুখে উড়াইয়া দেওয়া হইবে।
আজ হতভাগ্যের সেই মুক্তি-নিশীথ, জীবনের সেই শেষরাত্রি। তাহার হাতে, পায়ে, কটিদেশে, গর্দানে উৎপীড়নের লৌহ-শৃঙ্খল। শৃঙ্খল-ভারাতুর তরুণ সেনানী স্বপ্নে তাহার ‘মা’-কে দেখিতেছিল। সহসা চীৎকার করিয়া সে জাগিয়া উঠল। তাহার পর চারিদিকে কাতর নয়নে একবার চাহিয়া দেখিল, কোথাও কেহ নাই। শুধু হিমানি-সিক্ত বায়ু হা হা স্বরে কাঁদিয়া গেল, ‘হায় মাতৃহারা!’
স্বদেশবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা স্মরণ করিয়া তরুণ সেনানী ব্যর্থ-রোষে নিজের বাম বাহু নিজে দংশন করিয়া ক্ষত-বিক্ষত করিতে লাগিল। কারাগৃহের লৌহ-শলাকায় তাহার শৃঙ্খলিত দেহভার বারেবারে নিপতিত হইয়া কারা-গৃহ কাঁপাইয়া তুলিতেছিল।
এখন তাহার অস্ত্র-গুরু আনোয়ারকে মনে পড়িল। তরুণ বন্দী চীৎকার করিয়া উঠিল, ‘আনোয়ার!’–]

আনোয়ার! আনোয়ার!
দিলাওয়ার তুমি, জোর তলওয়ার হানো, আর
নেস্ত-ও-নাবুদ করো, মারো যত জানোয়ার!
আনোয়ার! আফসোস্!
বখতেরই সাফ্ দোষ,
রক্তেরও নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ,
ভেঙে গেছে শম্‌শের–পড়ে আছে খাপ কোষ!
আনোয়ার! আফসোস্!

আনোয়ার! আনোয়ার!
সব যদি সুম্‌সাম, তুমি কেন কাঁদো আর?
দুনিয়াতে মুসলিম আজ পোষা জানোয়ার!
আনোয়ার! আর না!–
দিল্ কাঁপে কার না?
তল্‌ওয়ারে তেজ নাই! –তুচ্ছ স্মার্ণা,
ঐ কাঁপে থরথর মদিনার দ্বার না?
আনোয়ার! আর না!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বুক ফেড়ে আমাদের কলিজাটা টানো, আর
খুন করো –খুন করো ভীরু যত জানোয়ার!
আলোয়ার! জিঞ্জির–
পরা মোরা খিঞ্জির!
শৃঙ্খলে বাজে শোনো রোণা রিণ-ঝিণ্ কির,–
নিবু নিবু ফোয়ারা বহ্নির ফিন্‌কির!
গর্দানে জিঞ্জির!

আনোয়ার! আনোয়ার!
দুর্বল্ এ গিদ্‌ধড়ে কেন তড়্‌পানো আর?
জোরওয়ার শের কই? জের্‌বার জানোয়ার!
আনোয়ার! মুশ্‌কিল
জাগা কঞ্জুশ্-দিল,
ঘিরে আসে দাবানল তবু নাই হুঁশ তিল!
ভাই আজ শয়তান ভাই-এ মারে ঘুষ কিল!
আনোয়ার! মুশ্‌কিল!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বেইমান মোরা, নাই জান আধ-খানও আর।
কোথা খোঁজো মুস্‌লিম? –শুধু বুনো জানোয়ার!
আনোয়ার! সব শেষ!–
দেহে খুন অবশেষ!–
ঝুটা তেরি তলওয়ার ছিন্ লিয়া যব্ দেশ !
আওরত সম ছি ছি ক্রদন রব পেশ ! !
আনোয়ার ! সব শেষ !

আনোয়ার ! আনোয়ার !
জনহীন এ বিয়াবানে মিছে পস্তানো আর !
আজো যারা বেঁচে আছে তারা খ্যাপা জানোয়ার !
আনোয়ার ! –কেউ নাই !
হাথিয়ার? –সেও নাই !
দরিয়াও থম্‌থম্ নাই তাতে ঢেউ, ছাই !
জিঞ্জির গলে আজ বেদুঈন-দে'ও ভাই !
আনোয়ার ! কেউ নাই !

আনোয়ার ! আনোয়ার !
যে বলে সে মুস্‌লিম– জিভ্ ধরে টানো তার !
বেইমান জানে শুধু জানটা বাঁচানো সার !
আনোয়ার ! ধিক্কার !
কাঁধে ঝুলি ভিক্ষার–
তল্ওয়ারে শুরু যার স্বধীনতা শিক্ষার!
যারা ছিল দুর্দম আজ তারা দিক্‌দার!
আনোয়ার! ধিক্কার!

আনোয়ার ! আনোয়ার!
দুনিয়াটা খুনিয়ার, তবে কেন মনো আর
রুধিরের লোহু আঁখি? –শয়তানি জানো সার!
আনোয়ার ! পঞ্জায়
বৃথা লোকে সম্‌ঝায়,

ব্যথা-হত বিদ্রোহী দিল্‌ নাচে ঝন্‌ঝায়,
খুন-খেগো তল্‌ওয়ার আজ শুধু রণ্ চায়,
আনোয়ার ! পঞ্জায়!
আনোয়ার ! আনোয়ার!
পাশা তুমি নাশা হও মুসলিম-জানোয়ার,
ঘরে যত দুশ্‌মন, পরে কেন হানো মার?–
আনোয়ার ! এসো ভাই!
আজ সব শেষও যাই!–
ইস্‌লামও ডুবে গেল, মুক্ত স্বদেশও নাই!-
তেগ ত্যাজি বরিয়াছি ভিখারির বেশও তাই!
আনোয়ার ! এসো ভাই!!



[সহসা কাফ্রি সাস্ত্রীর ভীম চ্যালেঞ্জ্ প্রলয়-ডম্বরু-ধ্বনির মতো হুঙ্কার দিয়া উঠিল– 'এয়্ নৌজওয়ান, হুঁশিয়ার!' অধীর ক্ষোভে তিক্ত রোষে তরুণের দেহের রক্ত টগবগ করিয়া ফুটিয়া উঠিল! তাহার কটিদেশের, গর্দানের, পায়ের শৃঙ্খল খানখান হইয়া টুটিয়া গেল, শুধু হাতের শৃঙ্খল টুটিল না। সে সিংহ-শাবকের মতো গর্জন করিয়া উঠিল–]
এয়্ খোদা! এয়্ আলি! লাও মেরি তলোয়ার!

[সহসা তাহার ক্লান্ত আঁখির চাওয়ায় তুরস্কের বন্দিনী মাতৃ-মূর্তি ভাসিয়া উঠিল। ঐ মাতৃমূর্তির পার্শ্বেই তাহার মায়েরও শৃঙ্খলিত ভিখারিনি বেশ। তাঁদের দুইজনেরই চোখের কোণে দুই বিন্দু করিয়া করুণ অশ্রু। অভিমানী পুত্র অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া লইয়া কাঁদিয়া উঠিল–]

ও কে? ও কে ছল আর?
না-মা, মরা জানকে এ মিছে তর্‌সানো আর!
আনোয়ার ! আনোয়ার!!

[কাপুরুষ প্রহরীর ভীম প্রহরণ বিনিদ্র বন্দী তরুণ সেনানীর পৃষ্ঠের উপর পড়িল। অন্ধ কারাগারের বন্ধ রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাহারই আর্ত প্রতিধ্বনি গুমরিয়া ফিরিতে লাগিল-'আঃ-আঃ-আঃ!'
আজ নিখিল বন্দী-গৃহে গৃহে ঐ মাতৃমুক্তিকামী তরুণেরই অতৃপ্ত কাঁদন ফরিয়াদ করিয়া ফিরিতেছে। যেদিন এ ক্রন্দন থামিবে, সেদিন সে-কোন্ অচিন্ দেশে থাকিয়া গভীর তৃপ্তির হাসি হাসিব জানি না! তখন হয়তো হারা-মা-আমার আমায় 'তারার পানে চেয়ে চেয়ে' ডাকবেন। আমিও হয়তো আবার আসিব। মা কি আমায় তখন নূতন নামে ডাকিবেন? আমার প্রিয়জন কি আমায় নূতন বাহুর ডোরে বাঁধিবে? আমার চোখ জলে ভরিয়া উঠিতেছে, আর কেন যেন মনে হইতেছে, 'আসিবে সেদিন আসিবে!']

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #16

- কাজী নজরুল ইসলাম


আন্‌মনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
সাঁতার জানি না, আনি কলস কেমন করি।

জানি না বলিব কি, শুধাবে যবে ননদী
কাহার কথা ভাবে পোড়া মন নিরবধি
গাগরী না ভাসিয়া ভাসিতাম আমি যদি-
কি বলিব কেন মোর ভিজিল গো ঘাগরী

একেলা কুলবধূ, পথ বিজন, নদীর বাঁকে
ডাকিল বৌ-কথা-কও কেন হলুদ চাঁপার শাখে
বিদেশে শ্যাম আমার, পড়ল মনে সেই ডাকে
ঠাঁই দে যমুনে বুকে, আমিও ডুবিয়া মরি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #17

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনার,
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি তিয়াসী বাসনায়।।

আমারই মনের তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।।

আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলি-উজল অভিরাম।।
আমারই রচিত কাননে বসিয়া
পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া,
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া,
আপনারি গলে দোলে হায়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #18

- কাজী নজরুল ইসলাম


ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি।
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

পাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরার লাগিয়া আনিল যারা
মরুর তপ্ত বক্ষ নিঙ্গাড়ি শীতল শান্তিধারা,
উচ্চ- নীচের ভেদ ভাঙ্গি দিল সবারে বক্ষ পাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

কেবল মুসলমানের লাগিয়া আসেনি ক ইসলাম
সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে, মুসলিম তারি নাম।
আমির- ফকিরে ভেদ নাই সবে সব ভাই এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।।

নারীরে প্রথম দিয়াছি মুক্তি নর- সম অধিকার
মানুষে গড়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া করিয়াছি একাকার,
আঁধার রাতের বোরখা উতারি এনেছি আশায় ভাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #19

- কাজী নজরুল ইসলাম


গুনে গরিমায় আমাদের নারী আদর্শ দুনিয়ায়।
রূপে লাবন্যে মাধুরী ও শ্রীতে হুরী পরী লাজ পায়।।
নর নহে, নারী ইসলাম পরে প্রথম আনে ঈমান,
আম্মা খাদিজা জগতে সর্ব-প্রথম মুসলমান,
পুরুষের সব গৌরবস্নান এক এই মহিমায়।।
নবী নন্দিনী ফাতেমা মোদের সতী নারীদের রাণী,
যাঁর ত্যাগ সেবা স্নেহ ছিল মরূভুমে কওসর পানি,
যাঁর গুণ-গাথা ঘরে ঘরে প্রতি নর-নারী আজো গায়।।
রহিমার মত মহিমা কাহার, তাঁর সম সতী কেবা,
নারী নয় যেন মূর্তি ধরিয়া এসেছিল পতি সেবা
মোদের খাওয়ালা জগতের আলা বীরত্বে গরিমায়।।
রাজ্য শাসনের রিজিয়ার নাম ইতিহাসে অক্ষয়,
শৌর্যে সাহসে চাঁদ সুলতানা বিশ্বের বিস্ময়।
জেবুন্নেসার তুলনায় কোথায় জ্ঞানের তাপস্যার।।
বারো বছরের বালিকা লায়লা ওহাবীব দলপতি
মোদের সাকিনা জাহানারা যেন ধৈর্য মূর্তিমতী,
সে গৌরবের গোর হয়ে গেছে আঁধারের বোরকায়।।
আঁধার হেরেমে বন্দিনী হলো সহসা আলোর মেয়ে,
সেই দিন হতে ইসলাম গেল গ্লানির কালিতে ছেয়ে
লক্ষ খালিদা আসিবে, যদি এ নারীরা মুক্তি পায়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #20

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে
কে দিয়েছে গালি
তারে কে দিয়েছে গালি
রাগ করে সে সারা গায়ে
মেখেছে তাই কালি।

যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে
আরো মধুর লাগে তাহার হাসিমুখের চেয়ে
কে কালো দেউল করে আলো
অনুরাগের প্রদীপ জ্বালি।

পরেনি সে বসনভূষণ, বাঁধেনি সে কেশ
তারি কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ।

রাগিয়ে তারে কাঁদি যখন দুখে
দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে
আমার রাগী মেয়ে, তাই তারে দিই
জবা ফুলের ডালি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #21

- কাজী নজরুল ইসলাম


বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’,
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!

কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা প’ড়ে শ্বাস ফেলে!
বলে, কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাশ ঠেলে’।
পড়ে না ক’ বই, ব’য়ে গেছে ওটা।
কেহ বলে, বৌ-এ গিলিয়াছে গোটা।
কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে!
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে!

গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা!
প্রতি শনিবারী চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি!’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন, আড়ি চাচা!’
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা!

মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘ মোল্‌-লা’রা ক’ন হাত নেড়ে’,
‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
‘আমপারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!
হিন্দুরা ভাবে,‘ পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা’ত-নেড়ে!’

আনকোরা যত নন্‌ভায়োলেন্ট নন্‌-কো’র দলও নন্‌ খুশী।
‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্‌’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি!
‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে,
‘নয় চর্‌কার গান কেন গা’বে?’
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্‌ফুসি!
স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি!

নর ভাবে, আমি বড় নারী-ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী-বিদ্বেষী!
‘বিলেত ফেরনি?’ প্রবাসী-বন্ধু ক’ন, ‘ এই তব বিদ্যে, ছি!’
ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ-রবি!’-
যুগের না হই, হজুগের কবি
বটি ত রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর ক’ষে কষি হৃদ্‌-পেশী,
দু’কানে চশ্‌মা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ’তেছে নিদ্‌ বেশী!

কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুণ্ডু আমিই কি বুঝি তার কিছু?
হাত উঁচু আর হ’ল না ত ভাই, তাই লিখি ক’রে ঘাড় নীচু!
বন্ধু! তোমরা দিলে না ক’ দাম,
রাজ-সরকার রেখেছেন মান!
যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব’লে অ-মূল্যে নেন! আর কিছু
শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু?

বন্ধু! তুমি ত দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হ’ল শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন-বন্দীরে!
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তা’রে করিনু বিকল,
তবু যদি কথা শোনে সে পাগল! মানিল না ররি-গান্ধীরে।
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে’!

আমি বলি, ওরে কথা শোন্‌ ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস্‌ খোশ্‌-হালে!
প্রায় ‘হাফ’-নেতা হ’য়ে উঠেছিস্‌, এবার এ দাঁও ফস্‌কালে
‘ফুল’-নেতা আর হবিনে যে হায়!
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা! সেই তালে
নিস্‌ তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে।

বোঝে না ক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,
গান শুন সবে ভাবে, ভাবনা কি! দিন যাবে এবে পান খেয়ে!
রবে না ক’ ম্যালেরিয়া মহামারী,
স্বরাজ আসিছে চ’ড়ে জুড়ি-গাড়ী,
চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে।
মাতা কয়, ওরে চুপ্‌ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্‌ চেয়ে!

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন,
বেলা ব’য়ে যায়, খায়নি ক’ বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছে কি? কালি ও চুন
কেন ওঠে না ক’ তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

আমরা ত জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস!
কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস
এল কোটি টাকা, এল না স্বরাজ!
টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ।
মা’র বুক হ’তে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ, খাও হে ঘাস!
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ!

বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #22

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমার কোন কুলে আজ ভিড়লো তরী
এ কোন সোনার গাঁয়?
আমার ভাটির তরী আবার কেন
উজান যেতে চায়?

দুখেরে কান্ডারী করি
আমি ভাসিয়েছিলাম ভাঙ্গা তরী
তুমি ডাক দিলে কি স্বপন পরী
নয়ন ইশারায় গো?

নিভিয়ে দিয়ে ঘরের বাতি
ডেকেছিলে ঝড়ের রাতি
কে এলে মোর সুরের সাথি
গানের কিনারায়?

সোনার দেশের সোনার মেয়ে
ওগো হবে কি মোর তরীর নেয়ে
এবার ভাঙ্গা তরী চল বেয়ে
রাঙা অলকায়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #23

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমার সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভূ উদার
হে প্রভু, শেখাও- নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।
যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ- যুগান্ত নরকেও ঝাঁপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাই নীচত...

ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমা
হৃদয়ের পরিসর
হৃদয়ে আমার সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র পর।

নিন্দা না করি ঈর্ষা করো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুখি
ক্ষুদ্র আত্না যার।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #24

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমার হাতে কালি মুখে কালি
আমার কালিমাখা মুখ দেখে মা
পাড়ার লোকে হাসে খালি।

মোর লেখাপড়া হল না মা
আমি ম দেখিতেই দেখি শ্যামা।
আমি ক লিখিতেই কালী বলে
(মা) নাচি দিয়ে করতালি।

কালো আঁক দেখে মা ধারাপাতের
ধারা নামে আঁখিপাতে।
আমার বর্ণপরিচয় হল না মা
তোর বর্ণ বিনা কালী।

যা লিখিস মা বনের পাতায়
সাগর জলে আকাশ খাতায়
আমি সে লেখা তোর পড়তে পারি
(লোকে) মূর্খ বলে দিক না গালি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #25

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমি গাই তারি গান-
দৃপ্ত-দম্ভে যে যৌবন আজ ধরি' অসি খরশান
হইল বাহির অসম্ভবের অভিযানে দিকে দিকে।
লক্ষ যুগের প্রাচীন মমির পিরামিডে গেল লিখে
তাদের ভাঙার ইতিহাস-লেখা। যাহাদের নিঃশ্বাসে
জীর্ণ পুঁথির শুষ্ক পত্র উড়ে গেল এক পাশে।
যারা ভেঙে চলে অপ-দেবতার মন্দির আস্তানা,
বক-ধার্মিক নীতি-বৃদ্ধের সনাতন তাড়িখানা।
যাহাদের প্রান স্রোতে ভেসে গেল পুরাতন জঞ্জাল,
সন্সকারের জগদল-শিলা, শাস্ত্রের কঙ্কাল।
মিথ্যা মোহের পূজা-মন্ডপে যাহারা অকূতোভয়ে
এল নির্মম-মোহ-মুগদর ভাঙনের গদা ল'য়ে
বিধি-নিষেধের চীনের প্রাচীরে অসীম দুঃসাহসে
দু'-হাতে চালাল হাতুড়ি শাবল। গরস্থানেরে চ'ষে
ছুঁড়ে ফেলে যত শব কঙ্কাল বসালো ফুলের মেলা,
যাহাদের ভিড়ে মুখর আজিকে জীবনের বালি-বেলা।
-গাহি তাহাদেরি গান
বিশ্বের সাথে জীবনের পথে যারা আজি আগুয়ান।

-সেদিন নিশীথ-বেলা
দুস্তর পারাবারে যে যাত্রী একাকী ভাসালো ভেলা,
প্রভাতে সে আর ফিরিল না কূলে। সেই দুরন্ত লাগি'
আঁখি মুছি আর রচি গান আমি আজিও নিশীথে জাগি'।
আজো বিনিদ্র গাহি গান আমি চেয়ে তারি পথ-পানে।
ফিরিল না প্রাতে যে জন সে-রাতে উড়িল আকাশ-যানে
নব জগতের শরসন্ধানী অসীমের পথ-চারী,
যার ভরে জাগে সদা সতর্ক মৃত্যু দুয়ারে দ্বারী!

সাগর গর্ভে, নিঃসীম নভে, দিগদিগন্তে জু'ড়ে
জীবনোদ্বেগে তাড়া ক'রে ফেরে নিতি যারা মৃত্যুরে,
মানিক আহরি' আনে যারা খুঁড়ি' পাতাল যক্ষপুরী;
নাগিনীর বিষ-জ্বালা সয়ে করে ফণা হ'তে মণি চুরি।
হানিয়া বজ্র-পানির বজ্র উদ্ধত শিরে ধরি'
যাহারা চপলা মেঘ-কন্যারে করিয়াছে কিঙ্করী।
পবন যাদের ব্যজনী দুলায় হইয়া আজ্ঞাবাহী,-
এসেছি তাদের জানাতে প্রণাম, তাহাদের গান গাহি।
গুঞ্জরি' ফেরে ক্রন্দন মোর তাদের নিখিল ব্যেপে-
ফাঁসির রজ্জু ক্লান্ত আজিকে যাহাদের টুঁটি চেপে!
যাহাদের কারাবাসে
অতীত রাতের বন্দিনী ঊষা ঘুম টুটি' ঐ হাসে!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #26

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ
এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হজরত।

পয়জা তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে
আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে
সেথা দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত

মা ফাতেমা খেলত এসে আমার ধূলি লয়ে
আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে
হাসান হোসেন হেসে হেসে
নাচত আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইত নদী পেয়ে সে ন্যামত।

আমার বুকে পা ফেলে রে বীর আসহাব যত
রণে যেতেন দেহে আমার আঁকি মধুর ক্ষত
কুল মুসলিম আসত কাবায়
চলতে পায়ে দলত আমায়
আমি চাইতাম খোদার দীদার শাফায়ত জিন্নত।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #27

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমি যার নূপুরের ছন্দ, বেণুকার সুর
কে সেই সুন্দর, কে?
আমি যার বিলাস যমুনা, বিরহ বিধুর
কে সেই সুন্দর, কে?

যাহার গলে আমি বনমালা
আমি যার কথার কুসুমডালা
না দেখা সুদূর
কে সেই সুন্দর, কে?

যার শিখীপাখা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায়?

আমি যার বরষার আনন্দ কেকা
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনীরেখা
যে মম অঙ্গের কাঁকন-কেয়ূর
কে সেই সুন্দর, কে?

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #28

- কাজী নজরুল ইসলাম


"আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।

"সুয্যি মামা জাগার আগে
উঠব আমি জেগে,
'হয়নি সকাল, ঘুমোও এখন',
মা বলবেন রেগে।


বলব আমি- 'আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল, তাই বলে কি
সকাল হবে নাক'?

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে ?
তোমার ছেলে উঠবে মা গো
রাত পোহাবে তবে।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #29

- কাজী নজরুল ইসলাম


আয় বেহেশতে কে যাবি আয়
প্রানের বুলন্দ দরওয়াজায়,
'তাজা-ব-তাজা'র গাহিয়া গান
চির-তরুণের চির-মেলায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

যুবা-যুবতীর সে-দেশে ভিড়,
সেথা যেতে নারে বুঢঢা পীর,
শাস্ত্র-শকুন জ্ঞান-মজুর
যেতে নারে সেই হুরী-পরীর
শরাব সাকীর গুলিস্তাঁয়।
আয় বেহেশ্তে কে যাবি আয়।।

সেথা হর্দম খুশীর মৌজ,
তীর হানে কালো-আঁখির ফৌজ,
পায়ে পায়ে সেখা আরজি পেশ,
দিল চাহে সদা দিল-আফরোজ,
পিরানে পরান বা৬ধা সেথায়,
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

করিল না যারা জীবনে ভুল
দলিল না কাঁটা, ছেঁড়েনি ফুল,
দারোয়ান হয়ে সারা জীবন
আগুলিল বেড়া, ছুঁল না গুল,-
যেতে নারে তারা এ-জলসায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

বুড়ো নীতিবিদ-নুড়ির প্রায়
পেল না ক' এক বিন্দু রস
চিরকাল জলে রহিয়া হায়!-
কাঁটা বিঁধে যার ক্ষত আঙুল
দোলে ফুলমালা তারি গলায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

তিলে তিলে এক্যারা পীষে মারে
অপরের সাথে আপনারে,
ধরণীর ঈদ-উৎসবে
রোজা রেখে প'ড়ে থাকে দ্বারে,
কাফের তাহারা এ ইদগায়!
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

বুলবুল গেয়ে ফেরে বলি'
যাহারা শাসায়ে ফুলবনে
ফুটিতে দিল না ফুলকলি;
ফুটিলে কুসুম পায়ে দলি'
মারিয়াছে, পাছে বাস বিলায়!
হারাম তা'রা এ -মুশায়েরায়!
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

হেথা কোলে নিলে দিলরুবা
শারাবী গজল গাহে যুবা,
প্রিয়ার বে-দাগ কপোলে গো
এঁকে দেয় তিল মনোলোভা,
প্রেমের পাপীর এ-মোজরায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

আসিতে পারে না হেথা বে-দীন
মৃত প্রান-হীন জরা-মলিন।
নৌ-জোয়ানীর এ-মহফিল
খুন ও শরাব হেথা অ-ভিন
হেথা ধনু বাঁধা ফুলমালায়!
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

পেয়ালায় হেথা শহীদি খুন
তলোয়ার-চোঁয়া তাজা তরুণ
আঙ্গুর-হৃদি চূয়ানো গো
গেলাসে শরাব রাঙা অরুণ।
শহীদে প্রেমিকে ভিড় হেথায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

প্রিয়া-মুখে হেথা দেখি গো চাঁদ,
চাঁদে হেরি প্রিয়-মুখের ছাঁদ।
সাধ ক'রে হেথা করি গো পাপ,
সাধ করে বাঁধি বালির বাঁধ,
এ রস-সাগরে বালু-বেলায়!
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #30

- কাজী নজরুল ইসলাম


আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।
আমার নবী মোহাম্মদ, যাঁহার তারিফ জগৎময়।।

আমার কিসের শঙ্কা,
কোরান আমার ডঙ্কা
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়।।

কালেমা আমার তাবিজ, তৌহিদ আমার মুর্শিদ,
ঈমান আমার ধর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ।
'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি
আমার জেহাদ- বাণী?
আখের মোকাম ফেরদৌস খোদার আরশ যেথায় রয়।।

আরব মেসের চীন হিন্দ মুসলিম- জাহান মোর ভাই,
কেহ নয় উচ্চ কেহ নীচ, এখানে সমান সবাই।
এক দেহ এক দিল এক প্রান,
আমীর ফকির এক সমান,
এক তকবীরে উঠি জেগে, আমার হবেই হবে জয়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #31

- কাজী নজরুল ইসলাম


হয়ত তোমার পাব’ দেখা,
যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।।

ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে,
আ’লের পথে বিজন ঘাটে;
হয়ত এসে মুচকি হেসে
ধ’রবে আমার হাতটি একা।।

ঐ নীলের ঐ গহন-পারে ঘোম্‌টা-হারা তোমার চাওয়া,
আনলে খবর গোপন দূতী দিক্‌পারের ঐ দখিনা হাওয়া।।
বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি
আসে- যাবে নয়্‌না চুমি’
সেই সে কথা লিখছে হেতা
দিগ্বলয়ের অরুণ-লেখা।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #32

- কাজী নজরুল ইসলাম


আপনার ঘরে আছে যে শত্রু
তারে আগে করো জয়,
ভাঙো সে দেয়াল, প্রদীপের আলো
যাহা আগুলিয়া রয়।
অনাত্বীয়রে আত্বীয় করো,
তোমার বিরাট প্রাণ
করে না কো যেন কোনোদিন কোনো
মানুষে অসম্মান।
সংসারের মিথ্যা বাঁধন
ছিন্ন হোক আগে,
কবে সে তোমার সকল দেউল
রাঙিবে আলোর রাগে।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #33

- কাজী নজরুল ইসলাম


কোরাস্: বাংলার 'শের', বাংলার শির,
বাংলার বাণী, বাংলার বীর
সহসা ও-পারে অস্তমান।
এপারে দাঁড়ায়ে দেখিল ভারত মহা-ভারতের মহাপ্রয়াণ॥

বাংলার ঋষি বাংলার জ্ঞান বঙ্গবাণীর শ্বেতকমল,
শ্যাম বাংলার বিদ্যা-গঙ্গা অবিদ্যা-নাশী তীর্থ-জল!
মহামহিমার বিরাট পুরুষ শক্তি-ইন্দ্র তেজ-তপন—
রক্ত-উদয় হেরিতে সহসা হেরিনু সে-রবি মেঘ-মগন।

কোরাস্: বাংলার 'শের', বাংলার শির,
বাংলার বাণী, বাংলার বীর
সহসা ও-পারে অস্তমান।
এপারে দাঁড়ায়ে দেখিল ভারত মহা-ভারতের মহাপ্রয়াণ॥

মদ-গর্বীর গর্ব-খর্ব বল-দর্পীর দর্প-নাশ
শ্বেত-ভিতুদের শ্যাম বরাভয় রক্তাসুরের কৃষ্ণ ত্রাস।
নব ভারতের নব আশা-রবি প্রাচী'র উদার অভ্যুদয়
হেরিতে হেরিতে হেরিনু সহসা বিদায়-গোধূলি গগনময়।

কোরাস্: বাংলার 'শের', বাংলার শির,
বাংলার বাণী, বাংলার বীর
সহসা ও-পারে অস্তমান।
এপারে দাঁড়ায়ে দেখিল ভারত মহা-ভারতের মহাপ্রয়াণ॥

পড়িল ধসিয়া গৌরীশঙ্কর হিমালয়-শির স্বর্গচূড়,
গিরি কাঞ্চন-জঙ্ঘা গিরিল—বাংলার যবে দিন-দুপুর।
শিশুক-হাঙর শোষিছে রক্ত, মৃত্যু শোষিছে সাগর-প্রাণ—
পরাধীনা মা'র স্বাধীন সুতের মেদ-ধূমে কালো দেশ-শ্মশান।

কোরাস্: বাংলার 'শের', বাংলার শির,
বাংলার বাণী, বাংলার বীর
সহসা ও-পারে অস্তমান।
এপারে দাঁড়ায়ে দেখিল ভারত মহা-ভারতের মহাপ্রয়াণ॥

অরাজক মারি মড়া-কান্নায় দেশ-জননীর বদ্ধ শ্বাস,
হে দেব-আত্মা! স্বর্গ হইতে দাও কল্যাণ, দাও আভাস,
কেমন করিয়া মৃত্যু মথিয়া মৃত্যুঞ্জয় হয় মানব;
শব হয়ে গেছ, শিব হয়ে এস দেবকী-কারার নীল কেশব।

কোরাস্: বাংলার 'শের', বাংলার শির,
বাংলার বাণী, বাংলার বীর
সহসা ও-পারে অস্তমান।
এপারে দাঁড়ায়ে দেখিল ভারত মহা-ভারতের মহাপ্রয়াণ॥

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #34

- কাজী নজরুল ইসলাম


আসিবে তুমি জানি প্রিয়
আনন্দে বনে বসন্ত এলো
ভুবন হল সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর।

বনানতে পবন অশান্ত হল তাই
কোকিল কুহরে, ঝরে গিরি নির্ঝরিণী ঝর ঝর।

ফুল্ল যামিনী আজি ফুল সুবাসে
চন্দ্র অতন্দ্র সুনীল আকাশে
আনন্দিত দীপান্নিত অম্বর।

অধীর সমীরে দিগঞ্চল দোলে
মালতী বিতানে পাখি পিউ পিউ বোলে
অঙ্গে অপরূপ ছন্দ আনন্দ-লহর তোলে
দিকে দিকে শুনি আজ আসিবে রাজাধিরাজ
প্রিয়তম সুন্দর।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #35

- কাজী নজরুল ইসলাম


তখনো অস্ত যায়নি সূর্য, সহসা হইল শুরু
অম্বরে ঘন ডম্বরু-ধ্বনি গুরু-গুরু-গুরু!
আকাশে আকাশে বাজিছে এ কোন ইন্দ্রের আগমনী?
শুনি, অন্দুব-কম্বু- নিনাদে ঘন বৃঙ্ঘিত- ধ্বনি।
বাজে চিক্কুর- হ্রেষা- হর্ষণ মেঘ- মন্দুরা- মাঝে,
সাজিল প্রথম আষাঢ় আজিকে প্রলয়ংকর সাজে।

ঘনায় অশ্রু-বাষ্প- কুহেলি ঈশান- দিগঙ্গনে,
স্তব্ধ- বেদনা দিগ-বালিকারা কী যে কাঁদুনী শোনে!
কাঁদিছে ধরার তরু-লতা-পাতা, কাঁদিছে পশু-পাখী,
ধরার ইন্দ্র স্বর্গে চলেছে ধূলির মহিমা মাখি'।
বাজে আনন্দ- মৃদং গগনে, তড়িৎ-কুমারী নাচে,
মর্ত্য- ইন্দ্র বসিবে গো আজ স্বর্গ- ইন্দ্র কাছে।
সপ্ত- আকাশ- সপ্তস্বরা হানে ঘন করতালি,
কাঁদিছে ধরায় তাহারি প্রতিধ্বনি-খালি, সব খালি!

হায় অসহায় সর্বংসহা মৌনা ধরণী মাতা,
শুধু দেব- পূজা তরে কি মা তর পুষ্প হরিৎমাতা?
তোর বুকে কি মা চির-অতৃপ্ত রবে সন্তান-ক্ষুধা?
তোমার মাটির পাত্রে কি গো মা ধরে না অমৃত-সুধা?
জীবন- সিন্ধু মথিয়া যে-কেহ আনিবে অমৃত-বারি
অমৃত-অধিপ দেবতার রোষ পড়িবে কি শিরে খাঁটি
তারে স্বর্গের আছে প্রয়োজন, যারে ভালোবাসে মাটি।

কাঁটার মৃণালে উঠেছিল ফুটে যে চিত্ত- শতদিল
শোভেছিল যাহে বাণী কমলার রক্ত-চরণ-তল,
সম্ভ্রম-নত পূজারী মৃত্যু ছিঁড়িল সে শতদলে-
শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য অর্পিবে বলি' নারায়ণ-পদতলে!
জানি জানি মোরা, শংখ-চক্র-গদা যাঁর হাতে শোভে-
পায়ের পদন হাতে উঠে তাঁর অমর হইয়া র'বে।
কত শান্ত্বনা- আশা-মরিচিকা কত বিশ্বাস-দিশা
শোক- সাহারায় দেখা দেয় আসি, মেটে না প্রানের তৃষা!

দুলিছে বাসুকি মণীহারা ফণী, দুলে সাথে বসুমতী,
তাহার ফনার দিন-মণি আজ কোন গ্রহে দেবে জ্যোতি!
জাগিয়া প্রভাতে হেরিনু আজিকে জগতে সুপ্রভাত,
শয়তানও আজ দেবতার নামে করিছে নান্দীপাঠ!
হে মহাপুরুষ, মহাবিদ্রোহী, হে ঋষি, সোহম-স্বামী!
তব ইঙ্গিতে দেখেছি সহসা সৃষ্টি গিয়াছে থামি',
থমকি গিয়াছে গতির বিশ্ব চন্দ্র- সূর্য- তারা,
নিয়ম ভুলেছে কঠোর নিয়তি, দৈব দিয়াছে সাড়া!

যখনি স্রষ্ঠা করিয়াছে ভুল, ক'রেছ সংস্কার,
তোমারি অগ্রে স্রষ্টা তোমারে ক'রেছে নমস্কার!
ভৃগুর মতন যখনি দেখেছ অচেতন নারায়ণ,
পদাঘাতে তাঁর এনেছ চেতনা, জেগেছে জগজ্জন!
ভারত-ভাগ্য-বিধাতা বক্ষে তব পদ-চিন ধরি'
হাঁকিছেন, 'আমি এমন করিয়া সত্য স্বীকার করি!
জাগাতে সত্য এত ব্যাকুলতা এত অধিকার যার,
তাহার চেতন- সত্যে আমার নিযুত নমস্কার!'

আজ শুধু জাগে তব অপরূপ সৃষ্টি- কাহিনী মনে,
তুমি দেখা দিলে অমিয়-কন্ঠ বাণীর কমল-বনে!
কখন তোমার বীণা ছেয়ে গেল সোনার পদন-দলে,
হেরিনু সহসা ত্যাগের তপন তোমার ললাট-তলে!
লক্ষী দানিল সোনার পাপড়ি, বীণা দিল করে বাণী,
শিব মাখালেন ত্যাগের বুভূতি কন্ঠে গরল দানি',
বিষ্ণু দিলেন ভাঙ্গনের গদা, যশোদা-দুলাল বাঁশি,
দিলেন অমিত তেজ ভাস্কর, মৃগাঙ্ক দিল হাসি।

চির গৈরিক দিয়া আশিসিল ভারত-জননী কাঁদি',
প্রতাপ শিবাজী দানিল মন্ত্র, দিল উষ্ণীষ বাঁধি'।
বুদ্ধ দিলেন ভিক্ষাভান্ড, নিমাই দিলেন ঝুলি,
দেবতারা দিলেন মন্দার-মালা, মানব মাখালো ধূলি।
নিখিল-চিত্ত-রঞ্জন তুমি উদিলে নিখিল ছানি'-
মহাবীর, কবি, বিদ্রোহী, ত্যাগী, প্রেমিক, কর্মী, জ্ঞানী!
হিমালয় হ'তে বিপুল বিরাট উদার আকাশ হ'তে,
বাধা-কুঞ্জর তৃণ-সম ভেসে গেল তব প্রান-স্রোতে!

ছন্দ গানের অতীত হে ঋষি, জীবনে পারিনি তাই
বন্দিতে তোমা',আজ আনিয়াছি চিত্ত-চিতার ছাই!
বিভূতি-তিলক! কৈলাস হ'তে ফিরেছ গরল পি'ইয়া,
এনেছি অর্ঘ্য শ্মশানের কবি ভস্ম বিভূতি নিয়া!
নাও অঞ্জলি, অঞ্জলি নাও, আজ আনিয়াছি গীতি
সারা জীবনের না-কওয়া কথার ক্রন্দন-নীরে তিতি'!
এত ভালো মোরে বেসেছিলে তুমি, দাওনি ক' অবসর
তোমারেও ভালোবাসিবার, আজ তাই কাঁদে অন্তর!

আজিকে নিখিল-বেদনার কাছে মোর ব্যথা যতটুক,
ভাবিয়া ভাবিয়া স্বান্ত্বনা খুঁজি, তবু হা হা করে বুক~
আজ ভারতের ইন্দ্র-পতন,বিশ্বের দুর্দিন,
পাষান বাংলা প'ড়ে এককোনে স্তব্ধ অশ্রুহীন!
তারি মাঝি হিয়া থাকিয়া গুমরি' গুমরি' ওঠে,
বক্ষের বাণী চক্ষের জলে ধুয়ে যায়, নাহি ফোটে!
দীনের বন্ধু, দেশের বন্ধু, মানব-বন্ধু তুমি,
চেয়ে দেখ আজ লুটায় বিশ্ব তোমার চরণ চুমি'।
গগনে তেমনি ঘনায়েছে মেঘ, তেমনি ঝরিছে বারি,
বাদলে ভিজিয়া শত স্মৃতি তব হ'ইয়ে আসে ঘন ভারি।


পয়গম্বর ও অবতার- যুগে জন্মিনি মোরা কেহ,
দেখিনি ক' মোরা তাঁদের, দেখিনি দেবের জ্যোতির্দেহ,
কিন্তু যখনি বসিতে পেয়েছি তোমার চরণ-তলে
না জানিতে কিছু না বুঝিতে কিছু নয়ন ভ'রেছে জলে!
সারা প্রান যেন অঞ্জলি হ'য়ে ও-পায়ে প'ড়েছে লুটি',
সকল গর্ব উঠেছে মধুর প্রণাম হইয়া ফুটি'!
বুদ্ধের ত্যাগ শুনেছি মহান, দেখিনি ক' চোখে তাহে,
নাহি আফসোস, দেখেছি আমরা ত্যাগের শাহানশাহে;
নিমাই লইল সন্ন্যাস প্রেমে, দিইনি ক' তারে ভেট,
দেখিয়াছি মোরা 'রাজা-সন্ন্যাসী', প্রেমের জগৎ- শেঠ!

শুনি, পরার্থে প্রান দিয়া দিল অস্থি বনের ঋষি;
হিমালয় জানে, দেখেছি দধীচি গৃহে ব'সে দিবানিশি!
হে নবযুগের হরিশ্চন্দ্র! সাড়া দাও, সাড়া দাও!
কাঁদিছে শ্মশানে সুত-কোলে সতী, রাজর্ষি ফিরে চাও!
রাজকুলমান পুত্র-পত্নী সকল বসর্জিয়া
চন্ডাল-বেশে ভারত-শ্মশান ছিলে একা আগুলিয়া,
এস সন্ন্যাসী, এস সম্রাট, আজি সে শ্মশান-মাঝে,
ঐ শোনো তব পুন্য জীবন- শিশুর কাঁদন বাজে!

দাতাকর্ণের সম নিজ সুতে কারাগার-যূপে ফেলে
ত্যাগের করাতে কাটিয়াছ বীর বারে বারে অবহেলে।
ইবরাহিমের মত বাচ্চার গলে খঞ্জর দিয়া
কোরবানী দিলে সত্যের নামে, হে মানব নবী-হিয়া।
ফেরেশতা সব করিছে সালাম, দেবতা নোয়ায় মাথা,
ভগবান-বুক মানবের তরে শ্রেষ্ঠ আসন পাতা!

প্রজা-রঞ্জন রাম-রাজা দিল সীতারে বিসর্জন,
তাঁরও হয়েছিল যজ্ঞে স্বর্ণ-জানকীর প্রয়োজন,
তব ভান্ডার- লক্ষীরে রাজা নিজ হাতে দিলে তুলি'
ক্ষুধা-তৃষাতুর মানবের মুখে, নিজে দিলে পথ-ধূলি,
হেম-লক্ষীর তোমারও জীবন-যাগে ছিল প্রয়োজন,
পুড়িলে যজ্ঞে, তবু নিলে না ক' দিলে যা বিসর্জন!
তপোবলে তুমি অর্জিলে তেজ বিশ্বামিত্র-সম,
সারা বিশ্বের ব্রাম্মন তাই বন্দিছে নমো নমো!

হে যুগ- ভীষ্ম! নিন্দার শরশয্যায় তুমি শুয়ে
বিশ্বের তরে অমৃত-মন্ত্র বীর-বাণী গেলে থুয়ে!
তোমার জীবনে বলে গেলে- ওগো কল্কি আসার আগে
অকল্যানের কুরুক্ষেত্রে আজো মাঝে মাঝে জাগে
চির-সত্যের পাঞ্চজন্য, কৃষ্ণের মহাগীতা,
যুগে যুগে কুরু-মেদ-ধূমে জ্বলে অত্যাচারের চিতা!
তুমি নব ব্যাস, গেলে নবযুগ-জীবন-ভারত চরি'
তুমিই দেখালে-ইন্দ্রেরই তরে পারিজাত-মালা শচী!
আসিলে সহসা- অত্যাচারীর প্রাসাদ-স্তম্ভ টুটি'
নব-নৃসিংহ-অবতার তুমি, পড়িল বক্ষে লুটি'
আর্ত-মানব-হৃদি-প্রহ্লাদ, পাগল মুক্তি-প্রেমে!
তুমি এসেছিলে জীবন গঙ্গা তৃষাতুর তরে নেমে!
দেবতারা তাই স্তম্ভিত হের' দাঁড়ায়ে গগন তলে
নিমাই তোমারে ধরিয়াছে বুকে, বুদ্ধ নিয়াছে কোলে!

তোমারে দেখিয়া কাহারো হৃদয়ে জাগেনি ক' সন্দেহ
হিন্দু কিম্বা মুসলিম তুমি অথবা অন্য কেহ।
তুমি আর্তের, তুমি বেদনার, ছিলে সকলের তুমি,
সবারে যেমন আল দেয় রবি, ফুল দেয় সবে ভূমি!
হিন্দুর ছিলে আকবর তুমি মুসলিমের আরংজিব,
যেখানে দেখেছ জীবের বেদনা, সেখানে দেখেছ শিব!
নিন্দা-গ্লানির পঙ্ক মাখিয়া, পাগল, মিলন-হেতু
হিন্দু- মুসলমানের পরানে তুমিই বাঁধিলে-সেতু!
জানিনা আজি কে অর্ঘ্য দেবে হিন্দু-মুসলমান,
ঈর্ষা-পঙ্কে পঙ্কজ হ'য়ে ফুটুক এদের প্রান!
হে অরিন্দম, মৃত্যুর তীরে ক'রেছ শত্রু জয়,
প্রেমিক! তোমার মৃত্যু-শ্মশান আজিকে মিত্রময়!
তাই দেখি, যারা জীবনে তোমায় দিল কন্টক-হুল,
আজ তাহারাই এনেছে অর্ঘ্য নয়ন-পাতার ফুল!
কি যে ছিলে তুমি জানি না ক' কেহ, দেবতা কি আওলিয়া,
শুধু এই জানি, হেরি আর কারে ভরেনি এমন হিয়া।

আজি দিকে দিকে বিপ্লব-অহিদল খুঁজে ফেরে ডেরা,
তুমি ছিলে এই নাগ-শিশুদের ফণী-মনসার বেড়া!
তুমিই রাজার ঐরাবতের পদতল হ'তে তুলে
বিষ্ণু-শ্রীকর-অরবিন্দরে আবার শ্রীকরে থুলে!
তুমি দেখিছিলে ফাঁসির গোপীতে বাঁশির গোপীমোহন,
রক্ত-যমুনা-কূলে রচে' গেলে প্রেমের বৃন্দাবন!
তোমার ভগ্ন চাকায় জরায়ে চালায়েছে এরা রথ,
আপন মাথার মানিক জ্বালায়ে দেখায়েছে রাতে পথ,
আজ পথহারা আশ্রয়হীন সাপুড়ে মারণ- মন্ত্র সুরে!

যেদিকে তাকাই কূল নাহি পাই, অকূল হতাশ্বাস,
কোন শাপে ধরা স্বরাজ-রথের চক্র করিল গ্রাস?
যধিষ্ঠিরের সম্মুখে রণে পড়িল সব্যসাচী,
ঐ হের' দূরে কৌরব-সেনা উল্লাসে ওঠে নাচি'।
হিমালয় চিরে আগ্নেয়-বাণ চীৎকার করি' ছুটে,
শত ক্রন্দন-গঙ্গা যেন গো পড়িছে পিছনে টুটে!
স্তব্ধ- বেদনা গিরিরাজ ভয়ে জলদে লুকায় কায়-
নিখিল অশ্রু সাগর বুঝি বা তাহারে ডুবাতে চায়!
টুটিয়াছে আজ গর্ব তাহার, লাজে নত উঁচু শির,
ছাপি' হিমাদ্রি উঠিছে প্রণাম সমগ্র পৃথিবীর!
ধূর্জটি-জটা-বাহিনী গঙ্গা কা৬দিয়া কাঁদিয়া চলে,
তারি নিচে চিতা- যেন গো শিবের ললাটে অগ্নি জ্বলে!

মৃত্যু আজিকে হইল অমর পরশি' তোমার প্রান,
কালো মুখ তার হ'ল আলোময়, শ্মশানে উঠিছে গান।
অগুরু- পুষ্প-চন্দন পুড়ে হল সুগন্ধতর,
হ'ল শুচিতর অগ্নি আজিকে, শব হ'ল সুন্দর!
ধন্য হইল ভাগীরথী-ধারা তব চিতা-ছাই মাখি',
সমিধ হইল পবিত্র আজি কোলে তব দেহ রাখি'!
অসুর নাশিনী জগন্মাতার অকাল উদ্বোধনে
আঁখি উপাড়িতে গেছিলেম রাম, আজিকে পড়িছে মনে;
রাজর্ষি! আজি জীবন উপাড়ি দিলে অঞ্জলি তুমি,
দনুজ- দলনী জাগে কিনা-আছে চাহিয়া ভারত-ভূমি!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #36

- কাজী নজরুল ইসলাম


শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আসিলে ঈদ!
ভুখারীর দ্বারে সওগাত ব'ইয়ে রিজওয়ানের,
কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল- বাগের,
সাকীরে "জা'মের দিলে তাগিদ!

খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক
বধূ জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ!
কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল,
সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার,
মনে পড়ে শুধু সোঁদা-সোঁদা বাস এলো খোঁপার,
আকুল কবরী উলঝলুল!

ওগো কাল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন
মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন!
আশাবরী- সুরে ঝুরে সানাই।
আতর-সুবাসে কাতর হ'ল গো পাথর-দিল,
দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল,
কবুলিয়তের নাই বালাই।।

আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি,
দোযখে বেহেশতে সুল ও আগুনে ঢলাঢলি,
শিরী ফরহাদে জড়াহড়ি!
সাপিনীর মত বেঁধেছে লায়লী কায়েসে গো,
বাহুর বন্ধে চোখ বুঁজে বঁধু আয়েসে গো,
গালে গালে চুমু গরাগড়ি।।

দাউ- দাউ জ্বলে আজি স্ফূর্তির জাহান্নাম,
শয়তান আজ বেহেশতে বিলায় শরাব-জাম,
দুশম্ন দস্ত এক-জামাত!
আজি আরফাত-ময়দান পাতা গাঁয়ে- গাঁয়ে,
কোলাকুলি করে বাদশা ফকীরে ভায়ে-ভায়ে,
কা'বা ধ'রে নাচে 'লাত-মানাত'।।

আজি ইসলামী ডঙ্কা গরজে ভরি' জাহান,
নাই বড় ছোট-সকল মানুষ এক সমান,
রাজা প্রজা নয় কারো কেহ।
কে আমীর তুমি নওয়াব বাদশা বালাখানায়?
সকল কালের কলঙ্ক তুমি; জাগালে হায়
ইসলামে তুমি সন্দেহ।।

ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,
সুখ-দুখ সম-ভাগ করে নেব সকলে ভাই,
নাই অধিকার সঞ্চয়ের!
কারো আঁখি-জলে কারো ঝাড়ে কি রে জ্বলিবে দীপ?
দু'জনার হবে বুলন্দ-নসীব, লাখে লাঝে হবে বদ-নসীব?
এ নহে বিধান ইসলামের।।

ঈদ-অল-ফিতর আনিয়াছে তাই নববিধান,
ওগো সঞ্চয়ী, উদ্বৃত্ত যা করিবে দান,
ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার!
ভোগের পেয়ালা উপচায়ে পড়ে তব হাতে,
তৃষ্ণাতুরের হিসসা আছে ও-পেয়ালাতে,
দিয়া ভোগ কর, বীর দেদার।।

বুক খালি ক'রে আপনারে আজ দাও জাকাত,
করো না হিসাবী, আজি হিসাবের অঙ্কপাত!
একদিন করো ভুল হিসাব।
দিলে দিলে আজ খুন্সুড়ি করে দিললগী,
আজিকে ছায়েলা-লায়েলা-চুমায় লাল যোগী!
জামশেদ বেঁচে চায় শরাব।।

পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু, ঈদ মোবারক! আসসালাম!
ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী ফুল-কালাম!
বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ!
আমার দানের অনুরাগে-রাঙা 'ঈদগা'রে!
সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে-
দেহ নয়, দিল হবে শহীদ।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #37

- কাজী নজরুল ইসলাম


কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেশ দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে প’ড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি’ উঠো না, শাস্ত্রবিদের ক’রো না ক’ বীর, ভয়-
তাহারা খোদার খোদ্‌ ‘প্রাইভেট সেক্রেটারী’ ত নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি!
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কুলে-
রত্নাকরের খবর তা ব’লে পুছো না ওদের ভুলে’।
উহারা রত্ন-বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তা’রা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #38

- কাজী নজরুল ইসলাম


তিমির রাত্রি - 'এশা'র আযান শুনি দূর মসজিদে।
প্রিয়-হারা কার কান্নার মতো এ-বুকে আসিয়ে বিঁধে!

আমির-উল-মুমেনিন,
তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন।
তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি,
বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কি-রে গগনে মরুর শশী?
ও-আযান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান?
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্ববান?

আবার লুটায়ে পড়ি।
'সেদিন গিয়াছে' - শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি।
উমর! ফারুক! আখেরি নবীর ওগো দক্ষিণ-বাহু!
আহ্বান নয় - রূপ ধরে এস - গ্রাসে অন্ধতা-রাহু!
ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন!
সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ।
শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের
দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের
ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি
আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি!

ইসলাম - সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি?
পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।
আজ বুঝি - কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর-
'মোরপরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর।'
* * * * * * * * * *
অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখতে বসি
খেজুরপাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি
সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক' নুয়ে,
ঊর্ধ্বের যারা - পড়ছে তাহারা, তুমি ছিলে খাড়া ভূঁয়ে।
শত প্রলোভন বিলাস বাসনা ঐশ্বর্যের মদ
করেছে সালাম দূর হতে সব ছুঁইতে পারেনি পদ।
সবারে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া তুমি ছিলে সব নিচে,
বুকে করে সবে বেড়া করি পার, আপনি রহিলে পিছে।

হেরি পশ্চাতে চাহি-
তুমি চলিয়াছ রৌদ্রদগ্ধ দূর মরুপথ বাহি
জেরুজালেমের কিল্লা যথায় আছে অবরোধ করি
বীর মুসলিম সেনাদল তব বহু দিন মাস ধরি।
দুর্গের দ্বার খুলিবে তাহারা বলেছে শত্রু শেষে-
উমর যদি গো সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে এসে!
হায় রে, আধেক ধরার মালিক আমির-উল-মুমেনিন
শুনে সে খবর একাকী উষ্ট্রে চলেছে বিরামহীন
সাহারা পারায়ে! ঝুলিতে দু খানা শুকনো 'খবুজ' রুটি
একটি মশকে একটুকু পানি খোর্মা দু তিন মুঠি।
প্রহরীবিহীন সম্রাট চলে একা পথে উটে চড়ি
চলেছে একটি মাত্র ভৃত্য উষ্ট্রের রশি ধরি!
মরুর সূর্য ঊর্ধ্ব আকাশে আগুন বৃষ্টি করে,
সে আগুন-তাতে খই সম ফোটে বালুকা মরুর পরে।
কিছুদূর যেতে উঠ হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, 'ভাই
পেরেশান বড় হয়েছ চলিয়া! এইবার আমি যাই
উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে,
তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।'

...ভৃত্য দস্ত চুমি
কাঁদিয়া কহিল, 'উমর! কেমনে এ আদেশ কর তুমি?
উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি
আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি?'

খলিফা হাসিয়া বলে,
'তুমি জিতে গিয়ে বড় হতে চাও, ভাই রে, এমনি ছলে।
রোজ-কিয়ামতে আল্লাহ যে দিন কহিবে, 'উমর! ওরে
করেনি খলিফা, মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে।'
কি দিব জওয়াব, কি করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই।
আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু, মোর অধিকার নাই।
আরাম সুখের, -মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা।
ইসলাম বলে, সকলে সমান, কে বড় ক্ষুদ্র কেবা।

ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী।
জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্প বৃষ্টি হইল কিনা,
কি গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দী' বিশ্ববীণা।
জানি না, সেদিন ফেরেশতা তব করেছে কি না স্তব-
অনাগত কাল গেয়েছিল শুধু, 'জয় জয় হে মানব।'
* * * * * * * * * *
তুমি নির্ভীক, এক খোদা ছাড়া করনি ক' কারে ভয়,
সত্যব্রত তোমায় তাইতে সবে উদ্ধত কয়।
মানুষ হইয়া মানুষের পূজা মানুষেরি অপমান,
তাই মহাবীর খালদেরে তুমি পাঠাইলে ফরমান,
সিপাহ-সালারে ইঙ্গিতে তব করিলে মামুলি সেনা,
বিশ্ব-বিজয়ী বীরেরে শাসিতে এতটুকু টলিলে না।
* * * * * * * * * *
মানব-প্রেমিক! আজিকে তোমারে স্মরি,
মনে পড়ে তব মহত্ত্ব-কথা - সেদিন সে বিভাবরী
নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে
মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুদাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে

কাঁদিতেছে আর দুখিনী মাতা ছেলেরে ভুলাতে হায়,
উনানে শূন্য হাঁড়ি চড়াইয়া কাঁদিয়া অকুলে চায়।
শুনিয়া সকল - কাঁদিতে কাঁদিতে ছুটে গেলে মদিনাতে
বায়তুল-মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে,
বলিলে, 'এসব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের 'পরে,
আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে'।
কত লোক আসি আপনি চাহিল বহিতে তোমার বোঝা,
বলিলে, 'বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা!
রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বল আমার পাপের ভার?
মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজি তার
প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি' - চলিলে নিশীথ রাতে
পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে!

এত যে কোমল প্রাণ,
করুণার বশে তবু গো ন্যায়ের করনি ক' অপমান!
মদ্যপানের অপরাধে প্রিয় পুত্রেরে নিজ করে
মেরেছ দোররা, মরেছে পুত্রে তোমার চোখের পরে!
ক্ষমা চাহিয়াছে পুত্র, বলেছ পাষাণে বক্ষ বাঁধি-
'অপরাধ করে তোরি মতো স্বরে কাঁদিয়াছে অপরাধী।'

আবু শাহমার গোরে
কাঁদিতে যাইয়া ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে।

খাস দরবার ভরিয়া গিয়াছে হাজার দেশের লোকে,
'কোথায় খলিফা' কেবলি প্রশ্ন ভাসে উৎসুক চোখে,
একটি মাত্র পিরান কাচিয়া শুকায়নি তাহা বলে,
রৌদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা-তলে।
হে খলিফাতুল-মুসলেমিন! হে চীরধারী সম্রাট!
অপমান তব করিব না আজ করিয়া নান্দী পাঠ,
মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই
তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই।

(সংক্ষেপিত)

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #39

- কাজী নজরুল ইসলাম


উম্মত আমি গুনাহগার
(সুন্ধু ভৈরবী- কার্ফা)

উম্মত আমি গুনাহগার
তবু ভয় নাহি রে আমার
আহমদ আমার নবী
যিনি খোদ হাবিব খোদার।।

যাঁহার উম্মত হতে চাহে সকল নবী,
তাহারি দামন ধরি' পুলসিরাত হব পার।।

কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে
যবে নাফসি ইয়া নাফসি রবে,
ইয়া উম্মতী বলে একা কাঁদিবেন আমার মোখতার।।

কাঁদিবেন সাথে মা ফাতিমা ধরিয়া আরশ আল্লার
হোসায়েনের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।।

দোযখ হয়েছে হারাম যে দিন পড়েছি কালেমা,
যেদিন হয়েছি আমি কোরানের নিশান- বর্দার।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #40

- কাজী নজরুল ইসলাম


কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে
এই তো নদীর খেলা (রে ভাই)
এই তো বিধির খেলা।
সকাল বেলার আমির রে ভাই
ফকীর সন্ধ্যাবেলা।

সেই নদীর ধারে কোন ভরসায়
(ওরে বেভুল) বাঁধলি বাসা সুখের আশায়
যখন ধরল ভাঙন পেলিনে তুই
পারে যাবার ভেলা।

এই দেহ ভেঙ্গে হয় রে মাটি
মাটিতে হয় দেহ
যে কুমোর গড়ে সেই দেহ
তার খোঁজ নিল না কেহ।

রাতে রাজা সাজে নট-মহলে
দিনে ভিক্ষা মেগে পথে চলে
শেষে শ্মশান-ঘাটে গিয়ে দেখে
সবই মাটির ঢেলা
এই তো বিধির খেলা রে ভাই
ভব-নদীর খেলা।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #41

- কাজী নজরুল ইসলাম


নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার,
তোমায় আমি ক'রব সৃজন- এ মোর অহংকার!
এমনি চোখের দৃষ্টি দিয়া
তোমায় যারা দেখলো প্রিয়া,
তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে
তুমি নিখিল-রূপের রাণী- মানস-আসনে!

সবাই যখন তোমায় ঘিরে ক'রবে কলরব,
আমি দূরে ধেয়ান-লোকে র'চব তোমার স্তব।
র'চব সুরধুনী-তীরে
আমার সুরের উর্বশীরে,
নিখিল কন্ঠে দুলবে তুমি গানের কন্ঠ-হার-
কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার!

যেদিন আমি থাকবনা ক' থাকবে আমার গান,
ব'লবে সবাই, 'কে সে কবির কাঁদিয়েছিল প্রাণ?'
আকাশ ভরা হাজার তারা
রইবে চেয়ে তন্দ্রাহারা,
সখার সাথে জাগবে রাতে, চাইবে আকাশে
আমার গানে প'ড়বে মনে আমায় আভাসে!

বুকের তলা ক'রবে ব্যথা, ব'লবে কাঁদিয়া,
'বন্ধু! সে কে তোমার গানের মানসী প্রিয়া?'
হাসবে সবাই, গাইবে গীতি,
তুমি নয়ন-জলে তিতি'
নতুন ক'রে আমার গানে আমার কবিতায়
গহীন নিরালাতে ব'সে খুঁজবে আপনায়!
রাখতে যেদিন নারবে ধরা তোমায় ধরিয়া
ওরা সবাই ভুলবে তোমায় দু'দিন স্মরিয়া,
আমার গানের অশ্রুজলে,
আমার বাণীর পদ্মদলে
দুলবে তুমি চিরন্তনী চির-নবীনা!
রইবে শুধু বাণী, সে-দিন রইবে না বীণা!

নাই বা পেলাম কন্ঠে আমার তোমার কন্ঠহার,
তোমায় আমি ক'রব সৃজন এ মোর অহংকার!
এইত আমার চোখের জলে,
আমার গানের সুরের ছলে,
কাব্যে আমার, আমার ভাষায়, আমার বেদনায়,
নিত্যকালের প্রিয় আমায় ডাকছ ইশারায়!

চাই না তোমায় স্বর্গে নিতে, চাই এ ধুলাতে
তোমার পায়ে স্বর্গ এনে ভুবন ভুলাতে!
ঊর্ধ্বে তোমার- তুমি দেবী,
চাই না দেবীর দয়া, যাচি প্রিয়ার আঁখিজল,
একটু দুখে অভিমানে নয়ন টলমল!

যেমন ক'রে খেলতে তুমি কিশোর বয়শে-
মাটির মেয়ের দিতে বিয়ে মনের হরষে।
বালু দিয়ে গড়তে গেহ
জাগত বুকে মাটির স্নেহ,
ছিল না তো স্বর্গ তখন সূর্য তারা চাঁদ,
তেমনি ক'রে খেলবে আবার পাতবে মায়া-ফাঁদ!

মাটির প্রদীপ জ্বালবে তুমি মাটির কুটীরে,
খুশীর রঙে ক'রবে সোনা ধূলি-মুঠিরে।
আধখানে চাঁদ আকাশ 'পরে
উঠবে যবে গরব-ভরে
তুমি বাকী-আধখানা চাঁদ হাসবে ধরাতে,
তড়িৎ প'ড়বে তোমার খোঁপায় জড়াতে!


তুমি আমার বকুল যূথী- মাটির তারা-ফুল,
ঈদের প্রথম চাঁদ গো তোমার কানের পার্সি-দুল।
কুসুমী রাঙা শাড়িখানি
চৈতী-সাঁঝে প'রবে রাণী,
আকাশ-গাঙে জাগবে জোয়ার রঙের রাঙা বান,
তোরণ-দ্বারে নাজবে করুণ বারোয়াঁ মূলতান।

আমার রচা গানে তোমায় সেই বেলা-শেষে
এমনি সুরে চাইবে কেহ পরদেশী এসে!
রঙীন সাঁঝে ঐ আঙিনায়
চাইবে যারা, তাদের চাওয়ায়
আমার চাওয়া রইবে গোপন!- এ মোর অভিমান,
যাচবে যারা তোমায়-রচি তাদের তরে গান!

নাই বা দিলে ধরা আমার ধরার আঙিনায়,
তোমায় জিনে গেলাম সুরের স্বয়ম্বর-সভায়!
তোমার রূপে আমার বুবন
আলোয় আলোয় হ'ল মগন!
কাজ কি জেনে-কাহার আশায় গাঁথছ ফুল-হার,
আমি তোমার গাঁথছি মালা এ মোর অহংকার!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #42

- কাজী নজরুল ইসলাম


উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।

উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।

ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে,
ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে।
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী,
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।

মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী।
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি।
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।

উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার,
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার!
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।

হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়,
কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়।
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি;
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি।

তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে,
নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে।
সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়,
আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়।

যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই,
উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই।
ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই,
দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই।

মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের,
শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে-- শখ ওদের!
আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ,
নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ।

পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো,
এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো।
সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে,
তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে।

দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল
তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল।
ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়,
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!

তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা,
এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা।
ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ,
পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ।

বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে,
হবে দুলদুল - আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে।
আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন,
তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন।

নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান
সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান!
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে - ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - 'এক আল্লাহ জিন্দাবাদ'।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #43

- কাজী নজরুল ইসলাম


এল শোকের সেই মোহররম কারবালার স্মৃতি লয়ে।
আজি বে-তাব বিশ্বমুসলিম সেই শোকে রোয়ে রোয়ে।।

মনে পড়ে আসগরে আজ পিয়াসা দুশের বাচ্চায়
পানি চাহিয়া পেল শাহাদাত হোসেনের বক্ষে রয়ে।।

এক হাতে বিবাহের কাঙ্গন এক হাতে কাসেমের লাশ,
বেহুঁশ খিমাতে সকিনা অসহ বেদনা সয়ে।।

ঝরিছে আঁখিতে খুন হায় জয়নাল বেহুঁশ কেঁদে
মানুষ ব'লে সহে এত পাথরও যেত ক্ষয়ে।।

শূন্য পিঠে কাঁদে দুলদুল হযরত হোসেন শহীদ,
আসমানে শোকের বারেষ, মরে আজি খুন হয়ে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #44

- কাজী নজরুল ইসলাম


এস হে সজল শ্যাম ঘন দেয়া
বেণুকুঞ্জ ছায়ায় এস
তাল তমাল বনে এস শ্যামল
ফুটাইয়া যূঁথী-কুন্দ-নীপ-কেয়া।

বারিধারে এস চারিধার ভাসায়ে
বিদ্যুৎ-ইঙ্গিতে দশ দিক হাসায়ে
বিরহী মনে জ্বালায়ে আশা আলেয়া
ঘন দেয়া মোহনিয়া শ্যাম পিয়া।

শ্রাবণ বরিষণ হরষণ ঘনায়ে
এস নব ঘনশ্যাম নূপুর শোনায়ে
হিজল তমাল ডালে ঝুলন ঝুলায়ে
তাপিতা ধরার চোখে অঞ্জন বুলায়ে
যমুনা স্রোতে ভাসায়ে প্রেমের খেয়া
ঘন দেয়া মোহনিয়া শ্যাম পিয়া।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #45

- কাজী নজরুল ইসলাম


এস প্রিয় আরো কাছে
পাইতে হূদয়ে যে বিরহী মন যাচে।

দেখাও প্রিয়-ঘন স্বরূপ মোহন
যে রূপে প্রেমাবেশে পরাণ নাচে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #46

- কাজী নজরুল ইসলাম


ওই ঘর ভুলানো সুরে
কে গান গেয়ে যায় দূরে
তার সুরের সাথে সাথে
মোর মন যেতে চায় উড়ে।

তার সহজ গলার তানে
সে ফুল ফোটাতে জানে
তার সুরে ভাটির টানে
নব জোয়ার আসে ঘুরে।

তার সুরের অনুরাগে
বুকে প্রণয়-বেদন জাগে
বনে ফুলের আগুন লাগে
ফুল সুধায় ওঠে পুরে।

বুঝি সুর সোহাগে ওরই
পায় যৌবন কিশোরী
হিয়া বুঁদ হয়ে গো নেশায়
তার পায়ে পায়ে ঘুরে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #47

- কাজী নজরুল ইসলাম


ওগো প্রিয় তব গান
আকাশ গাঙের জোয়ারে উজান বাহিয়া যায়।
মোর কথাগুলি কাঁদিছে বুকের মাঝারে,
পথ খুঁজে নাহি পায়।

ওগো দখিনা বাতাস, ফুলের সুরভি বহ
ওরি সাথে মোর না বলা বাণী লহ।
ওগো মেঘ, তুমি মোর হয়ে গিয়ে কহ
বন্দিনী গিরি-ঝরণা পাষাণতলে যে কথা কহিতে চায়।

ওরে ও সুরমা, পদ্মা, কর্ণফুলি
তোদের ভাটির স্রোতে
নিয়ে যা আমার না বলা কথাগুলি
ধুয়ে মোর বুক হতে।

ওরে ‘চোখ গেল’ ‘বৌ কথা কও’ পাখি
তোদের কণ্ঠে মোর সুর যাই রাখি।
ওরে মাঠের মুরলি কহিও তাহারে ডাকি
আমার এ কলি, না-ফোটা বুলি, ঝরে গেল নিরাশায়।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #48

- কাজী নজরুল ইসলাম


তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি।
আমার এ রূপ-সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি।।
আপন জেনে হাত বাড়ালো-
আকাশ বাতাস প্রভাত-আলো,
বিদায়-বেলার সন্ধ্যা-তারা
পুবের অরুণ রবি,-
তুমি ভালোবাস ব’লে ভালোবাসে সবি?

আমার আমি লুকিয়েছিল তোমার ভালোবাসায়,
তুমিই আমার মাঝে আসি’
অসিতে মোর বাজাও বাঁশি,
আমার পূজার যা আয়োজন
তোমার প্রাণের হবি।
আমার বাণী জয়মাল্য, রাণি! তোমার সবি।।

তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি।
আমার এ রূপ-সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #49

- কাজী নজরুল ইসলাম


আজকে দেখি হিংসা-মদের মত্ত-বারণ-রণে
জাগ্‌ছে শুধু মৃণাল-কাঁটা আমার কমল-বনে।
উঠল কখন ভীম কোলাহল,
আমার বুকের রক্ত-কমল
কে ছিঁড়িল-বাঁধ-ভরা জল
শুধায় ক্ষণে ক্ষণে।
ঢেউ-এর দোলায় মরাল-তরী নাচ্‌বে না আন্‌মনে।।

কাঁটাও আমার যায় না কেন, কমল গেল যদি!
সিনান-বধূর শাপ শুধু আজ কুড়াই নিরবধি!
আস্‌বে কি আর পথিক-বালা?
প’রবে আমার মৃণাল-মালা?
আমার জলজ-কাঁটার জ্বালা
জ্ব’লবে মোরই মনে?
ফুল না পেয়েও কমল-কাঁটা বাঁধবে কে কঙ্কণে?

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #50

- কাজী নজরুল ইসলাম


দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #51

- কাজী নজরুল ইসলাম


[তখন শরৎ-সন্ধ্যা। আস্‌মানের আঙিনা তখন কার্‌বালা ময়দানের মতো খুনখারাবির রঙে রঙিন। সেদিনকার মহা-আহবে গ্রীক-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হইহা গিয়াছে। তাহাদের অধিকাংশ সৈন্যই রণস্থলে হত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। বাকি সব প্রাণপণে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতেছে। তুরস্কের জাতীয় সৈন্যদলের কাণ্ডারী বিশ্বত্রাস মহাবাহু কামাল-পাশা মহাহর্ষে রণস্থল হইতে তাম্বুতে ফিরিতেছেন। বিজয়োন্মত্ত সৈন্যদল মহাকল্লোলে অম্বর-ধরণী কাঁপাইয়া তুলিতেছে। তাহাদের প্রত্যেকের বুকে পিঠে দুই জন করিয়া নিহত বা আহত সৈন্য বাঁধা। যাহারা ফিরিতেছে তাহাদেরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গোলাগুলির আঘাতে, বেয়নটের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত, পোষাক-পরিচ্ছদ ছিন্নভিন্ন, পা হইতে মাথা পর্যন্ত রক্তরঞ্জিত। তাহাদের কিন্তু সে দিকে ভ্রূক্ষেপও নাই। উদ্দাম বিজয়োন্মাদনার নেশায় মৃত্যু-কাতর রণক্লান্তি ভুলিয়া গিয়া তাহারা যেন খেপিয়া উঠিয়াছে। ভাঙা সঙ্গীনের আগায় রক্ত-ফেজ উড়াইয়া ভাঙা-খাটিয়া-আদি-দ্বারা-নির্মিত এক অভিনব চৌদলে কামালকে বসাইয়া বিষম হল্লা করিতে করিতে তাহারা মার্চ করিতেছে। ভূমিকম্পের সময় সাগর কল্লোলের মতো তাহাদের বিপুল বিজয়ধ্বনি আকাশে-বাতাসে যেন কেমন একটা ভীতি-কম্পনের সৃজন করিতেছে। বহু দূর হইতে সে রণ-তাণ্ডব নৃত্যের ও প্রবল ভেরী-তূরীর ঘন রোল শোনা যাইতেছে। অত্যধিক আনন্দে অনেকেরই ঘন ঘন রোমাঞ্চ হইতেছিল। অনেকেরই চোখ দিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িতেছিল।]

[সৈন্য-বাহিনী দাঁড়াইয়া। হাবিলদার-মেজর তাহাদের মার্চ করাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিল। বিজয়োন্মত্ত সৈন্যগণ গাইতেছিল,–]


ঐ খেপেছে পাগ্‌লি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই।
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

[হাবিলদার-মাজর মার্চের হুকুম করিল,-কুইক্ মার্চ!]

লেফ্‌ট! রাইট! লেফ্‌ট!!
লেফ্‌ট! রাইট! লেফ্‌ট!!

[সৈন্যগণ গাহিতে গাহিতে মার্চ করিতে লাগিল]

ঐ খেপেছে পাগ্‌লি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই!
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

[হাবিলদার-মেজর;- লেফ্‌ট্! রাইট!]

সাব্বাস্ ভাই! সাব্বাস্ দিই, সাব্বাস্ তোর শম্‌শেরে।
পাঠিয়ে দিলি দুশ্‌মনে সব যম-ঘর একদম্‌-সে রে!
বল্‌ দেখি ভাই বল্ হাঁ রে,
দুনিয়ার কে ডর্ করে না তুর্কির তেজ তলোয়ারে?

[লেফট্! রাইট! লেফ্‌ট্!]

খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া!
বুজ্‌দিল্ ঐ দুশ্‌মন্ সব বিল্‌কুল্ সাফ হো গিয়া!
খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া!
হুর্‌রো হো!
হুর্‌রো হো!
দস্যুগুলোয় সাম্‌লাতে যে এমনি দামাল কামাল চাই!
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

[হাবিলদার-মেজর;- সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্! রাইট্! লেফ্‌ট!]

শির হতে এই পাঁও-তক্ ভাই লাল-লালে-লাল খুন মেখে
রণ-ভিতুদের শান্তি-বাণী শুন্‌বে কে?
পিণ্ডারিদের খুন-রঙিন
নোখ-ভাঙা এই নীল সঙিন
তৈয়ার হেয়্ হর্দম ভাই ফাড়্‌তে যিগর্ শত্রুদের!
হিংসুক-দল! জোর তুলেছি শোধ্ তাদের!
সাবাস্ জোয়ান! সাবাস্!
ক্ষীণজীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্–
এম্‌নি করে রে–
এমনি জোরে রে–
ক্ষীণজীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্!–
ঐ চেয়ে দ্যাখ্ আসমানে আজ রক্ত-রবির আভাস!–
সাবাস্ জোয়ান! সাবাস্!!

[লেফট্! রাইট! লেফ্‌ট্]

হিংসুটে ঐ জীবগুলো ভাই নাম ডুবালে সৈনিকের,
তাই তারা আজ নেস্ত-নাবুদ, আমরা মোটেই হইনি জের !
পরের মুলুক লুট করে খায় ডাকাত তারা ডাকাত !
তাই তাদের তারে বরাদ্দ ভাই আঘাত শুধু আঘাত !
কি বলো ভাই শ্যাঙাত?
হুর্‌রো হো !
হুর্‌রো হো ! !
দনুজ দলে দল্‌তে দাদা এম্‌নি দামাল কামাল চাই !
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

[হাবিলদার মেজর: রাইট্ হুইল্! লেফ্ট্া রাইট্! লেফ্‌ট্!
সৈন্যগণ ডানদিকে মোড় ফিরিল।]

আজাদ মানুষ বন্দী করে, অধীন করে স্বাধীন দেশ,
কুল্ মুলুকের কুষ্টি করে জোর দেখালে ক'দিন বেশ,
মোদের হাতে তুর্কি-নাচন নাচ্‌লে তাধিন্ তাধিন্ শেষ!
হুর্‌রো হো!
হুর্‌রো হো!
বদ্‌-নসিবের বরাত খারাব বরাদ্দ তাই কর্‌লে কি না আল্লায়,
পিশাচগুলো পড়্‌ল এসে পেল্লায় এই পাগলাদেরই পাল্লায়!
এই পাগলাদেরই পাল্লায়!!
হুর্‌রো হো!
হুর্‌রো–
ওদের কল্লা দেখে আল্লা ডরায়, হল্লা শুধু হল্লা,
ওদের হল্লা শুধু হল্লা,
এক মুর্গির জোর গায়ে নেই, ধর্‌তে আসেন তুর্কি-তাজি
মর্দ গাজি মোল্লা!
হাঃ! হাঃ! হাঃ!
হেসে নাড়িই ছেড়ে বা!
হা হা হাঃ! হাঃ! হাঃ!

[হাবিলদার-মেজর-সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্ রাইট্! লেফ্‌ট্!
সাবাস সিপাই! ফের বল ভাই!]

ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই!
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই!
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

[হাবিলদার-মেজর;- লেফ্‌ট্ হুইল্! য়্যাজ্‌ য়ু ওয়্যার্!- রাইট হুইল!–
লেফ্‌ট্! রাইট! লেফট্‌!]
[সৈন্যদের আঁখির সামনে অস্ত-রবির আশ্চর্য রঙের খেলা ভাসিয়া উঠিল।]

দেখ্‌চ কি দোস্ত অমন করে? হৌ হৌ হৌ!
সত্যি তো ভাই!– সন্ধেটা আজ দেখতে যেন সৈনিকেরই বৌ!
শহীদ সেনার টুক্‌টুকে বৌ লাল-পিরাহান-পরা,
স্বামীর খুনের ছোপ-দেওয়া, তায় ডগডগে আন্‌কোরা!–
না না না,–কল্‌জে যেন টুকরো-করে-কাটা
হাজার তরুণ শহীদ বীরের,–শিউরে উঠে গা'টা!
আস্‌মানের ঐ সিং-দরজায় টাঙিয়েছে কোন্ কসাই!
দেখতে পেলে এক্ষুনি গে এই ছোরাটা কল্‌জেতে তার বসাই!
মুণ্ডুটা তার খসাই!
গোস্বাতে আর পাইনে ভেবে কি যে করি দশাই!

[হাবিলদার-মেজর-সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্! রাইট্! লেফ্‌ট্!]
[ঢালু পার্বত্য পথ, সৈন্যগণ বুকের পিঠের নিহত ও আহত সৈন্যদের ধরিয়া সন্তর্পণে নামিল।]

আহা কচি ভাইরা আমার রে!
এমন কাঁচা জানগুলো খান্‌ খান্‌ করেছে কোন্‌ সে চামার রে?
আহা কচি ভাইরা আমার রে! !

[সাম্‌নে উপত্যকা। হাবিলদার মেজর :– লেফ্‌ট্ ফর্ম! সৈন্য- বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল! হাবিলদার মেজর :-ফর্‌ওয়ার্ড ! লেফ্‌ট্ ! রাইট্ ! লেফ্‌ট্ !]


আস্‌মানের ঐ আঙরাখা
খুন-খারাবির রঙ মাখা
কি খুবসুরৎ বাঃ রে বা !
জোর বাজা ভাই কাহারবা!
হোক্ না ভাই এ কারবালা ময়দান–
আমরা যে গাই সাচ্চারই জয়-গান !
হোক্ না এ তোর কার্‌বালা ময়দান ! !
হুর্‌রো হো !
হুর্‌রো–

[সাম্‌নে উপত্যকা– হঠাৎ যেন পথ হারাইয়া ফেলিয়াছে। হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিতে লাগিল। হুকুম দিয়া গেল– 'মার্ক্ টাইম্।' সৈন্যরা এক স্থানেই দাঁড়াইয়া পা আছড়াইতে লাগিল–]


দ্রাম্‌! দ্রাম্‍! দ্রাম!
লেফ্‌ট্! রাইট! লেফ্‌ট!
দ্রাম্‌! দ্রাম্! দ্রাম্!
আস্‌মানে ঐ ভাস্‌মান যে মস্ত দুটো রঙের তাল,
একটা নিবিড় নীল-সিয়া আর একটা খুবই গভীর লাল,–
বুঝ্‌লে ভাই! ঐ নীল সিয়াটা শত্রুদের!
দেখ্‌তে নারে কারুর ভালো,
তাইতে কালো রক্ত-ধারার বইছে শিরায় স্রোত ওদের।
হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
গৃধ্নু ওরা, লুব্ধ ওদের লক্ষ্য অসুর বল–
হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
জালিম ওরা অত্যাচারী!
সার জেনেছে সত্য যাহা হত্যা তারই!
জালিম ওরা অত্যাচারী!
সৈনিকের এই গৈরিকে ভাই–
জোর অপমান করলে ওরাই,
তাই তো ওদের মুখ কালো আজ, খুন যেন নীল জল!–
ওরা হিংস্র পশুর দল!
ওরা হিংস্র পশুর দল!!

[হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিয়া ফিরিয়া অর্ডার দিল-ফর্‌ওয়ার্ড! লেফ্‌ট্ হুইল্–
সৈন্যগণ আবার চলিতে লাগিল-লেফ্‌ট্ রাইট্! লেফ্‌ট্!]

সাচ্চা ছিল সৈন্য যারা শহীদ হলো মরে।
তোদের মতন পিঠ ফেরেনি প্রাণটা হাতে করে,–
ওরা শহীদ হলো মরে!
পিট্‌নি খেয়ে পিঠ যে তোদের ঢিট হয়েছে! কেমন!
পৃষ্ঠে তোদের বর্শা বেঁধা, বীর সে তোরা এমন!
মুর্দারা সব যুদ্ধে আসিস্‌! যা যা!
খুন দেখেছিস্ বীরের? হা দেখ্ টক্‌টকে লাল কেমন গরম তাজা!
মুর্দারা সব যা যা!!

[বলিয়াই কটিদেশ হইতে ছোরা খুলিয়া হাতের রক্ত লইয়া দেখাইল]

ত্রঁরাই বলেন হবেন রাজা!
আরে যা যা! উচিত সাজা
তাই দিয়েছে শক্ত ছেলে কামাল ভাই!

[হাবিলদার মেজর;- সাবাস সিপাই!]

এই তো চাই! এই তো চাই!
থাক্‌লে স্বাধীন সবাই আছি, নেই তো নাই, নেই তো নাই!
এই তো চাই!!

[কতকগুলি লোক অশ্রুপূর্ণ নয়নে এই দৃশ্য দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিতেছিল।
তাহাদের দেখিয়া সৈন্যগণ আরও উত্তেজিত হইয়া উঠিল।]

মার্ দিয়া ভাই মার্ দিয়া!
দুশ্‌মন্ সব হার্ গিয়া!
কিল্লা ফতে হো দিয়া।
পর্‌ওয়ানেহি, যা নে দো ভাই যো গিয়া!
কিল্লা ফতে হো গিয়া!
হুর্‌রো হো!
হুর্‌রো হো!

[হাবিলদার-মেজর;-সাবাস জোয়ান! লেফ্‌ট্! রাইট্!]

জোর্‌সে চলো পা মিলিয়ে,
গা হিলিয়ে,
এম্‌নি করে হাত দুলিয়ে!
দাদ্‌রা তালে 'এক দুই তিন' পা মিলিয়ে
ঢেউএর মত যাই!
আজ স্বাধীন এ দেশ! আজাদ মোরা বেহেশ্‌তও না চাই!
আর বেহেশ্‌তও না চাই!!

[হাবিলদার-মেজর:- সাবাস সিপাই! ফের বল ভাই!]

ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল তাই!
কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই ! !

[সৈন্যদল এক নগরের পার্শ্ব দিয়া চলিতে লাগিল। নগর-বাসিনীরা ঝরকা হইতে মুখ বাড়াইয়া এই মহান দৃশ্য দেখিতেছিল; তাহদের চোখ-মুখ আনন্দাশ্রুতে আপ্লুত। আজ বধূর মুখের বোরকা খসিয়া পড়িয়াছে। ফুল ছড়াইয়া হাত দুলাইয়া তাহারা বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতেছিল। সৈন্যগণ চীৎকার করিয়া উঠিল।]


ঐ শুনেছিস্‌? ঝর্‌কাতে সব বল্‌ছে ডেকে বৌ-দলে,
'কে বীর তুমি? কে চলেছ চৌদলে?'
চিনিস্‌নে কি? এমন বোকা বোনগুলি সব!– কামাল এ যে কামাল!
পাগলি মায়ের দামাল ছেলে! ভাই যে তোদের!
তা না হলে কার হবে আর রৌশন্ এমন জামাল?
কামাল এ যে কামাল!!
উড়িয়ে দেবো পুড়িয়ে দেবো ঘর-বাড়ি সব সামাল!
ঘর-বাড়ি সব সামাল!!
আজ আমাদের খুন ছুটেছে, হোশ টুটেছে,
ডগ্‌মগিয়ে জোশ উঠেছে!
সাম্‌নে থেকে পালাও!
শোহরত দাও নওরাতি আজ! হর্‌ ঘরে দীপ জ্বালাও!
সাম্‌নে থেকে পালাও!
যাও ঘরে দীপ জ্বালাও!!

[হাবিলদার-মেজর:- লেফ্‌ট্ ফর্ম্! লেফ্‌ট্! রাইট! লেফ্‌ট্!-ফরওয়ার্ড্!]

[বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল। পার্শ্বেই পরিখার সারি। পরিখা-ভর্তি নিহত সৈন্যের দল পচিতেছে এবং কতকগুলি অ-সামরিক নগরবাসী তাহা ডিঙাইয়া ডিঙাইয়া চলিতেছে।]


ইস্! দেখেছিস! ঐ কারা ভাই সাম্‌লে চলেন পা,
ফস্‌কে মরা আধ-মরাদের মাড়িয়ে ফেলেন বা!
ও তাই শিউরে ওঠে গা!
হাঃ হাঃ হাঃ!
মরল যে সে মরেই গেছে,
বাঁচ্‌ল যারা রইল বেঁচে!
এই তো জানি সোজা হিসাব! দুঃখ কি তার আঁ?
মরায় দেখে ডরায় এরা! ভয় কি মরায়? বাঃ!
হাঃ হাঃ হাঃ!

[সম্মুখে সঙ্কীর্ণ ভগ্ন সেতু। হাবিলদার-মেজর অর্ডার দিল-'ফর্ম্ ইন্‌টু সিঙ্গল্‌ লাইন'। এক একজন করিয়া বুকের পিঠের নিহত ও আহত ভাইদের চাপিয়া ধরিয়া অতি সন্তর্পণে 'স্লো মার্চ' করিয়া পার হইতে লাগিল।]


সত্যি কিন্তু ভাই!
যখন মোদের বক্ষে-বাঁধা ভাইগুলির এই মুখের পানে চাই–
কেমন সে এক ব্যথায় তখন প্রাণটা কাঁদে যে সে!
কে যেন দুই বজ্র-হাতে চেপে ধরে কল্‌জেখানা পেষে!
নিজের হাজার ঘায়েল জখম ভুলে তখন ডুক্‌রে কেন কেঁদেও ফেলি শেষে!
কে যেন ভাই কল্‌জেখানা পেষে!!
ঘুমোও পিঠে, ঘুমোও বুকে, ভাইটি আমার, আহা!
বুক যে ভরে হাহাকারে যতই তোরে সাব্বাস দিই,
যতই বলি বাহা!
লক্ষ্মীমণি ভাইটি আমার, আহা!!
ঘুমোও ঘুমোও মরণ-পরের ভাইটি আমার, আহা!!
অস্ত-পারের দেশ পারায়ে বহুৎ সে দূর তোদের ঘরের রাহা!
ঘুমোও এখন ঘুমোও ঘুমোও ভাইটি ছোট আহা!
মরণ-বধূর লাল রাঙা বর! ঘুমো!
আহা, এমন চাঁদমুখে তোর কেউ দিল না চুমো!

হতভাগা রে!
মরেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে
না জানি কোন্ ফুট্‌তে-চাওয়া মানুষ-কুঁড়ির হিয়ায়!
তরুণ জীবন এম্‌নি গেল, একটি রাতও পেলিনে রে বুকে কোনো প্রিয়ায়!
অরুণ খুনের তরুণ শহীদ! হতভাগ্য রে!
মরেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে!
তাই যত আজ লিখ্‌নে-ওয়ালা তোদের মরণ ফুর্তি-সে জোর লেখে!
এক লাইনে দশ হাজারের মৃত্যু-কথা! হাসি রকম দেখে‍!
মরলে কুকুর ওদের, ওরা শহীদ-গাথার বই লেখে!
খবর বেরোয় দৈনিকে,
আর একটি কথায় দুঃখ জানান, 'জোর মরেছে দশটা হাজার সৈনিকে!'
আঁখির পাতা ভিজল কি না কোনো কালো চোখের,
জান্‌ল না হায় এ-জীবনে ঐ সে তরুণ দশটি হাজার লোকের!
পচে মরিস পরিখাতে, মা-বোনেরাও শুনে বলে 'বাহা'!
সৈনিকেরই সত্যিকারের ব্যথার ব্যথী কেউ কি রে নেই? আহা!–
আয় ভাই তোর বৌ এল ঐ সন্ধ্যা মেয়ে রক্ত-চেলি পরে,
আঁধার-শাড়ি পরবে এখন পশ্‌বে যে তোর গোরের বাসর-ঘরে!–
ভাবতে নারি, গোরের মাটি করবে মাটি এ মুখ কেমন করে–
সোনা মানিক ভাইটি আমার ওরে!
বিদায়-বেলায় আরেকটিবার দিয়ে যা ভাই চুমো!
অনাদরের ভাইটি আমার! মাটির মায়ের কোলে এবার ঘুমো!!

[নিহত সৈন্যদের নামাইয়া রাখিয়া দিয়া সেতু পার হইয়া আবার জোরে মার্চ করিতে করিতে তাহাদের রক্ত গরম হইয়া উঠিল।]


ঠিক বলেছ দোস্ত তুমি!
চোস্ত কথা! আয় দেখি–তোর হস্ত চুমি!
মৃত্যু এরা জয় করেছে, কান্না কিসের?
আব্-জম্-জম্ আনলে এরা, আপনি পিয়ে কল্‌সি বিষের!
কে মরেছে? কান্না কিসের?
বেশ করেছে!
দেশ বাঁচাতে আপ্‌নারি জান শেষ করেছে!
বেশ করেছে!!
শহীদ ওরাই শহীদ!
বীরের মতন প্রাণ দিয়েছে খুন ওদেরি লোহিত!
শহীদ ওরাই শহীদ!!

[এইবার তাহাদের তাম্বু দেখা গেল। মহাবীর আনোয়ার পাশা বহু সৈন্যসামন্ত ও সৈনিকদের আত্মীয়-স্বজন লইয়া বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতে আসিতেছেন দেখিয়া সৈন্যগণ আনন্দে আত্মহারা হইয়া 'ডবল মার্চ' করিতে লাগিল]


হুর্‌রো হো!
হু‌র্‌রো হো!!
ভাই-বেরাদর পালাও এখন! দূর্ রহো! দূর্ রহো!!
হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!

[কামাল পাশাকে কোলে করিয়া নাচিতে লাগিল]

হৌ হৌ হৌ! কামাল জিতা রও!
কামাল জিতা রও!
ও কে আসে? আনোয়ার ভাই?–
আনোয়ার ভাই! জানোয়ার সব সাফ!!
জোর নাচো ভাই! হর্দম্ দাও লাফ!
আজ জানোয়ার সব সাফ!
হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!!
সব-কুছ আব্ দূর্ রহো! – হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!!
রণ জিতে জোর মন মেতেছে!-সালাম সবায় সালাম!–
নাচ্‌না থামা রে!
জখ্‌মি ঘায়েল ভাইকে আগে আস্তে নামা রে!
নাচ্‌না থামা রে!–

[আহতদেরে নামাইতে নামাইতে]

কে ভাই? হাঁ হাঁ, সালাম!
–ঐ শোন্‌ শোন্‌ সিপাহ্‌-সালার কামাল ভাই-এর কামাল।

[সেনাপতির অর্ডার আসিল]

'সাবাস! থামো! হো! হো!
সাবাস! হল্ট্! এক! দো!'

[এক নিমিষে সমস্ত কল-রোল নিস্তব্ধ হইয়া গেল। তখনো কি তারায় তারায় যেন ঐ বিজয় গীতির হারা-সুর বাজিয়া বাজিয়া ক্রমে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণ হইয়া মিলিয়া গেল–]


ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই!
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই!
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই।
হো হো, কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #52

- কাজী নজরুল ইসলাম


কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

গাজনের বাজনা বাজা,
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!

ওরে ও পাগলা ভোলা,
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে হেচ্‌কা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।

নাচে ওই কালবোশাখী,
কাটাবী কাল বসে কি
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী শালায়-আগুন-জ্বালা, আগুন-জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #53

- কাজী নজরুল ইসলাম


দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।
তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!

আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’,
সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন,
লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্‌ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি’
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #54

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমরা আমায় দেখ্‌তে কি পাও আমার গানের নদী-পারে?
নিত্য কথায় কুহেলিকায় আড়াল করি আপনারে।
সবাই যখন মত্ত হেথায় পান ক’রে মোর সুরের সুরা
সব-চেয়ে মোর আপন যে জন স-ই কাঁদে গো তৃষ্ণাতুরা।
আমার বাদল-মেঘের জলে ভর্‌ল নদী সপ্ত পাথার,
ফটিক-জলের কণ্ঠে কাঁদে তৃপ্তি-হারা সেই হাহাকার!
হায় রে, চাঁদের জ্যোৎস্না-ধারায় তন্দ্রাহারা বিশ্ব-নিখিল,
কলঙ্ক তার নেয় না গো কেউ, রইল জু’ড়ে চাঁদেরি দিল!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #55

- কাজী নজরুল ইসলাম


বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিম আসমানে,
লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন মরুর গরস্থানে।
হের ঈদগাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত- কংকাল
কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গরুর পাল?
রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু- সলিলে হায়,
বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়।
থালা, ঘটি, বাটি বাঁধা দিয়ে হের চলিয়াছে ঈদগাহে,
তীর খাওয়া বুক, ঋণে- বাঁধা- শির, লুটাতে খোদার রাহে।

জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমুর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু- পাঁজরের হাড়?
আসমান- জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে।
এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর পুটে।
কৃষকের ঈদ!ঈদগাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,
যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার।
মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু- বন্যা আসে
এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা- মসজিদে আশেপাশে।

কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?
চারিদিকে তব মুর্দার লাশ, তারি মাঝে চোখে বিঁধে
জরির পোশাকে শরীর ঢাকিয়া ধণীরা এসেছে সেথা,
এই ঈদগাহে তুমি ইমাম, তুমি কি এদেরই নেতা?
নিঙ্গাড়ি’ কোরান হাদিস ও ফেকাহ, এই মৃতদের মুখে
অমৃত কখনো দিয়াছ কি তুমি? হাত দিয়ে বল বুকে।
নামাজ পড়েছ, পড়েছ কোরান, রোজাও রেখেছ জানি,
হায় তোতাপাখি! শক্তি দিতে কি পেরেছ একটুখানি?
ফল বহিয়াছ, পাওনিক রস, হায় রে ফলের ঝুড়ি,
লক্ষ বছর ঝর্ণায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি।

আল্লা- তত্ত্ব জেনেছ কি, যিনি সর্বশক্তিমান?
শক্তি পেলো না জীবনে যে জন, সে নহে মুসলমান।
ঈমান! ঈমান! বল রাতদিন, ঈমান কি এত সোজা?
ঈমানদার হইয়া কি কেহ বহে শয়তানি বোঝা?

শোনো মিথ্যুক! এই দুনিয়ায় পুর্ণ যার ঈমান,
শক্তিধর সে টলাইতে পারে ইঙ্গিতে আসমান।
আল্লাহর নাম লইয়াছ শুধু, বোঝনিক আল্লারে।
নিজে যে অন্ধ সে কি অন্যরে আলোকে লইতে পারে?
নিজে যে স্বাধীন হইলনা সে স্বাধীনতা দেবে কাকে?
মধু দেবে সে কি মানুষে, যাহার মধু নাই মৌচাকে?

কোথা সে শক্তি- সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার
আবে- জমজম শক্তি- উৎস বাহিরায় অনিবার?
আপনি শক্তি লভেনি যে জন, হায় সে শক্তি-হীন
হয়েছে ইমাম, তাহারি খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন।
দীন কাঙ্গালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাগিদ
কোথা সে মহা- সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আসমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি,
ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনো হবে না বাসি।
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #56

- কাজী নজরুল ইসলাম


কেমনে রাখি আঁখিবারি চাপিয়া
প্রাতে কোকিল কাঁদে, নিশীথে পাপিয়া।

এ ভরা ভাদরে আমারি মরা নদী
উথলি উথলি উঠিছে নিরবধি
আমার এ ভাঙ্গা ঘাটে আমার এ হূদি তটে
চাপিতে গেলে ওঠে দুকুল ছাপিয়া।

নিষেধ নাহি মানে আমার এ পোড়া আঁখি
জল লুকাব কত কাজল মাখি মাখি
ছলনা করে হাসি অমনি জলে ভাসি
ছলিতে গিয়া আসি ভয়েতে কাঁপিয়া।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #57

- কাজী নজরুল ইসলাম


ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্-বোধন!
দুর্ব্বল ! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খাম্ খা ক্ষুব্ধ মন!
ধ্বনি ওঠে রণি’ দূর বাণীর,--
আজিকার এ খুন কোর্ বানীর!
দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
শহীদের শির-সেরা আজি!-- রহ্ মান কি রুদ্র নন?
ব্যস্! চুপ খামোশ রোদন!
আজ শোর ওঠে জোর “খুন দে, জান দে, শির দে বত্স” শোন্!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ধোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ধোধন!
খঞ্জরে মারো গর্দ্দানেই,
পঞ্জরে আজি দরদ্ নেই,
মর্দ্দানীই পর্দ্দা নেই,
ডরতা নেই আজ খুন-খারাবীতে রক্ত-লুব্ধ মন!
খুনে খেল্ বো খুন-মাতন!
দুনো উনমাদনাতে সত্য মুক্তি আন্ তে যুঝবো রণ!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ধোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ধোধন!
চ’ড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার
মুস্ লিমে সারা দুনিয়াটার!
‘জুল্ ফেকার’ খুল্ বে তার
দু’ধারী ধার শেরে-খোদার, রক্তে-পূত-বদন!
খুনে আজকে রুধ্ বো মন!
ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি , শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
আস্তানা সিধা রাস্তা নয়,
‘আজাদী’ মেলে না পস্তানো’য়!
দস্তা নয় সে সস্তা নয়!
হত্যা নয় কি মৃত্যুও ? তবে রক্ত-লুব্ধ কোন্
কাঁদে-- শক্তি-দুস্ত শোন্--
“এয়্ ইবরাহীম আজ কোরবানী কর শ্রেষ্ঠ পুত্র ধন!”
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ভোধন!
এ তো নহে লোহু তরবারের
ঘাতক জালিম জোর্ বারের!
কোরবানের জোর-জানের
খুন এ যে, এতে গোর্দ্দা ঢের রে, এ ত্যাগে ‘বুদ্ধ’ মন!
এতে মা রাখে পুত্র পণ!
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরালো বলির পূত বসন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
এই দিন-ই ‘মীনা’- ময়দানে’
পুত্র-স্নেহের গর্দ্দানে
ছুরি হেনে’ খুন ক্ষরিয়ে নে’
রেখেছে আব্বা ইব্ রাহীম্ সে আপনা রুদ্র পণ!
ছি ছি! কেঁপো না ক্ষুদ্র মন
আজ জল্লাদ নয়, প্রহ্লাদ-সম মোল্লা খুন-বদন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
দ্যাখ কেঁপেছে ‘আরশ’ আস্ মানে!
মন-খুনী কি রে রাশ মানে?
ত্রাসে-প্রাণে -- তবে রাস্তা নে!
প্রলয়-বিষাণ ‘কিয়ামতে’ তবে বাজাবে কোন্ বোধন?
সে কি সৃষ্টি-সংশোধন?
ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্!--
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
মুসলিম-রণ-ডঙ্কা সে,
খুন্ দেখে করে শঙ্কা কে?
টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে,
ওরে হুঙ্কারে, ভাঙি গড়া ভীম-কারা, ল’ড়বো রণ-মরণ!
ঢালে বাজ্ বে ঝন্-ঝনন্!
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
জোর চাই, আর যাচ্ না নয়,
কোরবানী-দিন আজ না ওই?
বাজ্ না কই ? সাজ্ না কই?
কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্ধরণ?
বল্-- “যুঝ্ বো জান্ ভি পণ!”
ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,
আজ আল্লার নামে জান্ কোরবানে ঈদের পূত বোধন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!


উৎস: অগ্নিবীণা

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #58

- কাজী নজরুল ইসলাম


ও মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক ড্যাঙ্গা-ড্যাং- ড্যাং!

ওঁর নাকতাকে কে করল খ্যাঁদ্যা রাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে- ছা ব'সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে।
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং।
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছ্যাঁদা দিয়ে টুকি কে দেয় 'টু'!
ছোড়দি বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক! থুঃ!
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দাদু বুঝি চিনাম্যান মা, নাম বুঝি চাং চু,
তাই বুঝি ওঁর মুখটা অমন চ্যাপটা সুধাংশু।
জাপান দেশের নোটীশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়- নাক
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপটা নাকেই বাজতো সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চলতে বেঁজির ছা
দাড়ির জালে প'ড়ে দাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি- বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙাতে 'আলমানাক'
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙ্গে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক করেছেন 'ট্যান'!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন -হাসিকে!
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #59

- কাজী নজরুল ইসলাম


কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?-

ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকল্গুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?
দেখনি তবে? রাঙাদা'কে ডাকবো? দেবে ঢিল!
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাইতো তার নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস!
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!

ইস। খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও!
কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি' হবে? বৌদি হবে? হুঁ,
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঁঃ!


এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দু'টো?
আর খেয়ো না পেয়ারা তবে,
বাতাবি নেবুও ছাড়ুতে হবে!
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ যে ছুট? অ-মা দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #60

- কাজী নজরুল ইসলাম


খেয়া পার,
বজ্রেরি তূর্যে এ গর্জেছে কে আবার?
প্রলয়েরি আহ্বান ধ্বনিল কে বিষাণে!
ঝন্‌ঝা ও ঘন দেয়া স্বনিল রে ঈশানে!
নাচে পাপ-সিন্ধুতে তুঙ্গ তরঙ্গ!
মৃত্যুর মহানিশা রুদ্র উলঙ্গ!
নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে,
ত্রাসে কাঁপে তরণীর পাপী যত নিঃস্বে।
মসাবৃতা ঘোরা ‘কিয়ামত’ রাত্রি,
খেয়া-পারে আশা নাই ডুবিল রে যাত্রী!
দমকি দমকি দেয়া হাঁকে কাঁপে দামিনী,
শিঙ্গার হুঙ্কারে থরথর যামিনী!

লঙ্ঘি এ সিন্ধুরে প্রলয়ের নৃত্যে
ওগো কার তরী ধায় নির্ভীক চিত্তে–
অবহেলি জলধির ভৈরব গর্জন
প্রলয়ের ডঙ্কার ওঙ্কার তর্জন!

পুণ্য-পথের এ যে যাত্রীরা নিষ্পাপ,
ধর্মেরি বর্মে সু-রক্ষিত দিল্ সাফ!
নহে এরা শঙ্কিত বজ্র নিপাতেও
কাণ্ডারী আহ্‌মদ তরী ভরা পাথেয়।

আবুবকর উস্‌মান উমর আলি হায়দর
দাঁড়ি যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর!
কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
দাঁড়ি-মুখে সারি-গান –লা-শরিক আল্লাহ!

শাফায়ত’-পাল-বাঁধা তরণীর মাস্তুল,
‘জান্নাত্’ হতে ফেলে হুরি রাশ্ রাশ্ ফুল।
শিরে নত স্নেহ-আঁখি মঙ্গল দাত্রী,
গাও জোরে সারি-গান ও-পারের যাত্রী।
বৃথা ত্রাসে প্রলয়ের সিন্ধু ও দেয়া-ভার,
ঐ হলো পুণ্যের যাত্রীরা খেয়া পার।


-------------------------------------
আহমদ– মোহাম্মদ (সা)।
লা-শরিক আল্লাহ– ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কেহ উপাস্য নাই।
শাফায়ত– পরিত্রাণ
জান্নাত– স্বর্গ

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #61

- কাজী নজরুল ইসলাম


ভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়
কে যেন আমারে ডাকে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
সে কি তুমি?

কার স্মৃতি বুকে পাষানের মত ভার হয়ে যে থাকে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
কাহার ক্ষুধিত প্রেম যেন হায়
ভিক্ষা চাহিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়
কার সকরুন আঁখি দুটি যেন রাতের মত
মুখপানে চেয়ে থাকে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

নিশির বাতাশ কাহার হুতাশ দীর্ঘ নিশাস সম
ঝড় তোলে এসে অন্তরে মোর
ওগো দুরন্ত মম
সে কি তুমি, সে কি তুমি

মহাসাগরের ঢেউ এর মতন
বুকে এসে বাজে কাহার রোদন
পিয়া পিয়া নাম ডাকে অবিরাম বনের পাপিয়া পাখি
আমার চম্পা- শাঁখে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #62

- কাজী নজরুল ইসলাম


গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
দূর গগনে প্রিয় তিমির-পারে।

জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে
আঙিনায় ফুটে ফুল ঝরে পড়ে আছে
বাণ-বেঁধা পাখী সম আহত এ প্রাণ মম
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।

মৌনা নিঝুম ধরা ঘুমায়েছে সবে
এসো প্রিয় এই বেলা বক্ষে নীরবে।

কত কথা কাঁটা হয়ে বুকে আছে বিঁধে
কত আভিমান কত জ্বালা এই হূদে
দেখে যাও এসো প্রিয় কত সাধ ঝরে গেল
কত আশা মরে গেল হাহাকারে।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #63

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান --
এইটুকু শুধু রবে পরিচয় ? আর সব অবসান ?
অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,
গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয় ?
হয়তো কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,
গানের বানী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা ?
হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার, তাহারি প্রতিধ্বনি
কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি' --
উপকূলে ব'সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে ?
বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দু'ল হয়ে শুধু কানে ?

হায় ভেবে নাহি পাই --
যে - চাঁদ জাগালো সাগরে জোয়ার, সেই চাঁদই শোনে নাই ।
সাগরের সেই ফুলে ফুলে কাদা কূলে কূলে নিশিদিন ?
সুরেরে আড়ালে মূর্চ্ছনা কাঁদে, শোনে নাই তাহা বীণ ?
আমার গানের মালার সুবাস ছুঁল না হৃদয়ে আসি' ?
আমার বুকের বাণী হল শুধু তব কন্ঠের ফাঁসি?

বন্ধু গো যেয়ো ভুলে --
প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধায় রেখো না সে ফুল তুলে !
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ -- প্রভাতেই তুমি জাগি'
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি' ।
যে কাঁটা লতায় ফুটেছে সে-ফুল রক্তে ফাটিয়া পড়ি'
সারা জনমের ক্রন্দন যার ফুটিয়াছে শাখা ভরি'
দেখ নাই তারে ! -- মিলন মালার ফুল চাহিয়াছ তুমি,
তুমি খেলিয়াছ বাজাইয়া মোর বেদনার ঝুমঝুমি !

ভোল মোর গান, কি হবে লইয়া এইটুকু পরিচয়,
আমি শুধু তব কন্ঠের হার, হৃদয়ে কেহ নয় !
জানায়ো আমারে যদি আসে দিন, এইটুকু শুধু যাচি--
কন্ঠ পারায়ে হয়েছি তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি !

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #64

- কাজী নজরুল ইসলাম


গুঞ্জা-মালা গলে কুঞ্জে এস হে কালা
বনমালী এস দুলাইয়া বনমালা।

তব পথে বকুল ঝরিছে উতল বায়ে
দলিয়া যাবে চলি অরুণ-রাঙা পায়ে
রচেছি আসন তরুর তমাল ছায়ে
পলাশে শিমুলে রাঙা প্রদীপ জ্বালা।

ময়ুরে নাচাও এসে তোমার নূপুর তালে
বেঁধেছি ঝুলনিয়া ফুলেল্‌ কদম ডালে
তোমা বিনে বনমালী বিফল এ ফুল-দোল
বাঁশী বাজিবে কবে উতলা ব্রজবালা।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #65

- কাজী নজরুল ইসলাম


না ফুরাতে শরতের বিদায়-শেফালি,
না নিবিতে আশ্বিনের কমল-দীপালি,
তুমি শুনেছিলে বন্ধু পাতা-ঝরা গান
ফুলে ফুলে হেমনে-র বিদায়-আহবান!
অতন্দ্র নয়নে তব লেগেছিল চুম
ঝর-ঝর কামিনীর, এল চোখে ঘুম
রাত্রিময়ী রহস্যের; ছিন্ন শতদল
হ’ল তব পথ-সাথী; হিমানী-সজল
ছায়াপথ-বিথী দিয়া শেফালি দলিয়া
এল তব মায়া বধূ ব্যথা-জাগানিয়া!
এল অশ্রু হেমনে-র,এল ফুল-খসা
শিশির-তিমির-রাত্রি; শ্রান- দীর্ঘশ্বাসা
ঝাউ-শাখে সিক্ত বায়ু ছায়া-কুহেলির
অশ্রু-ঘন মায়া-আঁখি, বিরহ-অথির
বুকে তব ব্যথা-কীট পশিল সেদিন!
যে-কান্না এল না চোখে, মর্মে হ’ল লীন,
বক্ষে তাহা নিল বাসা, হ’ল রক্তে রাঙা
আশাহীন ভালবাসা, ভাষা অশ্রু-ভাঙা!
বন্ধু, তব জীবনের কুমারী আশ্বিন
পরিল বিধবা বেশ করে কোন্‌ দিন,
কোন্‌ দিন সেঁউতির মালা হ’তে তার
ঝ’রে গেল বৃন-গুলি রাঙা কামনার-
জানি নাই; জানি নাই, তোমার জীবনে
হাসিছে বি”েছদ-রাত্রি, অজানা গহনে
এবে যাত্রা শুরু তব, হে পথ-উদাসী!
কোন্‌ বনান-র হ’তে ঘর-ছাড়া বাঁশী
ডাক দিল, তুমি জান। মোরা শুধু জানি
তব পায়ে কেঁদেছিল সারা পথখানি!
সেধেছিল, এঁকেছিল ধূলি-তুলি দিয়া
তোমার পদাঙ্ক-স্মৃতি।

রহিয়া রহিয়া
কত কথা মনে পড়ে! আজ তুমি নাই,
মোরা তব পায়ে-চলা পথে শুধু তাই
এসেছি খুঁজিতে সেই তপ্ত পদ-রেখা,
এইখানে আছে তব ইতিহাস লেখা।

জানি না ক’ আজ তুমি কোন্‌ লোকে রহি’
শুনিছ আমার গান হে কবি বিরহী!
কোথা কোন্‌ জিজ্ঞাসার অসীম সাহারা,
প্রতীক্ষার চির-রাত্রি, চন্দ্র, সুর্য, তারা,
পারায়ে চলেছ একা অসীম বিরহে?
তব পথ-সাথী যারা-পিছু ডাকি’ কহে,
‘ওগো বন্ধু শেফালির, শিশিরের প্রিয়!
তব যাত্রা-পথে আজ নিও বন্ধু নিও
আমাদের অশ্রু-আর্দ্র এ স্মরণখানি!’
শুনিতে পাও কি তুমি, এ-পারে ও-পারে?
এ কাহার শব্দ শুনি মনের বেতারে?
কতদূরে আছ তুমি কোথা কোন্‌ বেশে?
লোকান-রে, না সে এই হৃদয়েরি দেশে
পারায়ে নয়ন-সীমা বাঁধিয়াছ বাসা?
হৃদয়ে বসিয়া শোন হৃদয়ের ভাষা?
হারায়নি এত সূর্য এত চন্দ্র তারা,
যেথা হোক আছ বন্ধু, হওনি ক’ হারা!

সেই পথ, সেই পথ-চলা গাঢ় স্মৃতি,
সব আছে! নাই শুধু সেই নিতি নিতি
নব নব ভালোবাসা প্রতি দরশনে,
আরো প্রিয় ক’রে পাওয়া চির প্রিয়জনে-
আদি নাই, অন- নাই, ক্লানি- তৃপ্তি নাই-
যত পাই তত চাই-আরো আরো চাই,-
সেই নেশা, সেই মধু নাড়ী-ছেঁড়া টান
সেই কল্পলোকে নব নব অভিযান,-
সব নিয়ে গেছ বন্ধু! সে কল-কল্লোল,
সে হাসি-হিল্লোল নাই চিত-উতরোল!
আজ সেই প্রাণ-ঠাসা একমুঠো ঘরে
শূন্যের শূন্যতা রাজে, বুক নাহি ভরে!….
হে নবীন, অফুরন- তব প্রাণ-ধারা।
হয়ত এ মরু-পথে হয়নি ক’ হারা,
হয়ত আবার তুমি নব পরিচয়ে
দেবে ধরা; হবে ধন্য তব দান ল’য়ে
কথা-সরস্বতী! তাহা ল’য়ে ব্যথা নয়,
কত বাণী এল, গেল, কত হ’ল লয়,
আবার আসিবে কত। শুধু মনে হয়
তোমারে আমরা চাই, রক্তমাংসময়!
আপনারে ক্ষয় করি’ যে অক্ষয় বাণী
আনিলে আনন্দ-বীর, নিজে বীণাপাণি
পাতি’ কর লবে তাহা, তবু যেন হায়,
হৃদয়ের কোথা কোন্‌ ব্যথা থেকে যায়!
কোথা যেন শূন্যতার নিঃশব্দ ক্রন্দন
গুমরি’ গুমরি’ ফেরে, হু-হু করে মন!

বাণী তব- তব দান- সে তা সকলের,
ব্যথা সেথা নয় বন্ধু! যে ক্ষতি একের
সেথায় সান-্বনা কোথা? সেথা শানি- নাই,
মোরা হারায়েছি,- বন্ধু, সখা, প্রিয়, ভাই।…
কবির আনন্দ-লোকে নাইদুঃখ-শোক,
সে-লোকে বিরহে যারা তারা সুখী হোক!
তুমি শিল্পী তুমি কবি দেখিয়াছে তারা,
তারা পান করে নাই তব প্রাণ-ধারা!

‘ পথিকে’ দেখেছে তা’রা, দেখেনি ‘গোকুলে’,
ডুবেনি ক’-সুখী তা রা-আজো তা’রা কূলে!
আজো মোরা প্রাণা”ছন্ন, আমরা জানি না
গোকুল সে শিল্পী গল্পী কবি ছিল কি-না!
আত্মীয়ে স্মরিয়া কাঁদি, কাঁদি প্রিয় তরে
গোকুলে পড়েছে মনে-তাই অশ্রু ঝরে!

না ফুরাতে আশা ভাষা, না মিটিতে ক্ষুধা,
না ফুরাতে ধরণীর মৃৎ-পাত্র-সুধা,
না পূরিতে জীবনের সকল আস্বাদ-
মধ্যাহ্নে আসিল দূত! যত তৃষ্ণা সাধ
কাঁদিল আঁকড়ি’ ধরা, যেতে নাহি চায়!
ছেড়ে যেতে যেন সব স্নায়ু ছিঁড়ে যায়!
ধরার নাড়ীতে পড়ে টান! তরুলতা
জল বায়ু মাটি সব কয় যেন কথা!
যেয়ো না ক’ যেয়ো না ক’ যেন সব বলে-
তাই এত আকর্ষণ এই জলে স’লে
অনুভব করেছিলে প্রকৃতি-দুলাল!
ছেড়ে যেতে ছিঁড়ে গেল বক্ষ, লালে লাল
হ’ল ছিন্ন প্রাণ! বন্ধু, সেই রক্ত ব্যথা
র’য়ে গেল আমাদের বুকে চেপে হেথা!

হে তরুণ, হে অরুণ, হে শিল্পী সুন্দর,
মধ্যাহ্ন আসিয়াছিলে সুমেরু-শিখর
কৈলাসের কাছাকাছি দারুণ তৃষ্ণায়,
পেলে দেখা সুন্দরের, স্বরগ-গঙ্গায়
হয়ত মিটেছে তৃষ্ণা, হয়ত আবার
ক্ষুধাতুর!-স্রোতে ভেসে এসেছে এ-পার
অথবা হয়ত আজ হে ব্যথা-সাধক,
অশ্রু-সরস্বতী কর্ণে তুমি কুরুবক!

হে পথিক-বন্ধু মোর, হে প্রিয় আমার,
যেখানে যে লোকে থাক/ করিও স্বীকার
অশ্রু-রেবা-কূলে মোর স্মৃতি-তর্পণ,
তোমারে অঞ্জলি করি’ করিনু অর্পণ!

সুন্দরের তপস্যায় ধ্যানে আত্মহারা
দারিদ্র্যে দর্প তেজ নিয়া এল যারা,
যারা চির-সর্বহারা করি’ আত্মদান,
যাহারা সৃজন করে, করে না নির্মাণ,
সেই বাণীপুত্রদের আড়ম্বরহীন
এ-সহজ আয়োজন এ-স্মরণ-দিন
স্বীকার করিও কবি, যেমন স্বীকার
ক’রেছিলে তাহাদের জীবনে তোমার!

নহে এরা অভিনেতা, দেশ-নেতা নহে,
এদের সৃজন-কুঞ্জ অভাবে, বিরহে,
ইহাদের বিত্ত নাই, পুঁজি চিত্তদল,
নাই বড় আয়োজন,নাই কোলাহল;
আছে অশ্রু, আছে প্রীতি, আছে বক্ষ-ক্ষত,
তাই নিয়ে সুখী হও, বন্ধু স্বর্গগত!
গড়ে যারা, যারা করে প্রাসাদ নির্মাণ
শিরোপা তাদের তরে, তাদের সম্মান।

দু’দিনে ওদের গড়া প’ড়ে ভেঙে যায়
কিন’ স্রষ্টা সম যারা গোপনে কোথায়
সৃজন করিছে জাতি, সৃজিছে মানুষ
অচেনা রহিল তা’রা। কথার ফানুস
ফাঁপাইয়া যারা যত করে বাহাদুরী,
তারা তত পাবে মালা যমের কস’রী!
‘আজ’টাই সত্য নয়, ক’টা দিন তাহা?
ইতিহাস আছে, আছে অবিষ্যৎ, যাহা
অনন- কালের তরে রচে সিংহাসন,
সেখানে বসাবে তোমা বিশ্বজনগণ।
আজ তারা নয় বন্ধু, হবে সে তখন,-
পূজা নয়-আজ শুধু করিনু স্মরণ।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #66

- কাজী নজরুল ইসলাম


পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।

নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার ক’রলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক’ জানার অবসর।
গানের পাখী ব’সেছিলাম দু’দিন শাখার’ পর।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক’-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক’ কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হ’তে
একটি পালক প’ড়লে পথে
ভুলে’ প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক’ তাই ভ’রে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য ব’লে উঠবে বাঁশীর বোল।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্ হ’য়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় ল’য়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে র’বে, সেই তো চরম সুখ!
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক’, পরান ভ’রে ক’রে যাব দান।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #67

- কাজী নজরুল ইসলাম


চম্‌কে চম্‌কে ধীর ভীরু পায়
পল্লী-বালিকা বন-পথে যায়
একেলা বন-পথে যায়।

সাড়ি তার কাঁটা-লতায়
জড়িয়ে জড়িয়ে যায়
পাগল হাওয়াতে অঞ্চল লয়ে মাতে
যেন তার তনুর পরশ চায়।
একেলা বনপথে যায়।

শিরীষের পাতায় নূপুর
বাজে তার ঝুমুর ঝুমুর
কুসুম ঝরিয়া মরিতে
চাহে তার কবরীতে,
পাখী গায় পাতার ঝরোকায়।
একেলা বনপথে যায়।

চাহি তার নীল নয়নে
হরিণী লুকায় বনে,
হাতে তার কাঁকন হতে
মাধবী লতা কাঁদে
ভ্রমরা কুন্তলে লুকায়।
একেলা বনপথে যায়।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #68

- কাজী নজরুল ইসলাম


চল্ চল্ চল্
ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী-তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল্ রে চল্ রে চল্
চল্ চল্ চল্।।
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটিব তিমির রাত
বাঁধার বিন্ধ্যা চল।।
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশশ্মান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল।।
চলরে নওজোয়ান
শোনরে পাতিয়া কান-
মৃত্যু-তোরণ-দুয়ারে-দুয়ারে
জীবনের আহ্বান
ভাঙ্গরে ভাঙ্গ আগল
চল্ রে চল্ রে চল্
চল্ চল্ চল্।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #69

- কাজী নজরুল ইসলাম


চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে
ছোটে তরঙ্গ বাসনা ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে।

হেরিছে রজনী রজনী জাগিয়া
চকোর উতলা চাঁদের লাগিয়া
কাঁহা পিউ কাঁহা ডাকিছে পাপিয়া
কুমুদীরে কাঁদাইতে।

না জানি সজনী কত সে রজনী
কেঁদেছে চকোরী পাপিয়া
হেরেছে শশীরে সরসী মুকুরে
ভীরু ছায়া তরু কাঁপিয়া।

কেঁদেছে আকাশে চাঁদের ঘরণী
চিরবিরহিণী রোহিণী ভরণী
অবশ আকাশ বিবশা ধরণী
কাঁদানীয়া চাঁদিনীতে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #70

- কাজী নজরুল ইসলাম


কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙ্গে,
হাবুডুবু খায় তারা- বুদ্বুদ, জোছনা সোনায় রাঙ্গে।
তৃতীয়া চাঁদের 'শাম্পানে' চড়ি' চলিছে আকাশ- প্রিয়া,
আকাশ- দরিয়া উতলা হল গো পুতলায় বুকে নিয়া।
তৃতীয়া চাঁদের বাকী 'তের কলা' আবছা কালোতে আঁকা,
নীলিম প্রিয়ার নীলা 'গুল রুখ' অব- গুন্ঠনে ঢাকা।
সপ্তর্ষির তারা পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ- রাণী,
সেহেলী 'লায়লী' দিয়ে গেছে চূপে কুহেলী- মশারি টানি'।
দিক- চক্রের ছায়া- ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,
নীহার- নেটের কুয়াসগা- মশারি- ও কি বর্ডার তারি?
সাতাশ তারার ফুল তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে
গোপনে আসিয়া তারা পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে।
উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে নীলা হুরী,
লুকিয়ে দেখে তা 'চোখ গেল' ব'লে চেচাঁইয় পাপিয়া ছুঁড়ি!
'মঙ্গল' তারা মঙ্গল- দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,
ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে- বুঝি বধুঁর নিশাস লাগে।
উল্কা- জ্বালায় সন্ধানী- আলো লইয়া আকাশ- দ্বারী
'কাল-পুরুষ' সে জাগি' বিনিদ্র করিতেছে পায়চারী।
সেহেলীরা রাতে পালায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,
হেথা হোথা ছোটে- পিকের কন্ঠে ফিক ফিক ক'রে হাসে!
আবেগে সোহাগে আকাশ প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি
শিশিরের রূপে ঘর্মবিন্দু ঝ'রে ঝ'রে পড়ে সখি,
নবমী চাঁদের 'সসারে' কলঙ্ক- ফুল আনমনে যায় আঁকি!...
ফরহাদ-শিরী, লাইলি-মজনু মগজে ক'রেছে চিড়,
মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু- বেয়ালার মীড়!

আনমনা সাকী! অমনি আমারো হৃদয়- পেয়ালা- কোণে
কলঙ্ক- ফুল আনমনে সখি লিখো মুছো খনে খনে!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #71

- কাজী নজরুল ইসলাম


প্রাচীর দুয়ারে শুনি কলরোল সহসা তিমির-রাতে,
মিসরের শের, শির শমশের-সব গেল এক সাথে!
সিন্ধুর গলা জড়ায়ে কাঁদিতে দু'তীরে ললাট হানি'
ছুটিয়া চ'লেছে মরু-বকৌলি 'নীল' দরিয়ার পানি!
আঁচলের তার ঝিনুক মানিক কাদায় ছিটায়ে পড়ে,
সোঁতের শ্যাওলা আলো কুন্তল লুটাইছে বালুচরে......
মরু-'সাইমুম'-তাঞ্জামে চড়ি' কোন পরীবানু আসে?
'লু'-হাওয়া ধরেছে ধ'রেছে বালুর পর্দা সম্ভ্রমে দুই পাশে!
সূর্য নিজেরে লুকায় টানিয়া বালুর আস্তরণ,
ব্যজনী দুলায় ছিন্ন পাইন-শাখায় প্রভঞ্জন।
ঘূর্ণি-বাঁদীরা নীল দরিয়ায় আ৬চল ভিজায়ে আনি'
ছিটাইছে বারি, মেঘ হ'তে মাগি' আনিছে বরফ-পানি।
ও বুঝি মিসর- বিজয়লক্ষো মূরছিতা তাঞ্চামে,
ওঠে হাহাকার ভগ্ন মিনার আঁধার দীওয়ান-ই-আমে!
কৃষানের গরু মাঠে মাঠে ফেরে, ধরেনি ক' আজ হাল,
গম-ক্ষেত ভেঙ্গে পানি ব'য়ে যায় তবু নাহি বাঁধে আ'ল,
মনের বাঁধেরে ভেঙ্গেছে যাহার চোখের সাঁতার পানি
মাঠের পানি ও আ'লেরে কেমনে বা৬ধিবে সে, নাহি জানি।
হৃদয়ে যখন ঘনায় শাঙন, চোখে নামে বরষাত,
তখন সহসা হয় গো মাথায় এমনি বজ্রপাত!
মাটিরে উজায়ে উপুড় হইয়া কাঁদিছে শ্রমিক কুলি,
বলে-"মা গো তোর উদিরে মাটির মানুষই হ'য়েছে ধূলি,
রতন মানিক হয় না তো মাটি, হীরা সে হীরাই থাকে,
মোদের মাথায় কোহিনূর মণি- কি করিব বল তাকে?
দুর্দিনে মা গো যদি ও-মাটির দুয়ার খুলিয়া খুঁজি,
চুরি করিবি না তুই এ মানিক? ফিরে পাব হারা পুঁজি?
লৌ পরশি' করিনু শপথ, ফিরে নাহি পাই যদি
নতুন করিয়া তর বুকে মোরা বহাব রক্ত-নদী!"

আভীর-বালারা দুধাল গাধীরে দোহায় না, কাঁদে শুয়ে,
দুম্বা শিশুরা দূরে চেয়ে আছে দুধ ঘাস নাহি ছুঁইয়ে।
মিষ্টি ধারাল মিছরির ছুরি মিসরী মেয়ের হাসি,
হাঁসা পাথরের কুঁচি-সম দাঁত,- সব যেন আজ বাসি!
আঙুর লতার অলকগুচ্ছ- ডাঁশা আঙুরের থোপা,
যেন তরুণীর আঙুলের ডগা- হুরী বালিকার খোঁপা,
ঝুরে ঝুরে পড়ে হতাদরে আজ অশ্রুর বুঁদ-সম!
কাঁদিতেছে পরী, চারিদিকে অরি, কোথায় অরিন্দম!
মরু- নটী তার সোনার ঘুঙুর ছুঁড়িয়া ফেলেছে কাঁদি'
হলিদ খেঁজুর-কাঁধিতে বুঝি বা রয়েছে তাহারা বা৬ধি'
নতুন করিয়া মরিল গো বুঝি আজি মিসরের মমি,
শ্রদ্ধায় আজি পিরামিড যায় মাটির কবরে নমি'!
মিসরে খেদিব ছিল বা ছিল না, ভুলেছিল সব লোক,
জগলুলে পেয়ে ভুলেছিল ওরা সুদান-হারার শোক।
জানি না কখন ঘনাবে ধরার ললাটে মহাপ্রলয়,
মিসরের তরে 'রোজ-কিয়ামৎ'ইহার অধিক নয়!
রহিল মিস, 'চ'লে গেল তার দুর্মদ যৌবন,
রুস্তম গেল, নিষ্প্রভ কায়খসরু-সিংহাসন।
কি শাপে মিসর লভিল অকালে জরা যযাতির প্রায়,
জানি না তাহার কোন সুত দেবে যৌবন ফিরে তায়;
মিসরের চোখে বহিল নতুন সুয়েজ খালের বান,
সুদান গিয়াছে- গেল আজ তার বিধাতার মহাদান!
'ফেরাউন' ডুবে না মরিতে হায় বিদায় লইল মুসা,
প্রাচী'র রাত্রি কাটিবে না কি গো, উদিবে না রাঙা ঊষা?

***********************

শুনিয়াছি, ছিল মমির মিসরে সম্রাট ফেরাউন,
জননীর কোলে সদ্য প্রসূত বাচ্চার নিত খুন!
শুনেছিল বাণী, তাহারী রাজ্যে তাহার রাজপথ দিয়া
অনাগত শিশু আসিছে তাহার মৃত্যু-বারতা নিয়া।
জীবন ভরিয়া করিল যে শিশু-জীবনের অপমান,
পরের মৃত্যু-আড়ালে দাঁড়ায়েসে-ই ভাবে, পেল প্রাণ!
জনমিল মুসা, রাজভয়ে মাতা শিশুরে ভাসায় জলে,
ভাসিয়া ভাসিয়া সোনার শিশু গো রাজারই ঘাটেতে চলে।
ভেসে এল শিশু রানীরই কোলে গ, বাড়ে শিশু দিনে দিনে
শত্রু তাহারি বুকে চ'ড়ে নাচে, ফেরাউন নাহি চিনে।
এল অনাগত তারি প্রাসাদের সদর দরজা দিয়া,
এখনো প্রহরী জাগে বিনিদ্র দশ দিক আগুলিয়া!
-রসিক খোদার খেলা,
তারি বেদনায় প্রকাশে রুদ্র যারে করে অবহেলা!

মুসারে আমরা দেখিনি, তোমায় দেখেছি মিসর-মুনি,
ফেরাউন মোরা দেখিনি, দেখেছি নিপীড়ন ফেরাউনী।
ছোটে অনন্ত সেনা-সামন্ত অনাগত কার ভয়ে,
দিকে দিকে খাড়া কারা-শৃঙ্খল, জল্লাদ ফাঁসি ল'য়ে।
আইন-খাতার পাতায় পাতায় মৃত্যুদন্ড লেখা,
নিজের মৃত্যু এড়াতে কেবলি নিজেরে করিছে একা!
সদ্যপ্রসুত প্রতি শিশুটিরে পিয়ায় অহর্নিশ
শিক্ষা দিক্ষা সভ্যতা ব'লি তিলে তিলে-মারা বিষ।
ইহারা কলির নব ফেরাঊন ভেল্কি খেলায় হাড়ে,
মানুষে ইহারা না মেরে প্রথমে মনুষ্যত্ব মারে!
মনুষ্যত্বহীন এই সব মানুষেরই মাঝে কবে
হে অতি-মানুষ, তুমি এসেছিলে জীবনের উৎসবে।
চারিদিকে জাগে মৃত্যুদন্ড রাহকারা প্রতিহারী,
এরই মাঝে এলে দিলেন আলোক নির্ভীক পথচারী।
রাজার প্রাচীর ছিল দাঁড়াইয়া তোমারে আড়াল করি'
আপনি আসিয়া দাঁড়াইলে তার সকল শূন্যে ভরি'!
পয়গম্বর মুসার তবু তো ছিল 'আষা' অদ্ভুত,
খোদ সে খোদার প্রেরিত- ডাকিলে আসিত স্বররগ-দূত!
প্যগম্বর ছিলে না ক'তুমি- পাওনি ঐশী বাণী,
স্বর্গের দূত ছিল না দসর, ছিলে না শস্ত্র-পাণি
আদেশে তোমার নীল দরিয়ার বক্ষে জাগেনি পথ,
তোমারে দেখিয়া করেনি সালাম কোনো গিরিপর্বত!
তবুও এশিয়া আফ্রিকা গাহে তোমার মহিমা গান,
মনুষত্ব্য থাকিলে মানুষ সর্বশক্তিমান!

দেখাইলে তুমি, পরাধীন জাতি হয় যদি ভয়হারা,
হোক নিরস্ত্র, অস্ত্রের রণে বিজয়ী হইবে তারা।
অসি দিয়া নয়, নির্ভীক করে মন দিয়া রণ জয়,
অস্ত্রে যুদ্ধে জয় করা সাজে- দেশ জয় নাহি হয়।
ভয়ের সাগর পাড়ি দিল যেই শির করিল না নীচু,
পশুর নখর দন্ত দেখিয়া হটিল না কভু পিছু,
মিথ্যাচারীর ভ্রুকুটি-শাসন নিষেধ রক্ত-আঁখি
না মানি- জাতির দক্ষিণ করে বা৬ধিল অভয় রাখী,
বন্ধন যারে বলিন্দ হ'য়ে নন্দন-ফুলহার,
না-ই হ'ল সে গো পয়গম্বর নবী দেব অবতার,
সর্বকালের সবদেশের সকল নর ও নারী
করে প্রতীক্ষা, গাহে বন্দনা, মাগিছে আশিস তারি!

*************************

'এই ভারতের মহামানবের সাগর-তীরে' হে ঋষি,
তেত্রিশ কোটি বলির ছাগল চরিতেছে দিবানিশি!
গোষ্ঠে গোষ্ঠে আত্নকলহ অজাযুদ্ধের মেলা,
এদের রুধিরে নিত্য রাঙিছে ভারত-সাগর-বেলা।
পশুরাজ যবে ঘাড় ভেঙে খায় একটারে ধরে আসি'
আরটা তখনো দিব্যি মোটায়ে হ'তেছে খোদার কাসি!
শুনে হাসি পায় ইহাদেরও নাকি আছে গো ধর্ম জাতি,
রাম-ছাগল আর ব্রহ্ম-ছাগল আরেক ছাগল পাতি!
মৃত্যু যখন ঘনায় এদের কশা'য়ের কল্যাণে,
তখনো ইহারা লাঙল উঁচায়ে এ উহারে গালি হানে।
ইহাদের শিশু শৃগালে মারিলে এরা সভা ক'রে কাঁদে,
অমৃতের বাণি শুনাতে এদের লজ্জায় নাহি বাধে!
নিজেদের নাই মনুষত্ব্য, জানি না কেমনে তারা
নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব, হায় রে শরম-হারা!
কবে আমাদের কোন সে পুরুষে ঘৃত খেয়েছিল কেহ
আমাদের হাতে তারি বাস পাই, আজো করি অবলেহ!
আশা ছিল, তবু তোমাদেরি মত অতি-মানুষেরে দেখি',
আমরা ভুলিব মোদের এ গ্লানি খাঁটি হবে যত মেকী!
তাই মিসরের নহে এ শোক এই দুর্দিন আজি,
এশিয়া আফ্রিকা দুই মহাভূমে বেদনা উঠেছে বাজি'!
অধীন ভারত তোমারে স্মরণ করিয়াছে শতবার,
তব হাতে ছিল জলদস্যুর ভারত-প্রবেশ-দ্বার।
হে 'বনি ইসরাইলের' দেশের অগ্রনায়ক বীর,
অঞ্জলি দিনু 'নীলের' সলিলে অশ্রু ভাগিরথীর!
সালাম করারও স্বাধীনতা নাই সোজা দুই হাত তুলি'
তব 'ফাতেহা'ইয় কি দিবে এ জাতি বিনা দু'টো বা৬ধা বুলি!
মলয়-শীতলা সুজলা এ দেশে-আশিস করিও খালি-
উড়ে আসে যেন তোমার দেশের মরুর দু'মুঠো বালি।

তোমার বিদায়ে দূর অতীতের কথা সেই মনে পড়ে,
মিসর হইতে বিদায় লইল মুসা যবে চিরতরে,
সম্ব্রমে স'রে পথ ক'রে দিল নীল দরিয়ার বারি,
পিছু পিছু চলে কাঁদিয়া কাঁদিয়া মিসরের নর-নারী।
সৈন্য-সম ছোটে ফেরাউন-সেনা ঝাঁপ দিয়া পড়ে স্রোতে,
মুসা হ'ল পার, ফেরাউন ফিরিল না নীল নদী হ'তে!
তোমার বিদায়ে করিব না শোক, হয়ত দেখিব কাল
তোমার পিছনে মরিছে ডুবিয়া ফেরাউন দজ্জাল!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #72

- কাজী নজরুল ইসলাম


নাম-হারা তুই পথিক-শিশু এলি অচিন দেশ পারায়ে।
কোন্‌ নামের আজ প’রলি কাঁকনম বাঁধনহারায় কোন্‌ কারা এ।।
আবার মনের মতন ক’রে
কোন্‌ নামে বল ডাক্‌ব তোরে!
পথ-ভোলা তুই এই সে ঘরে
ছিলি ওরে এলি ওরে
বারে বারে নাম হারায়ে।।

ওরে যাদু ওরে মাণিক, আঁধার ঘরের রতণ-মাণি!
ক্ষুধিত ঘর ভ’রলি এনে ছোট্ট হাতের একটু ননী।
আজ যে শুধু নিবিড় সুখে
কান্না-সায়র উথলে বুকে,
নতুন নামে ডাকতে তোকে
ওরে ও কে কন্ঠ র”খে’
উঠছে কেন মন ভারায়ে!
অস্ত হ’তে এলে পথিক উদয় পানে পা বাড়ায়ে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #73

- কাজী নজরুল ইসলাম


চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনি ঝিনি বাজে লো
খোঁপায় দোলে বুনো ফুলের কুঁড়ি
কালো ছোঁড়ার কাঁকাল ধরে নাচে মাতাল ছুঁড়ি লো
খোঁপায় দোলে বুনো ফুলের কুঁড়ি।

মহুয়া মদের নেশা পিয়ে, বুঁদ হয়েছে বৌয়ে-ঝিয়ে
চাঁদ ছুটছে মনকে নিয়ে যেন ডুরি ছেঁড়া ঘুড়ি লো।

বাজে নুপূর পাঁইজোড়, সারা গায়ে নাচের ঘোর
ওলো লেগেছে মন হল নেশায় বিভোর
ওই আকাশে চাঁদ হের মেঘের সাথে যেন করে খুন্‌সুড়ি লো।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #74

- কাজী নজরুল ইসলাম


হারিয়ে গেছ অন্ধকারে-পাইনি খুঁজে আর,
আজ্‌কে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার!
আজ্‌কে তোমার জন্মদিন-
স্মরণ-বেলায় নিদ্রাহীন
হাত্‌ড়ে ফিরি হারিয়ে-যাওয়ার অকূল অন্ধকার!
এই -সে হেথাই হারিয়ে গেছে কুড়িয়ে-পাওয়া হার!

শূন্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল,
কেন তুমি ফুটলে সেথা ব্যথার নীলোৎপল?
আঁধার দীঘির রাঙলে মুখ,
নিটোল ঢেউ-এর ভাঙলে বুক,-
কোন্‌ পূজারী নিল ছিঁড়ে? ছিন্ন তোমার দল
ঢেকেছে আজ কোন্‌ দেবতার কোন্‌ সে পাষাণ-তল?

অস্ত-খেয়ার হারামাণিক-বোঝাই-করা না’
আস্‌ছে নিতুই ফিরিয়ে দেওয়ার উদয়-পারের গাঁ
ঘাটে আমি রই ব’সে
আমার মাণিক কই গো সে?
পারাবারের ঢেউ-দোলানী হান্‌ছে বুকে ঘা!
আমি খুঁজি ভিড়ের মাঝে চেনা কমল-পা!

বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুম্‌রে ওঠে মন,
পেয়েছিলাম এম্‌নি হাওয়ায় তোমার পরশন।
তেম্‌নি আবার মহুয়া-মউ
মৌমাছিদের কৃষ্ণ-বউ
পান ক’রে ওই ঢুল্‌ছে নেশায়, দুল্‌ছে মহুল বন,
ফুল-সৌখিন্‌ দখিন হাওয়ায় কানন উচাটন!

প’ড়ছে মনে টগর চাঁপা বেল চামেলি যুঁই,
মধুপ দেখে যাদের শাখা আপ্‌নি যেত নুই।
হাস্‌তে তুমি দুলিয়ে ডাল,
গোলাপ হ’য়ে ফুটতো গাল
থর্‌কমলী আঁউরে যেত তপ্ত ও-গাল ছুঁই!
বকুল শাখা-ব্যকুল হ’ত টলমলাত ভুঁই!

চৈতী রাতের গাইত’ গজল বুলবুলিয়ার রব,
দুপুর বেলায় চবুতরায় কাঁদত কবুতর!
ভুঁই- তারকা সুন্দরী
সজনে ফুলের দল ঝরি’
থোপা থোপা লা ছড়াত দোলন-খোঁপার’ পর।
ঝাজাল হাওয়ায় বাজত উদাস মাছরাঙার স্বর!

পিয়ালবনায় পলাশ ফুলের গেলাস-ভরা মউ!
খেত বঁধুর জড়িয়ে গলা সাঁওতালিয়া বউ!
লুকিয়ে তুমি দেখতে তাই,
বলতে, ‘আমি অমনি চাই!
খোঁপায় দিতাম চাঁপা গুঁজে, ঠোঁটে দিতাম মউ!
হিজল শাখায় ডাকত পাখি “ বউ গো কথা কউ”

ডাকত ডাহুক জল- পায়রা নাচত ভরা বিল,
জোড়া ভুর” ওড়া যেন আসমানে গাঙচিল
হঠাৎ জলে রাখত্‌ে পা,
কাজলা দীঘির শিউরে গা-
কাঁটা দিয়ে উঠত মৃণাল ফুটত কমল-ঝিল!
ডাগর চোখে লাগত তোমার সাগর দীঘির নীল!

উদাস দুপুর কখন গেছে এখন বিকেল যায়,
ঘুম জড়ানো ঘুমতী নদীর ঘুমুর পরা পায়!
শঙ্খ বাজে মন্দিরে,
সন্ধ্যা আসে বন ঘিরে,
ঝাউ-এর শাখায় ভেজা আঁধার কে পিঁজেছে হায়!
মাঠের বাঁশী বন্‌-উদাসী ভীম্‌পলাশী গায়অ

বাউল আজি বাউল হ’ল আমরা তফাতে!
আম-মুকুলের গুঁজি-কাঠি দাও কি খোঁপাতে?
ডাবের শীতল জল দিয়ে
মুখ মাজ’কি আর প্রিয়ে?
প্রজাপতির ডাক-ঝরা সোনার টোপাতে
ভাঙা ভুর” দাও কি জোড়া রাতুল শোভাতে?

বউল ঝ’রে ফ’লেছ আজ থোলো থোলো আম,
রসের পীড়ায় টস্‌টসে বুক ঝুরছে গোপাবজাম!
কামরাঙারা রাঙল ফের
পীড়ন পেতে ঐ মুখের,
স্মরণ ক’রে চিবুক তোমার, বুকের তোমার ঠাম-
জামর”লে রস ফেটে পড়ে, হায়, কে দেবে দাম!

ক’রেছিলাম চাউনি চয়ন নয়ন হ’তে তোর,
ভেবেছিলুম গাঁথ্‌ব মালা পাইনে খুঁজে ডোর!
সেই চাহনি নীল-কমল
ভ’রল আমার মানস-জল,
কমল-কাঁটার ঘা লেগেছে মর্মমূলে মোর!
বক্ষে আমার দুলে আঁখির সাতনরী-হার লোর!

তরী আমার কোন্‌ কিনারায় পাইনে খুঁজে কুল,
স্মরণ-পারের গন্ধ পাঠায় কমলা নেবুর ফুল!
পাহাড়তলীর শালবনায়
বিষের মত নীল ঘনায়!
সাঁঝ প’রেছে ঐ দ্বিতীয়ার-চাঁদ-ইহুদী-দুল!
হায় গো, আমার ভিন্‌ গাঁয়ে আজ পথ হ’য়েছে ভুল!

কোথায় তুমি কোথায় আমি চৈতে দেখা সেই,
কেঁদে ফিরে যায় যে চৈত-তোমার দেখা নেই!
কন্ঠে কাঁদে একটি স্বর-
কোথায় তুমি বাঁধলে ঘর?
তেমনি ক’রে জাগছে কি রাত আমার আশাতেই?
কুড়িয়ে পাওয়া বেলায় খুঁজি হারিয়ে যাওয়া খেই!

পারাপারের ঘাটে প্রিয় রইনু বেঁধে না’,
এই তরীতে হয়ত তোমার প’ড়বে রাঙা পা!
আবার তোমার সুখ-ছোঁওয়ায়
আকুল দোলা লাগবে না’য়,
এক তরীতে যাব মোরা আর-না-হারা গাঁ
পারাপারের ঘাটে প্রিয় রইনু বেঁধে না’।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #75

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল।
মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান
ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল।
আমরা ছাত্রদল।।

মোদের আঁধার রাতে বাধার পথে
যাত্রা নাঙ্গা পায়,
আমরা শক্ত মাটী রক্তে রাঙাই
বিষম চলার ঘাস।
যুগে যুগে রক্তে মোদের
সিক্ত হ’ল পৃথ্বীতল।
আমরা ছাত্রদল।।

মোদের কক্ষচ্যুত-ধূমকেতু-- প্রায়
লক্ষ্যহারা প্রাণ
আমরা ভাগ্যদেবীর যজ্ঞবেদীর
নিত্য বলিদান।
যখন লক্ষ্মীদেবী স্বর্গে উঠেন
আমরা পশি নীল অতল!
আমরা ছাত্রদল।।

আমরা ধরি মৃত্যু রাজার
যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ,
মোদের মৃত্যু লেখে মোদের
জীবন--ইতিহাস!
হাসির দেশে আমরা আনি
সর্বনাশী চোখের জল
আমরা ছাত্রদল।।

সবাই যখন বুদ্ধি যোগায়
আমরা করি ভুল!
সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে সব,
আমরা ভাঙি কূল।
দারুণ-রাতে আমরা তরুণ
রক্তে করি পথ পিছল!
আমরা ছাত্রদল।।

মোদের চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল,
বক্ষে ভরা বাক্,
কন্ঠে মোদের কুন্ঠাবিহীন
নিত্য কালের ডাক।
আমরা তাজা খুনে লাল ক’রেছি
সরস্বতীর শ্বেত কমল।
আমরা ছাত্রদল।।

ঐ দারুণ উপপ্লবের দিনে
আমরা দানি শির,
মোদের মাঝে মুক্তি কাঁদে
বিংশ শতাব্দীর!
মোরা গৌরবেরি কান্না দিয়ে
ভ’রেছি মা’র শ্যাম-আঁচল।
আমরা ছাত্রদল।

আমরা রচি ভালোবাসার
আশার ভবিষ্যৎ,
মোদের স্বর্গ-পথের অভাস দেখায়
আকাশ-ছায়াপথ!
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
আমরা ছাত্রদল।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #76

- কাজী নজরুল ইসলাম


জনম জনম গেলো, আশা পথ চাহি,
মরু মুসাফির চলি, পার নাহি নাহি।
বরষও পরে বরষ, আসে যায় ফিরে,
পিপাসা মিটায়ে চলি, নয়নেরও তীরে,
জ্বালিয়া আলেয়া শিখা, নিরাশার মরিচীকা,
ডাকে মরু প্রাণনিকা, শত গীত গাহি।
জনম জনম গেলো, আশা পথ চাহি।
এ মরু ছিল গো কবে সাগরের বারি
স্বপনে হেরি গো তারে আজো মরুচারী
সেই সে সাগর তলে যে তরী ডুবিল জলে
সে তরী-সাথীরে খুঁজি মরুপথ বাহি


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #77

- কাজী নজরুল ইসলাম


জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল
স্বতঃ উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায় জাগো প্রাণ-চঞ্চল
ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর
ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির
জবাকুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর,
বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল।
ধর্ম বর্ণ জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ
তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান
সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো
সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো
তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ
আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ,
বিধাতার সম জাগো প্রেম প্রোজ্জ্বল।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #78

- কাজী নজরুল ইসলাম


কোরাস্:—
ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!
ফিরে চাও ওগো পুরবাসী,
সন্তান দ্বারে উপবাসী,
দাও মানবতা ভিক্ষা দাও!
জাগো গো, জাগো গো,
তন্দ্রা-অলস জাগো গো,
জাগো রে! জাগো রে!


মুক্ত করিতে বন্দিনী মা'য়
কোটি বীরসুত ঐ হেরো ধায়
মৃত্যু-তোরণ-দ্বার-পানে—
কার টানে?
দ্বার খোলো দ্বার খোলো!
একবার ভুলে ফিরিয়া চাও।

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


জননী আমার ফিরিয়া চাও!
ভাইরা আমার ফিরিয়া চাও!
চাই মানবতা, তাই দ্বারে
কর হানি মা গো বারেবারে—
দাও মানবতা ভিক্ষা দাও!
পুরুষ-সিংহ জাগো রে!
সত্যমানব জাগো রে।
বাধা-বন্ধন-ভয়-হারা হও
সত্য-মুক্তি-মন্ত্র গাও!

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


লক্ষ্য যাদের উৎপীড়ন আর অত্যাচার,
নর-নারায়ণে হানে পদাঘাত
জেনেছে সত্য-হত্যা সার।
অত্যাচার! অত্যাচার!!
ত্রিশ কোটি নর-আত্মার যারা অপমান হেলা
করেছে রে
শৃঙ্খল গলে দিয়েছে মা'র—
সেই আজ ভগবান তোমার!
অত্যাচার! অত্যাচার!!
ছি-ছি-ছি-ছি-ছি-ছি-নাই কি লাজ—
নাই কি আত্মসম্মান ওরে নাই জাগ্রত
ভগবান কি রে
আমাদেরো এই বক্ষোমাঝ?
অপমান বড় অপমান ভাই
মিথ্যার যদি মহিমা গাও!

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...

আল্লায় ওরে হকতা'লায়
পায়ে ঠেলে যারা অবহেলায়,
আজাদ-মুক্ত আত্মারে যারা শিখায়ে ভীরুতা
করেছে দাস—
সেই আজ ভগবান তোমার!
সেই আজ ভগবান তোমার!
সর্বনাশ! সর্বনাশ!
ছি-ছি নির্জীব পুরবাসী আর খুলো না দ্বার!
জননী গো! জননী গো!
কার তরে জ্বালো উৎসব-দীপ?
দীপ নেবাও! দীপ নেবাও!!
মঙ্গল-ঘট ভেঙে ফেলো,
সব গেল মা গো সব গেল!
অন্ধকার! অন্ধকার!
ঢাকুক এ মুখ অন্ধকার!
দীপ নেবাও! দীপ নেবাও।
কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


ছি ছি ছি ছি
এ কি দেখি
গাহিস তাদেরি বন্দনা-গান,
দাস সম নিস হাত পেতে দান!
ছি-ছি-ছি ছি-ছি-ছি
ওরে তরুণ ওরে অরুণ!
নরসুত তুমি দাসত্বের এ ঘৃণ্য চিহ্ন
মুছিয়া দাও!
ভাঙিয়া দাও,
এ-কারা এ-বেড়ি ভাঙিয়া দাও!

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


পরাধীন বলে নাই তোমাদের
সত্য-তেজের নিষ্ঠা কি!
অপমান সয়ে মুখ পেতে নেবে বিষ্ঠা ছি?
মরি লাজে, লাজে মরি!
এক হাতে তোরে 'পয়জার' মারে
আর হাতে ক্ষীর সর ধরি!
অপমান সে যে অপমান!
জাগো জাগো ওরে হতমান!
কেটে ফেলো লোভী লুব্ধ রসনা,
আঁধারে এ হীন মুখ লুকাও!

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


ঘরের বাহির হয়ো না আর,
ঝেড়ে ফেলো হীন বোঝার ভার,
কাপুরুষ হীন মানবের মুখ
ঢাকুক লজ্জা অন্ধকার।
পরিহাস ভাই পরিহাস সে যে,
পরাজিতে দিতে মনোব্যথা—যদি
জয়ী আসে রাজ-রাজ সেজে।
পরিহাস এ যে নির্দয় পরিহাস!
ওরে কোথা যাস
বল কোথা যাস ছি ছি
পরিয়া ভীরুর দীন বাস?
অপমান এত সহিবার আগে
হে ক্লীব, হে জড়, মরিয়া যাও!

কোরাস্:— ভিক্ষা দাও...


পুরুষসিংহ জাগো রে!
নির্ভীক বীর জাগো রে!
দীপ জ্বালি কেন আপনারি হীন কালো অন্তর
কালামুখ হেন হেসে দেখাও!
নির্লজ্জ রে ফিরিয়া চাও!
আপনার পানে ফিরিয়া চাও!
অন্ধকার! অন্ধকার!
নিশ্বাস আজি বন্ধ মা'র
অপমানে নির্মম লাজে,
তাই দিকে দিকে ক্রন্দন বাজে—
দীপ নেবাও! দীপ নেবাও!
আপনার পানে ফিরিয়া চাও!

কোরাস্‌:— ভিক্ষা দাও...


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #79

- কাজী নজরুল ইসলাম


ভোর হল, ওঠ জাগো মুসাফির, আল্লা - রাসুল বোল
গাফলিয়াতি ভোল রে অলস, আয়েশ আরাম ভোল।।

এই দুনিয়ার সরাইখানায়
(তোর) জনম গেল ঘুমিয়ে হায়!
ওঠ রে সুখশয্যা ছেড়ে, মায়ার বাঁধন খোল।।

দিন ফুরিয়ে এল যে রে দিনে দিনে তর
দিনের কাজে অবহেলা করলি জীবনভোর।।

যে দিন আজো আছে বাকী
খোদারে তুই দিসনে ফাঁকি
আখেরে পার হবি যদি পুলসিরাতের পোল।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #80

- কাজী নজরুল ইসলাম


গাহি তাহাদের গান-
ধরণীর হাতে দিল যারা আনি' ফসলের ফরমান।
শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে
ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভ'রে ফুলে-ফলে!
বন্য শ্বাপদ-সঙ্কুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা
যাদের শাসলে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহারা।
যারা বর্বর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে
বনের ব্যাঘ্র ময়ূর সিংহ বিবরের ফণী ল'য়ে।
এল দুর্জয় গতি-বেগ-সম যারা যাযাবর-শিশু
-তারাই গাহিল নব প্রেম-গান ধরণী-মেরীর যিশু-
যাহাদের চলা লেগে
উল্কার মত ঘুরিছে ধরণী শূন্যে অমিত বেগে!

খেয়াল-খুশীতে কাটি' অরণ্য রচিয়া অমরাবতী
যাহারা করিল ধ্বংস সাধপ্ন পুনঃ চঞ্চলমতি,
জীবন-আবেগে রুধিতে না পারি' যারা উদ্ধত-শির
লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়, গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।
নবীন জগৎ সন্ধানে যারা ছুটে মেরু অভিযানে,
পক্ষ বাঁধিয়া উড়িয়া চলেছে যাহারা ঊর্ধ্বপানে!
তবুও থামে না যৌবন বেগ, জীবনের উল্লাসে
চ'লেছে চন্দ্র-মঙ্গল-গ্রহে স্বর্গে অসীমাকাশে।
যারা জীবনের পসরা বহিয়া মৃত্যুর দ্বারে দ্বারে
করিতেছে ফিরি, ভীম রণভূমে প্রান বাজি রেখে হারে।
আমি-মরু-কবি-গাহি সেই বেদে বেদুঈনদের গান,
যুগে যুগে যারা করে অকারণ বিপ্লব-অভিযান।
জীবনের আতিশয্যে যাহারা দারুন উগ্রসুখে
সাধ করে নিল গরল-পিয়ালা, বর্শা হানিল বুকে!
আষাঢ়ের গিরি-নিঃস্রাব-সম কোনো বাধা মানিল না,
বর্বর বলি' যাহাদের গালি পাড়িল ক্ষুদ্রমনা,
কূপ-মন্ডুক 'অসংযমী'র আখ্যা দিয়াছে যারে,
তারি তরে ভাই গান রচে' যাই, বন্দনা করি তারে।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #81

- কাজী নজরুল ইসলাম


ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-
ঝিঙে ফুল।

গুল্মে পর্ণ
লতিকার কর্ণে
ঢল ঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল।

পাতার দেশের পাখী বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি' জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
ক'রে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।

প্রজাপতি ডেকে যায়-
'বোঁটা ছিঁড়ে চ'লে আয়।'
আসমানের তারা চায়-
'চ'লে আয় এ অকূল!'
ঝিঙে ফুল।।

তুমি বল-'আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মায়,
চাই না ও অলকায়-
ভালো এই পথ-ভুল।'
ঝিঙে ফুল।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #82

- কাজী নজরুল ইসলাম


[কীর্তন]

(আমি) চাইনে হতে ভ্যাবাগঙ্গারাম
ও দাদা শ্যাম!
তাই গান গাই আর যাই নেচে যাই
ঝম্‌ঝমা্‌ঝম্ অবিশ্রাম ॥

আমি সাইক্লোন আর তুফান
আমি দামোদরের বান
খোশখেয়ালে উড়াই ঢাকা, ডুবাই বর্ধমান।
আর শিবঠাকুরকে কাঠি করে বাজাই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-ড্রাম॥


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #83

- কাজী নজরুল ইসলাম


তরুণ প্রেমিক, প্রণয় বেদন
জানাও জানাও বে-দিল প্রিয়ায়
ওগো বিজয়ী, নিখিল হূদয়
কর কর জয় মোহন মায়ায়।

নহে ও এক হিয়ার সমান
হাজার কাবা হাজার মস্‌জিদ
কি হবে তোর কাবার খোঁজে
আশয় খোঁজ তোর হূদয় ছায়ায়।

প্রেমের আলোয় যে দিল্‌ রোশন
যেথায় থাকুক সমান তাহার
খুদার মস্‌জিদ মুরত মন্দির
ইশাই দেউল ইহুদখানায়।

অমর তার নাম প্রেমের খাতায়
জ্যোতির লেখায় রবে লেখা
দোজখের ভয় করে না সে
থাকে না সে বেহেস্তের আশায়।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #84

- কাজী নজরুল ইসলাম


তিলক দিলে কি শ্যাম ত্রিলোক ভুলাতে?
কে দিল বনমালী বনমালা গলাতে?

আঁখি যেন ঢলঢল আধফোটা শতদল
কে শিখাল ও চাহনি গোপিনী ছলিতে?


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #85

- কাজী নজরুল ইসলাম


তুমি আমার সকালবেলার সুর
বিদায় আলোয় উদাস করা অশ্রুভারাতুর।

ভোরের তারার মতো তোমার সজল চাওয়ায়
ভালোবাসা চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
রাত্রিশেষের চাঁদ তুমি গো, বিদায়বিধুর।

তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল
শিশির নাওয়া শুভ্রশুচি পূজারিণীতুল।

অরুণ তুমি তরুণ তুমি করুণ তারও চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ লোকের মেয়ে
তুমি ইন্দ্রসভার মৌনবীণা নীরবনিঠুর।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #86

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি;
ওগো আমার নবী প্রিয় আল আরাবী,
তেমনি করে ডাকি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
ডেকেছিল নিরবধি,
হে মোর মরুচারী নবুয়তধারী,
তেমনি করে কাঁদি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন মদিনা আর হেরা পাহাড়
জেগেছিল আশায় তোমার
হে হযরত মম, হে মোর প্রিয়তম,
তেমনি করে জাগি যদি আসবে নাকি তুমি।।

মজলুমেরা কাবা ঘরে
কেঁদেছিল যেমন করে,
হে আমিনা- লালা, হে মোর কামলীওয়ালা,
তেমনি করে চাহি যদি আসবে নাকি তুমি।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #87

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

ক্ষীণ আঁখিদীপ জ্বালি বাতায়নে জাগি একা
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথরেখা
সহসা দখিনবায়ে চাঁপাবনে জাগে সাড়া।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

তব স্মৃতি যদি ভুলি ক্ষণতরে আনকাজে
কে যেন কাঁদিয়া ওঠে আমার বুকের মাঝে।

বৈশাখী ঝড়ে রাতে চমকিয়া উঠি জেগে
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে
ঝড় চলে যায় কেঁদে, ঢালিয়া শ্রাবণধারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #88

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোমারে পড়িছে মনে
আজি নীপ-বালিকার ভীরু-শিহরণে,
যুথিকার অশ্রুসিক্ত ছলছল মুখে
কেতকী-বধূর অবগুন্ঠিত ও বুকে-
তোমারে পড়িছে মনে।
হয়তো তেমনি আজি দূর বাতায়নে
ঝিলিমিলি-তলে
ম্লান লুলিত অঞ্ছলে
চাহিয়া বসিয়া আছ একা,
বারে বারে মুছে যায় আঁখি-জল-লেখা।
বারে বারে নিভে যায় শিয়রেরে বাতি,
তুমি জাগ, জাগে সাথে বরষার রাতি।

সিক্ত-পক্ষ পাখী
তোমার চাঁপার ডালে বসিয়া একাকী
হয়ত তেমনি করি, ডাকিছ সাথীরে,
তুমি চাহি' আছ শুধু দূর শৈল-শিরে ।।
তোমার আঁখির ঘন নীলাঞ্জন ছায়া
গগনে গগনে আজ ধরিয়াছে কায়া । ...

আজি হেথা রচি' নব নীপ-মালা--
স্মরণ পারের প্রিয়া, একান্তে নিরালা
অকারণে !-জানি আমি জানি
তোমারে পাব না আমি। এই গান এই মালাখানি
রহিবে তাদেরি কন্ঠে- যাহাদেরে কভু
চাহি নাই, কুসুমে কাঁটার মত জড়ায়ে রহিল যারা তবু।
বহে আজি দিশাহারা শ্রাবণের অশান্ত পবন,
তারি মত ছুটে ফেরে দিকে দিকে উচাটন মন,
খুঁজে যায় মোর গীত-সুর
কোথা কোন্‌ বাতায়নে বসি' তুমি বিরহ-বিধুর।
তোমার গগনে নেভে বারে বারে বিজলীর দীপ,
আমার অঙ্গনে হেথা বিকশিয়া ঝরে যায় নীপ।
তোমার গগনে ঝরে ধারা অবিরল,
আমার নয়নে হেথা জল নাই, বুকে ব্যথা করে টলমল।

আমার বেদনা আজি রূপ ধরি' শত গীত-সুরে
নিখিল বিরহী-কন্ঠে--বিরহিণী--তব তরে ঝুরে!
এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!
তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #89

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোরা সব জয়ধ্বনি কর
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল
সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক ভেনে ভাঙলো আগল
মৃত্যুগহন অন্ধকুপে মহাকালের চন্ডরূপে ধূম্রধূপে
বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়
বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে কপোলতলে
বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর
হাঁকে ঐ জয় প্রলয়ংকর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

মাভৈঃ মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে
এবার মহানিশার শেষে আসবে ঊষা অরুণ হেসে তরুণ বেশে
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশুচাঁদের কর
আলো তার ভরবে এবার ঘর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #90

- কাজী নজরুল ইসলাম


হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,
অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!

বেদনা-হলুদ-বৃন্ত কামনা আমার
শেফালির মত শুভ্র সুরভি-বিথার
বিকশি’ উঠিতে চাহে, তুমি হে নির্মম,
দলবৃন্ত ভাঙ শাখা কাঠুরিয়া সম!
আশ্বিনের প্রভাতের মত ছলছল
ক’রে ওঠে সারা হিয়া, শিশির সজল

টলটল ধরণীর মত করুণায়!
তুমি রবি, তব তাপে শুকাইয়া যায়
করুণা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হ’য়ে উঠি
ধরণীর ছায়াঞ্চলে! স্বপ্ন যায় টুটি’
সুন্দরের, কল্যাণের। তরল গরল
কন্ঠে ঢালি’ তুমি বল, ‘অমৃতে কি ফল?
জ্বালা নাই, নেশা নাই. নাই উন্মাদনা,-
রে দুর্বল, অমরার অমৃত-সাধনা
এ দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে,
তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।
কাঁটা-কুঞ্জে বসি’ তুই গাঁথিবি মালিকা,
দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টিকা!….
গাহি গান, গাঁথি মালা, কন্ঠ করে জ্বালা,
দংশিল সর্বাঙ্গে মোর নাগ-নাগবালা!….

ভিক্ষা-ঝুলি নিয়া ফের’ দ্বারে দ্বারে ঋষি
ক্ষমাহীন হে দুর্বাসা! যাপিতেছে নিশি
সুখে রব-বধূ যথা-সেখানে কখন,
হে কঠোর-কন্ঠ, গিয়া ডাক-‘মূঢ়, শোন্‌,
ধরণী বিলাস-কুঞ্জ নহে নহে কারো,
অভাব বিরহ আছে, আছে দুঃখ আরো,
আছে কাঁটা শয্যাতলে বাহুতে প্রিয়ার,
তাই এবে কর্‌ ভোগ!-পড়ে হাহাকার
নিমেষে সে সুখ-স্বর্গে, নিবে যায় বাতি,
কাটিতে চাহে না যেন আর কাল-রাতি!
চল-পথে অনশন-ক্লিষ্ট ক্ষীণ তনু,
কী দেখি’ বাঁকিয়া ওঠে সহসা ভ্রূ-ধনু,
দু’নয়ন ভরি’ রুদ্র হানো অগ্নি-বাণ,
আসে রাজ্যে মহামারী দুর্ভিক্ষ তুফান,
প্রমোদ-কানন পুড়ে, উড়ে অট্টালিকা,-
তোমার আইনে শুধু মৃত্যু-দন্ড লিখা!

বিনয়ের ব্যভিচার নাহি তব পাশ,
তুমি চান নগ্নতার উলঙ্গ প্রকাশ।
সঙ্কোচ শরম বলি’ জান না ক’ কিছু,
উন্নত করিছ শির যার মাথা নীচু।
মৃত্যু-পথ-যাত্রীদল তোমার ইঙ্গিতে
গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে!
নিত্য অভাবের কুন্ড জ্বালাইয়া বুকে
সাধিতেছ মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে!
লক্ষ্মীর কিরীটি ধরি, ফেলিতেছ টানি’
ধূলিতলে। বীণা-তারে করাঘাত হানি’
সারদার, কী সুর বাজাতে চাহ গুণী?
যত সুর আর্তনাদ হ’য়ে ওঠে শুনি!
প্রভাতে উঠিয়া কালি শুনিনু, সানাই
বাজিছে করুণ সুরে! যেন আসে নাই
আজো কা’রা ঘরে ফিরে! কাঁদিয়া কাঁদিয়া
ডাকিছে তাদেরে যেন ঘরে ‘সানাইয়া’!
বধূদের প্রাণ আজ সানা’য়ের সুরে
ভেসে যায় যথা আজ প্রিয়তম দূরে
আসি আসি করিতেছে! সখী বলে, ‘বল্‌
মুছিলি কেন লা আঁখি, মুছিলি কাজল?….

শুনিতেছি আজো আমি প্রাতে উঠিয়াই
‘ আয় আয়’ কাঁদিতেছে তেমনি সানাই।
ম্লানমুখী শেফালিকা পড়িতেছে ঝরি’
বিধবার হাসি সম-স্নিগ্ধ গন্ধে ভরি’!
নেচে ফেরে প্রজাপতি চঞ্চল পাখায়
দুরন্ত নেশায় আজি, পুষ্প-প্রগল্‌ভায়
চুম্বনে বিবশ করি’! ভোমোরার পাখা
পরাগে হলুদ আজি, অঙ্গে মধু মাখা।

উছলি’ উঠিছে যেন দিকে দিকে প্রাণ!
আপনার অগোচরে গেয়ে উঠি গান
আগমনী আনন্দের! অকারণে আঁখি
পু’রে আসে অশ্রু-জলে! মিলনের রাখী
কে যেন বাঁধিয়া দেয় ধরণীর সাথে!
পুষ্পঞ্জলি ভরি’ দু’টি মাটি মাখা হাতে
ধরণী এগিয়ে আসে, দেয় উপহার।
ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার!-
সহসা চমকি’ উঠি! হায় মোর শিশু
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে, খাওনি ক’ কিছু
কালি হ’তে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর,
কাঁদ’ মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর!

পারি নাই বাছা মোর, হে প্রিয় আমার,
দুই বিন্দু দুগ্ধ দিতে!-মোর অধিকার
আনন্দের নাহি নাহি! দারিদ্র্য অসহ
পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ
আমার দুয়ার ধরি! কে বাজাবে বাঁশি?
কোথা পাব আনন্দিত সুন্দরের হাসি?
কোথা পাব পুষ্পাসব?-ধুতুরা-গেলাস
ভরিয়া করেছি পান নয়ন-নির্যাস!….
আজো শুনি আগমনী গাহিছে সানাই,
ও যেন কাঁদিছে শুধু-নাই কিছু নাই!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #91

- কাজী নজরুল ইসলাম


বল রে বন্য হিংস্র বীর,
দুঃশাসনের চাই রুধির।
চাই রুধির রক্ত চাই,
ঘোষো দিকে দিকে এই কথাই
দুঃশাসনের রক্ত চাই!
দুঃশাসনের রক্ত চাই!!

অত্যাচারী সে দুঃশাসন
চাই খুন তার চাই শাসন,
হাঁটু গেড়ে তার বুকে বসি
ঘাড় ভেঙে তার খুন শোষি।
আয় ভীম আয় হিংস্র বীর,
কর অ-কণ্ঠ পান রুধির।
ওরে এ যে সেই দুঃশাসন
দিল শত বীরে নির্বাসন,
কচি শিশু বেঁধে বেত্রাঘাত
করেছে রে এই ক্রূর স্যাঙাত।
মা-বোনেদের হরেছে লাজ
দিনের আলোকে এই পিশাচ।
বুক ফেটে চোখে জল আসে,
তারে ক্ষমা করা? ভীরুতা সে!
হিংসাশী মোরা মাংসাশী,
ভণ্ডামি ভালবাসাবাসি!
শত্রুরে পেলে নিকটে ভাই
কাঁচা কলিজাটা চিবিয়ে খাই!
মারি লাথি তার মড়া মুখে,
তাতা-থৈ নাচি ভীম সুখে।

নহি মোরা ভীরু সংসারী,
বাঁধি না আমরা ঘরবাড়ি।
দিয়াছি তোদের ঘরের সুখ,
আঘাতের তরে মোদের বুক।
যাহাদের তরে মোরা চাঁড়াল
তাহারাই আজি পাড়িছে গা’ল!
তাহাদের তরে সন্ধ্যা-দীপ.
আমাদের আন্দামান-দ্বীপ!
তাহাদের তরে প্রিয়ার বুক
আমাদের তরে ভীম চাবুক।
তাহাদের ভালবাসাবাসি,
আমাদের তরে নীল ফাঁসি।
বরিছে তাদের বাজিয়া শাঁখ,
মোদের মরণে নিনাদে ঢাক।

জীবনের ভোগ শুধু ওদের,
তরুণ বয়সে মরা মোদের।
কার তরে ওরে কার তরে
সৈনিক মোরা পচি মরে?
কার তরে পশু সেজেছি আজ,
অকাতরে বুক পেতে নি বাজ।
ধর্মাধর্ম কেন যে নাই
আমাদের, তাহা কে বোঝে ভাই?
কেন বিদ্রোহী সব-কিছুর?
সব মায়া কেন করেছি দূর?
কারে ক’স মন সে-ব্যথা তোর?
যার তরে চুরি বলে চোর।
যার তরে মাখি গায়ে কাদা,
সেই হয় এসে পথে বাধা।

ভয় নাই গৃহী! কোরো না ভয়,
সুখ আমাদের লক্ষ্য নয়।
বিরূপাক্ষ যে মোরা ধাতার,
আমাদের তরে ক্লেশ-পাথার।
কাড়ি না তোদের অন্ন-গ্রাস,
তোমাদের ঘরে হানি না ত্রাস;
জালিমের মোরা ফেলাই লাশ,
রাজ-রাজড়ার সর্বনাশ!
ধর্ম-চিন্তা মোদের নয়,
আমাদের নাই মৃত্যু-ভয়!
মৃত্যুকে ভয় করে যারা,
ধর্মধ্বজ হোক তারা।
শুধু মানবের শুভ লাগি
সৈনিক যত দুখভাগী।
ধার্মিক! দোষ নিয়ো না তার,
কোরবানির১ সে, নয় রোজার২ !
তোমাদের তরে মুক্ত দেশ,
মোদের প্রাপ্য তোদের শ্লেষ।

জানি জানি ঐ রণাঙ্গন
হবে যবে মোর মৃৎ-কাফন৩
ফেলিবে কি ছোট একটি শ্বাস?
তিক্ত হবে কি মুখের গ্রাস?
কিছুকাল পরে হাড্‌ডি মোর
পিষে যাবি ভাই জুতিতে তোর!
এই যারা আজ ধর্মহীন
চিনে শুধু খুন আর সঙিন;
তাহাদের মনে পড়িবে কার
ঘরে পড়ে যারা খেয়েছে মার?
ঘরে বসে নিস স্বর্গ-লোক,
মেরে মরে তারে দিস দোজখ৪!
ভয়ে-ভীরু ওরে ধর্মবীর!
আমরা হিংস্র চাই রুধির!
শহতান মোরা? আচ্ছা, তাই।
আমাদের পথে এসো না ভাই।

মোদের রক্ত-রুধির-রথ,
মোদের জাহান্নামের পথ,
ছেড়ে দেও ভাই জ্ঞান-প্রবীণ,
আমরা কাফের ধর্মহীন!
এর চেয়ে বেশি কি দেবে গা’ল?
আমরা পিশাচ খুন-মাতাল।
চালাও তোমার ধর্ম-রথ,
মোদের কাঁটার রক্ত-পথ।
আমরা বলিব সর্বদাই
দুঃশাসনের রক্ত চাই!!

চাই না ধর্ম, চাই না কাম,
চাই না মোক্ষ, সব হারাম
আমাদের কাছে: শুধু হালাল৫
দুশমন-খুন লাল-সে-লাল॥

——————————-
১ কোরবানি– বলি।
২. রোজা– উপবাস
৩. মৃৎ-কাফন –লাশ যেখানে থাকে।
৪. দোজখ –নরক
৫. হালাল –পবিত্র


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #92

- কাজী নজরুল ইসলাম


বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন্‌ সুদূরের বিজন পুরে
ডাক দিয়ে যাও ব্যথার সুরে?
আমার অনেক দুখের পথের বাসা বারে বারে ঝড়ে উড়ে,
ঘর-ছাড়া তাই বেড়াই ঘুরে।।
তোমার বাঁশীর উদাস কাঁদন
শিথিল করে সকল বাঁধন
কাজ হ’ল তাই পথিক সাধন,
খুঁজে ফেরা পথ-বঁধরে,
ঘুরে’ ঘুরে’ দূরে দূরে।।

হে মোর প্রিয়! তোমার বুকে একটুকুতেই হিংসা জাগে,
তাই তো পথে হয় না থামা-তোমার ব্যথা বক্ষে লাগে!

বাঁধতে বাসা পথের পাশে
তোমার চোখে কান্না আসে
উত্তরী বায় ভেজা ঘাসে
শ্বাস ওঠে আর নয়ন বুঝে,
বন্ধু, তোমার সুরে সুরে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #93

- কাজী নজরুল ইসলাম


আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী
মা’র কতদিন দ্বীপান্তর?
পুণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল
ক্রন্দন-‘দেড় শত বছর।’….
সপ্ত সিন্ধু তের নদী পার
দ্বীপান্তরের আন্দামান,
রূপের কমল রূপার কাঠির
কঠিন স্পর্শে যেখানে ম্লান,
শতদল যেথা শতধা ভিন্ন
শস্ত্র-পাণির অস্ত্র-ঘাস,
যস্ত্রী যেখানে সাস্ত্রী বসায়ে
বীনার তন্ত্রী কাটিছে হায়,
সেখানে হ’তে কি বেতার-সেতার
এসেছে মুক্ত-বন্ধ সুরা?
মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী?
ধ্বংস হ’ল কি বক্ষ-পুর?
যক্ষপুরীর রৌপ্য-পঙ্কে
ফুটিল কি তবে রূপ-কমল?
কামান গোলার সীসা-স্তুপে কি
উঠেছে বাণীর শিশ-মহল?
শান্তি-শুচিতে শুভ্র হ’ল কি
রক্ত সোঁদাল খুন-খারাব?
তবে এ কিসের আর্ত আরতি,
কিসের তরে এ শঙ্কারাব?…

সাত সমুদ্র তের নদী পার
দ্বীপান্তরের আন্দামান,
বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন,
বন্দী সত্য ভানিছে ধান,
জীবন চুয়ানো সেই ঘানি হ’তে
আরতির তেল এনেছ কি?
হোমানল হ’তে বাণীর রক্ষী
বীর ছেলেদের চর্বি ঘি?
হায় শৌখিন পূজারী, বৃথাই
দেবীর শঙ্খে দিতেছ ফুঁ,
পুণ্য বেদীর শূন্য ভেদিয়া
ক্রন্দন উঠিতেছে শুধু!
পূজারী, কাহারে দাও অঞ্জলি?
মুক্ত ভারতী ভারতে কই?
আইন যেখানে ন্যায়ের শাসক,
সত্য বলিলে বন্দী হই,
অত্যাচারিত হইয়া যেখানে
বলিতে পারি না অত্যাচার,
যথা বন্দিনী সীতা সম বাণী
সহিছে বিচার-চেড়ীর মার
বাণীর মুক্ত শতদল যথা
আখ্যা লভিল বিদ্রোহী,
পূজারী, সেখানে এসেছ কি তুমি
বাণী পূজা-উপচার বহি?
সিংহেরে ভয়ে রাখে পিঞ্জরে,
ব্যাঘ্রেরে হানে অগ্নি-শেল,
কে জানিত কালে বীণা খাবে গুলি,
বাণীর কমল খাটিবে জেল!
তবে কি বিধির বেতার-মন্ত্র
বেজেছে বাণীর সেতারে আজ,
পদ্মে রেখেছে চরণ-পদ্ম
যুগান্তরের ধর্মরাজ?
তবে তাই হোক। ঢাক অঞ্জলি,
বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ!
দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে
যুগান্তরের ঘুর্ণিপাক!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #94

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত সাতশো নরক-জ্বালা জলে মম ললাটে,
মম ধূম-কুণ্ডুলি করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘর ঘোলাটে!
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ,
আমি স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি-পাপের অনুতাপ-তাপ-হাহাকার–
আর মর্তে সাহারা-গোবি-ছাপ,
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ!

আমি সর্বনাশের ঝাণ্ডা উড়ায়ে বোঁও বোঁও ঘুরি শূন্যে,
আমি বিষ-ধূম-বাণ হানি একা ঘিরে ভগবান-অভিমুন্যে।
শোঁও শন-নন-নন-শন-নন-নন শাঁই শাঁই,
ঘুর্ পাক্ খাই, ধাই পাঁই পাঁই
মম পুচ্ছে জড়ায়ে সৃষ্টি;
করি উল্কা-অশনি-বৃষ্টি,–
আমি একটা বিশ্ব গ্রাসিয়াছি, পারি গ্রাসিতে এখনো ত্রিশটি।
আমি অপঘাত দুর্দৈব রে আমি সৃষ্টির অনাসৃষ্টি!

আমি আপনার বিষ-জ্বালা-মদ-পিয়া মোচড় খাইয়া খাইয়া
জোর বুঁদ হয়ে আমি চলেছি ধাইয়া ভাইয়া!
শুনি মম বিষাক্ত 'রিরিরিরি'-নাদ
শোনায় দ্বিরেফ-গুঞ্জন সম বিশ্ব-ঘোরার প্রণব-নিনাদ!
ধূর্জটি-শিখ করাল পুচ্ছে
দশ অবতারে বেঁধে ঝ্যাঁটা করে ঘুরাই উচ্চে, ঘুরাই–
আমি অগ্নি-কেতন উড়াই!–
আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!

ঐ বামন বিধি সে আমারে ধরিতে বাড়ায়েছিল রে হাত
মম অগ্নি-দাহনে জ্বলে পুড়ে তাই ঠুঁটো সে জগন্নাথ!
আমি জানি জানি ঐ স্রষ্টার ফাঁকি, সৃষ্টির ঐ চাতুরী,
তাই বিধি ও নিয়মে লাথি মেরে, ঠুকি বিধাতার বুকে হাতুড়ি।
আমি জানি জানি ঐ ভুয়ো ঈশ্বর দিয়ে যা হয়নি হবে তাও!
তাই বিপ্লব আনি বিদ্রোহ করি, নেচে নেচে দিই গোঁফে তাও!
তোর নিযুত নরকে ফুঁ দিয়ে নিবাই, মৃত্যুর মুখে থুথু দি!
আর যে যত রাগে রে তারে তত কাল্-আগুনের কাতুকুতু দি।
মম তূরীয় লোকের তির্যক্ গতি তূর্য গাজন বাজায়
মম বিষ নিশ্বাসে মারীভয় হানে অরাজক যত রাজায়!

কচি শিশু-রসনায় ধানি-লঙ্কার পোড়া ঝাল
আর বন্ধ কারায় গন্ধক ধোঁয়া, এসিড, পটাশ, মোন্‌ছাল,
আর কাঁচা কলিজায় পচা ঘা'র সম সৃষ্টিরে আমি দাহ করি
আর স্রষ্টারে আমি চুষে খাই!
পেলে বাহান্ন-শও জাহান্নমেও আধা চুমুকে সে শুষে যাই!

আমি যুগে যুগে আসি আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু–
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
আমি শি শি শি প্রলয়-শিশ্ দিয়ে ঘুরি কৃতঘ্নী ঐ বিশ্বমাতার শোকাগ্নি,
আমি ত্রিভুবন তার পোড়ায়ে মারিয়া আমিই করিব মুখাগ্নি!
তাই আমি ঘোর তিক্ত সুখে রে, একপাক ঘুরে বোঁও করে ফের দু'পাক নি!
কৃতঘ্নী আমি কৃতঘ্নী ঐ বিশ্বমাতার শোকাগ্নি!

পঞ্জর মম খর্পরে জ্বলে নিদারুণ যেই বৈশ্বানর–
শোন্ রে মর, শোন্ অমর!–
সে যে তোদের ঐ বিশ্বপিতার চিতা!
এ চিতাগ্নিতে জগদীশ্বর পুড়ে ছাই হবে, হে সৃষ্টি জানো কি তা?
কি বলো? কি বলো? ফের বলো ভাই আমি শয়তান-মিতা!
হো হো ভগবানে আমি পোড়াব বলিয়া জ্বালায়েছি বুকে চিতা!
ছোট শন শন শন ঘর ঘর সাঁই সাঁই!
ছোট পাঁই পাঁই!
তুই অভিশাপ তুই শয়তান তোর অনন্তকাল পরমাই!
ওরে ভয় নাই তোর মার নাই!!
তুই প্রলয়ঙ্কর ধূমকেতু,
তুই উগ্র ক্ষিপ্ত তেজ-মরীচিকা ন'স্ অমরার ঘুম-সেতু
তুই ভৈরব ভয় ধূমকেতু!
আমি যুগে যুগে আসি আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু !

ঐ ঈশ্বর-শির উল্লজ্ঘিতে আমি আগুনের সিঁড়ি,
আমি বসিব বলিয়া পেতেছে ভবানী ব্রহ্মার বুকে পিঁড়ি !
খ্যাপা মহেশের বিক্ষিপ্ত পিনাক, দেবরাজ-দম্ভোলি
লোকে বলে মোরে, শুনে হাসি আমি আর নাচি বব-বম্ বলি !
এই শিখায় আমার নিযুত ত্রিশূল বাশুলি বজ্র-ছড়ি
ওরে ছড়ানো রয়েছে, কত যায় গড়াগড়ি !
মহা সিংহাসনে সে কাঁপিছে বিশ্ব-সম্রাট নিরবধি,
তার ললাট তপ্ত অভিশাপ-ছাপ এঁকে দিই আমি যদি !
তাই টিটকিরি দিয়ে হাহা হেসে উঠি,

আমি বাজাই আকাশে তালি দিয়া 'তাতা-উর্-তাক্'
আর সোঁও সোঁও করে প্যাঁচ দিয়ে খাই চিলে-ঘুড়ি সম ঘুরপাক!
মম নিশাস আভাসে অগ্নি-গিরির বুক ফেটে ওঠে ঘুৎকার
আর পুচ্ছে আমার কোটি নাগ-শিশু উদ্গারে বিষ-ফুৎকার!

কাল বাঘিনী যেমন ধরিয়া শিকার
তখনি রক্ত শোষে না রে তার,
দৃষ্টি-সীমায় রাখিয়া তাহারে উগ্রচণ্ড-সুখে
পুচ্ছ সাপটি খেলা করে আর শিকার মরে সে ধুঁকে!
তেমনি করিয়া ভগবানে আমি
দৃষ্টি-সীমায় রাখি দিবাযামী
ঘিরিয়া ঘিরিয়া খেলিতেছি খেলা, হাসি পিশাচের হাসি
এই অগ্নি-বাঘিনী আমি যে সর্বনাশী!

আজ রক্ত-মাতাল উল্লাসে মাতি রে–
মম পুচ্ছে ঠিকরে দশগুণ ভাতি,
রক্ত রুদ্র উল্লাসে মাতি রে!
ভগবান? সে তো হাতের শিকার!– মুখে ফেনা উঠে মরে!
ভয়ে কাঁপিছে, কখন পড়ি গিয়া তার আহত বুকের 'পরে!
অথবা যেন রে অসহায় এক শিশুরে ঘিরিয়া

অজগর কাল-কেউটে সে কোন ফিরিয়া ফিরিয়া
চায়, আর ঘোরে শন্‌ শন্ শন্,
ভয়-বিহ্বল শিশু তার মাঝে কাঁপে রে যেমন–
তেমনি করিয়া ভগবানে ঘিরে
ধূমকেতু-কালনাগ অভিশাপ ছুটে চলেছি রে,
আর সাপে-ঘেরা অসহায় শিশু সম
বিধাতা তাদের কাঁপিছে রুদ্র ঘূর্ণির মাঝে মম!

আজিও ব্যথিত সৃষ্টির বুকে ভগবান কাঁদে ত্রাসে,
স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি পাছে বা বড় হয়ে তারে গ্রাসে!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #95

- কাজী নজরুল ইসলাম


রূপের সওদা কে করিবি তোরা আয় রে আয়,
নওরোজের এই মেলায়!
ডামাডোল আজি চাঁদের হাট,
লিট হ'ল রূপ হ'ল লোপাট!
খুলে ফেলে লাজ শরম-ঠাট!
রূপসীরা সব রূপ বিলায়
বিনি কিম্মতে হাসি-ইঙ্গিতে হেলাফেলায়!
নওরোজের এই মেলায়!

শা'জাদা উজির নওয়াব-জাদারা-রূপ-কুমার
এই মেলায় খরিদ-দার!
নও-জোয়ানীর জহুরী ঢের
খুঁজিছে বিপণি জহরতের,
জহরত নিতে-টেড়া আঁখের
জহর কিনিছে নির্বিকার!
বাহানা করিয়া ছোঁয় গো পিরান জাহানারার
নওরোজের রূপ-কুমার!

ফিরি ক'রে ফেরে শা'জাদী বিবি ও বেগম সা'ব
চাঁদ মুখের নাই নেকাব?
শূন্য দোকানে পসারিণী
কে জানে কে করে বিকি-কিনি!
চুড়ি-কঙ্কনে রিণিঠিনি
কাঁদিছে কোমল কড়ি রেখাব!
অধরে অধরে দর কষাকষি-নাই হিসাবহেম-কপোল লাল গোলাব।

হেরেম-বাঁদীরা দেরেম ফেলিয়া মাগিছে দিল,
নওরোজের নও-ম'ফিল!
সাহেব, গোলাম, খুনী আশেক,
বিবি বাঁদী,-সব আজিকে এক!
চোখে চোখে পেশ দাখিলা চেক
দিলে দিলে মিল এক সামিল!
বে-পরওয়া আজ বিলায় বাগিচা ফুল-ত'বিল!
নওরোনের নও-ম'ফিল।

ঠোঁটে ঠোঁটে আজ মিঠি শরবৎ ঢাল উপুড়,
রণ-ঝনায় পা'য় নূপুর।
কিস্মিস-ছেঁচা আজ অধর,
আজিকে আলাপ 'মোখতসর'!
কার পায়ে পড়ে কার চাদর,
কাহারে জড়ায় কার কেয়ূর,
প্রলাপ বকে গো কলাপ মেলিয়া মন-ময়ূর,
আজি দিলের নাই সবুর।

আঁখির নিক্তি করিছে ওজন প্রেম দেদার
তার কাহার অশ্রু-হার
চোখে চোখে আজ চেনাচেনি!
বিনি মূলে আজ কেনাকেনি,
নিকাশ করিয়া লেনাদেনি
'ফাজিল' কিছুতে কমে না আর!
পানের বদলে মুন্না মাগিছে পান্না-হার!
দিল সবার 'বে-কারার'!

সাধ ক'রে আজ বরবাদ করে দিল সবাই
নিমখুন কেউ কেউ জবাই!
নিকপিক করে ক্ষীণ কাঁকাল,
পেশোয়াজ কাঁপে টালমাটাল,
গুরু ঊরু-ভারে তনু নাকাল,
টলমল আঁখি জল-বোঝাই!
হাফিজ উমর শিরাজ পলায়ে লেখে 'রুবাই'!
নিমখুন কেউ কেউ জবাই!

শিরী লাইলীরে খোঁজে ফরহাদ খোঁজে কায়েস
নওরোজের এই সে দেশ!
ঢুঁড়ে ফেরে হেথা যুবা সেলিম
নূরজাহানের দূর সাকিম,
আরংজিব আজ হইয়া ঝিম
হিয়ায় হিয়ায় চাহে আয়েস!
তখত-তাউস কোহিনূর কারো নাই খায়েশ,
নওরোজের এই সে দেশ!

গুলে-বকৌলি ঊর্বশীর এ চাঁদনী-চক,
চাও হেথায় রূপ নিছক।
শারাব সাকী ও রঙে রূপে
আতর লোবান ধূনা ধূপে
সয়লাব সব যাক ডুবে,
আঁখি-তারা হোক নিষ্পলক।
চাঁদ মুখে আঁক কালো কলঙ্ক তিল-তিলক
চাও হেথায় রূপ নিছক।

হাসির নেশায় ঝিম মেরে আছে আজ সকল,
লাল পানির রঙমহল!
চাঁদ-বাজারে এ নওরোজের
দোকান ব'সেছে মমতাজের,
সওদা করিতে এসেছে ফের
শা'জাহান হেথা রূপ-পাগল।
হেরিতেছে কবি সুদূরের ছবি ভবিষ্যতের তাজমহল-
নওরোজের স্বপ্ন-ফল!

গুলে-বকৌলি- পরীদের রাণী, দেরেম- রৌপ্যমুদ্রা, ত'বিল-তহবিল, ম'ফিল-সভা
আশেক-প্রেম, মোখতাসর- সংক্ষেপ, মুন্না- সাধারণত বা৬দীর নাম, ফাজিল-অতিরিক্ত
বে-কারার- ধৈর্যহারা


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #96

- কাজী নজরুল ইসলাম


সাম্যের গান গাই -
আমার চক্ষে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
অথবা পাপ যে - শয়তান যে - নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছে, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্ণী, গানের লক্ষ্ণী, শস্য-লক্ষ্ণী নারী,
সুষমা-লক্ষ্ণী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল, পুরুষ চালাল হল,
নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালি ধানের শীষে।

স্বর্ণ-রৌপ্যভার
নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন্ রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’ কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্ণী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রানী,
রানির দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।

পুরুষ হৃদয়হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব।
খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা।
লব-কুশে বনে তাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা।
নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরাল কাজল বেদনার ঘন ছায়া।
অদ্ভূতরূপে পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে করে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ।

তিনি নর-অবতার -
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার।
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর -
নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।

সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী।
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি’।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!

যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।

শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্‌ সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায় মল,
মাথার ঘোম্‌টা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও-শিকল!
যে ঘোমটা তোমা’ করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ,
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যত আভরণ!

ধরার দুলালী মেয়ে,
ফির না তো আর গিরিদরীবনে পাখী-সনে গান গেয়ে।
কখন আসিল ‘প্নুটো’ যমরাজা নিশীথ-পাখায় উড়ে,
ধরিয়া তোমায় পুরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হতে আছ মরি’
মরণের পুরে; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী।
ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মতো আয় মা পাতাল ফুঁড়ি!
আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি!
পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদনি শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।

সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #97

- কাজী নজরুল ইসলাম


পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্রু-পাথার হিম পারাবার পারায়ে
ঐ যে এলো গো-
কুজঝটিকার ঘোম্‌টা-পরা দিগন্ত-রে দাঁড়ায়ে।।
সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়
বিদায়-ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়,
অস্ত-বধূ (আ-হা) মলিন চোখে চায়
পথ-চাওয়া দীপ সন্ধ্যা-তারায় হারায়ে।।

পউষ এলো গো-
এক বছরের শ্রানি-পথের, কালের আয়ু-ক্ষয়,
পাকা ধানের বিদায়-ঋতু, নতুন আসার ভয়।
পউষ এলো গো! পউষ এলো-
শুক্‌নো নিশাস্‌, কাঁদন-ভারাতুর
বিদায়-ক্ষণের (আ-হা) ভাঙা গলার সুর-
‘ওঠে পথিক! যাবে অনেক দূর
কালো চোখের করুণ চাওয়া ছাড়ায়ে।।’


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #98

- কাজী নজরুল ইসলাম


কে জানে কোথায় চলিয়াছি ভাই মুসাফির পথচারি,
দু'ধারে দু'কুল দুঃখ-সুখের--মাঝে আমি স্রোত-বারি!
আপনার বেগে আপনি ছুটেছি জন্ম-শিখর হ'তে
বিরাম-বিহীন রাত্রি ও দিন পথ হ'তে আন পথে!
নিজ বাস হ'ল চির-পরবাস, জন্মের ক্ষন পরে
বাহিরিনি পথে গিরি-পর্বতে--ফিরি নাই আর ঘরে।
পলাতকা শিশু জন্মিয়াছিনু গিরি-কন্যার কোলে,
বুকে না ধরিতে চকিতে ত্বরিতে আসিলাম ছুটে চ'লে।

জননীরে ভুলি' সে পথে পলায় মৃগ-শিশু বাঁশী শুনি',
যে পথে পলায় শশকেরা শুনি' ঝরনার ঝুনঝুনি,
পাখী উড়ে যায় ফেলিয়া কুলায় সীমাহীন নভোপানে,
সাগর ছাড়িয়া মেঘের শিশুরা পলায় আকাশ-যানে,--
সেই পথ ধরি' পলাইনু আমি! সেই হ'তে ছুটে চলি
গিরি দরী মাঠ পল্লীর বাট সজা বাঁকা শত গলি।

--কোন গ্রহ হ'তে ছিঁড়ি'
উল্কার মত ছুতেছি বাহিয়া সৌর-লোকের সিঁড়ি!
আমি ছুটে যাই জানিনা কোথায়, ওরা মোর দুই তীরে
রচে নীড়, ভাবে উহাদেরি তীরে এসেছি পাহাড় চিরে।
উহাদের বদূ কলস ভরিয়া নিয়ে যায় মোর বারি,
আমার গহনে গাহন করিয়া বলে সন্তাপ-হারী!
ঊহারা দেখিল কেবলি আমার সলিলের শিতলতা,
দেখে নাই-জ্বলে কত চিতাগ্নি মোর কূলে কূলে কোথা!

--হায়, কত হতভাগী--
আমিই কি জানি-- মরিল ডুবিয়া আমার পরশ মাগি'।
বাজিয়াছে মোর তটে-তটে জানি ঘটে-ঘটে কিঙ্কিণী,
জল-তরঙ্গে বেজেছে বধূর মধুর রিনিকি-ঝিনি।
বাজায়েছে বেণু রাখাল-বালক তীর-তরুতলে বসি'।
আমার সলিলে হেরিয়াছে মুখ দূর আকাশের শশী।
জানি সব জানি, ওরা ডাকে মোরে দু'তীরে বিছায়ে স্নেহ,
দীঘি হ'তে ডাকে পদ্মমুখীরা 'থির হও বাঁধি' গেহ!'

আমি ব'য়ে যাই- ব'য়ে যাই আমি কুলুকুলু কুলুকুলু
শুনি না-- কোথায় মোরই তীরে হায় পুরনারী দেয় উলু!
সদাগর-জাদী মণি-মাণিক্যে বোঝাই করিয়া তরী
ভাসে মর জলে,-- "ছল ছল" ব'লে আমি দূরে যাই সরি'।
আঁকড়িয়া ধরে' দু'তীর বৃথাই জড়ায়ে তন্তুলতা;
ওরা দেখে নাই আবর্ত মোর, মোর অন্তর-ব্যথা!

লুকাইয়া আসে গোপনে নিশীথে কূলে মোর অভাগিনী,
আমি বলি 'চল ছল ছল ছল ওরে বধূ তোরে চিনি!
কূল ছেড়ে আয় রে অভিসারিকা, মরণ-অকূলে ভাসি!'
মোর তীরে-তীরে আজো খুঁজে ফিরে তোরে ঘর-ছাড়া বাঁশী।
সে পড়ে ঝাঁপায়-জলে,
আমি পথে ধাই--সে কবে হারায় স্মৃতির বালুকা-তলে!

জানি না ক' হায় চলেছি কোথায় অজানা আকর্ষণে,
চ'লেছি যতই তত সে অথই বাজে জল খনে খনে।
সন্মুখ-টানে ধাই অবিরাম, নাই নাই অবসর,
ছুঁইতে হারাই--এই আছে নাই-- এই ঘর এই পর!
ওরে চল চল ছল ছল কি হবে ফিরায়ে আঁখি?
তরি তীরে ডাকে চক্রবাকেরে তরি সে চক্রবাকী!

ওরা সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে যায় কূলের কুলায়-বাসী,
আঁচল ভরিয়া কুড়ায় আমার কাদায়-ছিটানো হাসি।
ওরা চ'লে এক্যায়, আমি জাগি হায় ল'ইয়ে চিতাগ্নি শব,
ব্যথা-আবর্ত মচড় খাইয়া বুকে করে কলরব!
ওরে বেনোজল, ছল ছল ছল ছুটে চল ছুটে চল!
হেথা কাদাজল পঙ্কিল তোরে করিতেছে অবিরল।
কোথা পাবি হেথা লোনা আঁখিজল, চল চল পথচারী!
করে প্রতীক্ষা তোর তরে লোনা সাত-সমুদ্র-বারি!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #99

- কাজী নজরুল ইসলাম


বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানে না সে কে তাহারে চাবে।
উদাস পথিক ভাবে।

বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

হঠাত্‍ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #100

- কাজী নজরুল ইসলাম


পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা
আমার জীবনে শুধু আঁধারের লেখা

বাহিরে অন্তরে ঝড় উঠিয়াছে
আশ্রয় যাচি হায় কাহার কাছে!

বুঝি দুখ নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর
ফুটিবে না আশার আলোক রেখা।।

ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #101

- কাজী নজরুল ইসলাম


চারিদিকে এই গুণ্ডা এবং বদমায়েসির আখ্‌ড়া দিয়ে
রে অগ্রদূত, চ’লতে কি তুই পারবি আপন প্রাণ বাঁচিয়ে?
পারবি যেতে ভেদ ক’রে এই বক্র-পথের চক্রব্যুহ?
উঠবি কি তুই পাষাণ ফুঁড়ে বনস্পতি মহীরুহ?
আজকে প্রাণের গো-ভাগাড়ে উড়ছে শুধু চিল-শকুনি,
এর মাঝে তুই আলোকে-শিশু কোন্‌ অভিযান ক’রবি, শুনি?
ছুঁড়ছে পাথর, ছিটায় কাদা, কদর্যের এই হোরি-খেলায়
শুভ্র মুখে মাখিয়ে কালি ভোজপুরীদের হট্ট-মেলায়
বাঙলা দেশও মাত্‌ল কি রে? তপস্যা তার ভুললো অরুণ?
তাড়িখানার চীৎকারে কি নাম্‌ল ধুলায় ইন্দ্র বরুণ?
ব্যগ্র-পরান অগ্রপথিক,কোন্‌ বাণী তোর শুনাতে সাধ?
মন্ত্র কি তোর শুন্‌তে দেবে নিন্দাবাদীর ঢক্কা-নিনাদ?

নর-নারী আজ কন্ঠ ছেড়ে কুৎসা-গানের কোরাস্‌ ধ’রে
ভাবছে তা’রা সুন্দরেরই জয়ধ্বনি ক’রছে জোরে?
এর মাঝে কি খবর পেলি নব-বিপ্লব-ঘোড়সাওয়ারী
আসছে কেহ? টুট্‌ল তিমির, খুল্‌ল দুয়ার পুব-দয়ারী?
ভগবান আজ ভূত হ’ল যে প’ড়ে দশ-চক্র ফেরে,
যবন এবং কাফের মিলে হায় বেচারায় ফিরছে তেড়ে!
বাঁচাতে তায় আসছে কি রে নতুন যুগের মানুষ কেহ?
ধুলায় মলিন, রিক্তাভরণ, সিক্ত আঁখি, রক্ত দেহ?
মসজিদ আর মন্দির ঐ শয়তানদের মন্ত্রণাগার,
রে অগ্রদূত, ভাঙতে এবার আসছে কি জাঠ কালাপাহাড়?
জানিস যদি, খবর শোনা বন্ধ খাঁচার ঘেরাটোপে,
উড়ছে আজো ধর্ম-ধ্বজা টিকির গিঁঠে দাড়ির ঝোপে!

নিন্দাবাদের বৃন্দাবনে ভেবেছিলাম গাইব না গান,
থাকতে নারি দেখে শুনে সুন্দরের এই হীন অপমান।
ক্রুদ্ধ রোষে রুদ্ধ ব্যথায় ফোঁপায় প্রাণে ক্ষুদ্ধ বাণী,
মাতালদের ঐ ভাঁটিশালায় নটিনী আজ বীণাপাণি!
জাতির পারণ-সিন্ধু মথি’ স্বার্থ-লোভী পিশাচ যারা
সুধার পাত্র লক্ষ্মীলাভের ক’রতেছে ভাগ-বাঁটোয়ারা,
বিষ যখন আজ উঠল শেষে তখন কারুর পাইনে দিশা,
বিষের জ্বালায় বিশ্ব পুড়ে, স্বর্গে তাঁরা মেটান তৃষা!
শ্মাশন-শবের ছাইয়ের গাদায় আজকে রে তাই বেড়াই খুঁজে,
ভাঙন-দেব আজ ভাঙের নেশায় কোথায় আছে চক্ষু বুঁজে!
রে অগ্রদূত, তরুণ মনের গহন বনের রে সন্ধানী,
আনিস্‌ খবর, কোথায় আমার যুগান্তরের খড়্‌পপাণি!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #102

- কাজী নজরুল ইসলাম


কোন্‌ সুদূরের চেনা বাঁশীর ডাক শুনেছিস্‌ ওরে চখা?
ওরে আমার পলাতকা!
তোর প’ড়লো মনে কোন্‌ হারা-ঘর,
স্বপন-পারের কোন্‌ অলকা?
ওরে আমার পলাতকা!
তোর জল ভ’রেছে চপল চোখে,
বল্‌ কোন্‌ হারা-মা ডাকলো তোকে রে?
ঐ গগন-সীমায় সাঁঝের ছায়ায়
হাতছানি দেয় নিবিড় মায়ায়-
উতল পাগল! চিনিস্‌ কি তুই চিনিস্‌ ওকে রে?
যেন বুক-ভরা ও গভীর স্নেহে ডাক দিয়ে যায়, “আয়,
ওরে আয় আয় আয়,
কেবল আয় যে আমার দুষ্টু খোকা!
ওরে আমার পলাতকা!’’
দখিন্‌ হাওয়ায় বনের কাঁপনে-
দুলাল আমার! হাত-ইশারায় মা কি রে তোর
ডাক দিয়েছে আজ?
এতকদিনে চিন্‌লি কি রে পর ও আপনে!
নিশিভোরেই তাই কি আমার নামলো ঘরে সাঁঝ!
ধানের শীষে, শ্যামার শিসে-
যাদুমণি! বল্‌ সে কিসে রে,
তুই শিউরে চেয়ে ছিঁড়লি বাঁধন!
চোখ-ভরা তোর উছলে কাঁদন রে!
তোরে কে পিয়ালো সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে!
যেন আচম্‌কা কোন্‌ শশক-শিশু চ’ম্‌কে ডাকে হায়,
“ওরে আয় আয় আয়
আয় রে খোকন আয়,
বনে আয় ফিরে আয় বনের চখা!
ওরে চপল পলাতকা’’।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #103

- কাজী নজরুল ইসলাম


.

সাম্যের গান গাই! -
যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই।
এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনি ক' কে আছে পুরুষ-নারী?
আমরা ত ছার; - পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারী!
তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল,
দেবতার পাপ-পথ দিয়া পশে স্বর্গে অসুর দল!
আদম হইতে শুরু ক'রে এই নজরুল তক্ সবে
কম-বেশী ক'রে পাপের ছুরিতে পুণ্য করেছে জবেহ্!
বিশ্ব পাপস্থান
অর্ধেক এর ভগবান, আর অর্ধেক শয়তান্!
ধর্মান্ধরা শোনো,
অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো!
পাপের পঙ্কে পুণ্য-পদ্ম, ফুলে ফুলে হেতা পাপ!
সুন্দর এই ধরা-ভরা শুধু বঞ্চনা অভিশাপ।
এদের এড়াতে না পারিয়া যত অবতার আদি কেহ
পুণ্যে দিলেন আত্মা ও প্রাণ, পাপেরে দিলেন দেহ।
বন্ধু, কহিনি মিছে,
ব্রক্ষ্মা বিষ্ণু শিব হ'তে ধ'রে ক্রমে নেমে এস নীচে-
মানুষের কথা ছেড়ে দাও, যত ধ্যানী মুনী ঋষি যোগী
আত্মা তাঁদের ত্যাগী তপস্বী, দেহ তাঁহাদের ভোগী!
এ-দুনিয়া পাপশালা,
ধর্ম-গাধার পৃষ্ঠে এখানে শূন্য পুণ্য-ছালা!
হেথা সবে সম পাপী,
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!
জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও,
টুপি প'রে টিকি রেখে সদা বল যেন তুমি পাপী নও।
পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং, ট্রেডমার্কার ধুম?
পুলিশী পোশাক পরিয়া হ'য়েছ পাপের আসামী গুম্!

বন্ধু, একটা মজার গল্প শোনো,
একদা অপাপ ফেরেশতা সব স্বর্গ-সভায় কোনো
এই আলোচনা করিতে আছিল বিধির নিয়মে দুষি-
দিন রাত নাই এত পূজা করি, এত ক'রে তাঁরে তুষি,
তবু তিনি যেন খুশি নন্ - তাঁর যত স্নেহ দয়া ঝরে
পাপ-আসক্ত কাদা ও মাটির মানুষ জাতির 'পরে!
শুনিলেন সব অন্তর্যামী, হাসিয়া সবারে ক'ন, -
মলিন ধুলার সন্তান ওরা বড় দুর্বল মন,
ফুলে ফুলে সেথা ভুলের বেদনা - নয়নে, অধরে শাপ,
চন্দনে সেথা কামনার জ্বালা, চাঁদে চুম্বন-তাপ!
সেথা কামিনীর নয়নে কাজল, শ্রোণীতে চন্দ্রহার,
চরণে লাক্ষা, ঠোঁটে তাম্বুল, দেখে ম'রে আছে মার!
প্রহরী সেখানে চোখা চোখ নিয়ে সুন্দর শয়তান,
বুকে বুকে সেথা বাঁকা ফুল-ধনু, চোখে চোখে ফুল-বাণ।
দেবদূত সব বলে, 'প্রভু, মোরা দেখিব কেমন ধরা,
কেমনে সেখানে ফুল ফোটে যার শিয়রে মৃত্যু-জরা!'
কহিলেন বিভু - 'তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ যে দুইজন
যাক্ পৃথিবীতে, দেখুক কি ঘোর ধরণীর প্রলোভন!'
'হারুত' 'মারুত' ফেরেশতাদের গৌরব রবি-শশী
ধরার ধুলার অংশী হইল মানবের গৃহে পশি'। -
কায়ায় কায়ায় মায়া বুলে হেথা ছায়ায় ছায়ায় ফাঁদ,
কমল-দীঘিতে সাতশ' হয়েছে এই আকাশের চাঁদ!
শব্দ গন্ধ বর্ণ হেথায় পেতেছে অরূপ-ফাঁসী,
ঘাটে ঘাটে হেথা ঘট-ভরা হাসি, মাঠে মাঠে কাঁদে বাঁশী!
দুদিনে আতশী ফেরেশতা-প্রাণ ভিজিল মাটির রসে,
শফরী-চোখের চটুল চাতুরী বুকে দাগ কেটে বসে।
ঘাগরী ঝলকি' গাগরী ছলকি' নাগরী 'জোহরা' যায় -
স্বর্গের দূত মজিল সে-রূপে, বিকাইল রাঙা পা'য়!
অধর-আনার-রসে ডুবে গেল দোজখের নার-ভীতি,
মাটির সোরাহী মাস্তানা হ'ল আঙ্গুরী খুনে তিতি'!
কোথা ভেসে গেল সংযম-বাঁধ, বারণের বেড়া টুটে,
প্রাণ ভ'রে পিয়ে মাটির মদিরা ওষ্ঠ-পুষ্প-পুটে।
বেহেশতে সব ফেরেশতাদের বিধাতা কহেন হাসি' -
'হারুত মারুতে কি ক'রেছে দেখ ধরণী সর্বনাশী!'
নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি-ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়।
সুন্দরী বসুমতী
চিরযৌবনা, দেবতা ইহার শিব নয় - কাম রতি!


(সঞ্চিতা)


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #104

- কাজী নজরুল ইসলাম


পাষাণের ভাঙালে ঘুম
কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়
গলিয়া সুরের তুষার
গীতিনির্ঝর বয়ে যায়।

উদাসী বিবাগী মন
যাচে আজ বাহুর বাঁধন
কত জনমের কাঁদন
ও পায়ে লুটাতে চায়।

ওগো তোমার চরণ ছন্দে মোর
মুঞ্জরিল গানের মুকুল
তোমার বেণীর বন্ধে গো
মরিতে চায় সুরের বকুল।
চমকে ওঠে মোর গগণ
ঐ হরিণ চোখের চাওয়ায়।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #105

- কাজী নজরুল ইসলাম


সখি! নতুন ঘরে গিয়ে আমায় প’ড়বে কি আর মনে?
সেথা তোমার নতুন পূজা নতুন আয়োজনে!
প্রথম দেখা তোমায় আমায়
যে গৃহ-ছায় যে আঙিনায়,
যেথায় প্রতি ধূলিকণায়,
লতাপাতার সনে
নিত্য চেনার বিত্ত রাজে চিত্ত-আরাধনে,
শূন্য সে ঘর শূন্য এখন কাঁদছে নিরজনে।।

সেথা তুমি যখন ভুল্‌তে আমায়, আস্‌ত অনেক কেহ,
তখন আমার হ’য়ে অভিমানে কাঁদত যে ঐ গেহ।
যেদিক পানে চাইতে সেথা
বাজ্‌তে আমার স্মৃতির ব্যথা,
সে গ্লানি আজ ভুলবে হেথা
নতুন আলাপনে।
আমিই শুধু হারিয়ে গেলেম হারিয়ে-যাওয়ার বনে।।

আমার এত দিনের দূর ছিল না সত্যিকারের দুর,
ওগো আমার সুদুর ক’রত নিকট ঐ পুরাতন পুর।
এখন তোমার নতুন বাঁধন
নতুন হাসি, নতুন কাঁদন,
নতুন সাধন, গানের মাতন
নতুন আবাহনে।
আমারই সুর হারিয়ে গেল সুদুর পুরাতন।।

সখি! আমার আশাই দুরাশা আজ, তোমার বিধির বর,
আজ মোর সমাধির বুকে তোমার উঠবে বাসর-ঘর!
শূণ্য ভ’রে শুনতে পেনু
ধেনু-চরা বনের বেণু-
হারিয়ে গেনু হারিয়ে গেনু
অন–দিগঙ্গনে।
বিদায় সখি, খেলা-শেষ এই বেলা-শেষের খনে!
এখন তুমি নতুন মানুষ নতুন গৃহকোণে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #106

- কাজী নজরুল ইসলাম


এত দিনে অবেলায়-
প্রিয়তম!
ধূলি-অন্ধ ঘূর্ণি সম
দিবাযামী
যবে আমি
নেচে ফিরি র”ধিরাক্ত মরণ-খেলায়-
এ দিনে অ-বেলায়
জানিলাম, আমি তোমা’ জন্মে জন্মে চিনি।
পূজারিণী!
ঐ কন্ঠ, ও-কপোত- কাঁদানো রাগিণী,
ঐ আখি, ঐ মুখ,
ঐ ভুর”, ললাট, চিবুক,
ঐ তব অপরূপ রূপ,
ঐ তব দোলো-দোলো গতি-নৃত্য দুষ্ট দুল রাজহংসী জিনি’-
চিনি সব চিনি।

তাই আমি এতদিনে
জীবনের আশাহত ক্লান- শুষ্ক বিদগ্ধ পুলিনে
মূর্ছাতুর সারা প্রাণ ভ’রে
ডাকি শুকু ডাকি তোমা’
প্রিয়তমা!
ইষ্ট মম জপ-মালা ঐ তব সব চেয়ে মিষ্ট নাম ধ’রে!
তারি সাথে কাঁদি আমি-
ছিন্ন-কন্ঠে কাঁদি আমি, চিনি তোমা’, চিনি চিনি চিনি,
বিজয়িনী নহ তুমি-নহ ভিখারিনী,
তুমি দেবী চির-শুদ্ধ তাপস-কুমারী, তুমি মম চির-পূজারিণী!
যুগে যুগে এ পাষাণে বাসিয়াছ ভালো,
আপনারে দাহ করি, মোর বুকে জ্বালায়েছ আলো,
বারে বারে করিয়াছ তব পূজা-ঋণী।
চিনি প্রিয়া চিনি তোমা’ জন্মে জন্মে চিনি চিনি চিনি!
চিনি তোমা’ বারে বারে জীবনের অস–ঘাটে, মরণ-বেলায়,
তারপর চেনা-শেষে
তুমি-হারা পরদেশে
ফেলে যাও একা শুণ্য বিদায়-ভেলায়!

দিনানে-র প্রানে- বসি’ আঁখি-নীরে তিনি’
আপনার মনে আনি তারি দূর-দূরানে-র স্মৃতি-
মনে পড়ে-বসনে-র শেষ-আশা-ম্লান মৌন মোর আগমনী সেই নিশি,
যেদিন আমার আঁখি ধন্য হ’ল তব আখি-চাওয়া সনে মিশি।
তখনো সরল সুখী আমি- ফোটেনি যৌবন মম,
উন্মুখ বেদনা-মুখী আসি আমি ঊষা-সম
আধ-ঘুমে আধ-জেগে তখনো কৈশোর,
জীবনের ফোটো-ফোটো রাঙা নিশি-ভোর,
বাধা বন্ধ-হারা
অহেতুক নেচে-চলা ঘূর্ণিবায়ু-পারা
দুরন- গানের বেগ অফুরন- হাসি
নিয়ে এনু পথ-ভোলা আমি অতি দূর পরবাসী।
সাথে তারি
এনেছিনু গৃহ-হারা বেদনার আঁখি-ভরা বারি।
এসে রাতে-ভোরে জেগে গেয়েছিনু জাগরণী সুর-
ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছিলে তুমি কাছে এসেছিলে,
মুখ-পানে চেয়ে মোর সকর”ণ হাসি হেসেছিলে,-
হাসি হেরে কেঁদেছিনু-‘তুমি কার পোষাপাখী কান-ার বিধুর?’
চোখে তব সে কী চাওয়া! মনে হ’ল যেন
তুমি মোর ঐ কন্ঠ ঐ সুর-
বিরহের কান্না-ভারাতুর
বনানী-দুলানো,
দখিনা সমীরে ডাকা কুসুম-ফোটানো বন-হরিণী-ভুলানো
আদি জন্মদিন হ’তে চেন তুমি চেন!
তারপর-অনাদরে বিদায়ের অভিমান-রাঙা
অশ্র”-ভাঙা-ভাঙা
ব্যথা-গীত গেয়েছিনু সেই আধ-রাতে,
বুঝি নাই আমি সেই গান-গাওয়া ছলে
কারে পেতে চেয়েছিনু চিরশূন্য মম হিয়া-তলে-
শুধু জানি, কাঁচা-ঘুমে জাগা তব রাগ-অর”ণ-আঁখি-ছায়া
লেগেছিল মম আঁখি-পাতে।
আরো দেখেছিনু, ঐ আঁখির পলকে
বিস্ময়-পুলক-দীপ্তি ঝলকে ঝলকে
ঝ’লেছিল, গ’লেছিল গাঢ় ঘন বেদানার মায়া,-
কর”ণায় কেঁপে কেঁপে উঠেছিল বিরহিণী
অন্ধকার-নিশীথিনী-কায়া।

তৃষাতুর চোখে মোর বড় যেন লেগেছিল ভালো
পূজারিণী! আঁখি-দীপ-জ্বালা তব সেই সিগ্ধ সকর”ণ আলো।

তারপর-গান গাওয়া শেষে
নাম ধ’রে কাছে বুঝি ডেকেছিনু হেসে।
অমনি কী গ’র্জে-উঠা র”দ্ধ অভিমানে
(কেন কে সে জানে)
দুলি’ উঠেছিল তব ভুর”-বাঁধা সি’র আঁখি-তরী,
ফুলে উঠেছিল জল, ব্যথা-উৎস-মুখে তাহা ঝরঝর
প’ড়েছিল ঝরি’!
একটু আদরে এত অভিমানে ফুলে-ওঠা, এত আঁখি-জল,
কোথা পেলি ওরে কা’র অনাদৃতা ওরে মোর ভিখারিনী
বল্‌ মোরে বল্‌ ।
এই ভাঙা বুকে
ঐ কান্না-রাঙা মুখ থুয়ে লাজ-সুখে
বল্‌ মোরে বল্‌-
মোরে হেরি’ কেন এত অভিমান?
মোর ডাকে কেন এত উথলায় চোখে তব জল?
অ-চেনা অ-জানা আমি পথের পথিক
মোরে হেরে জলে পুরে ওঠে কেন এত ঐ বালিকার আঁখি অনিমিখ?
মোর পানে চেয়ে সবে হাসে,
বাঁধা-নীড় পুড়ে যায় অভিশপ্ত তপ্ত মোর শ্বাসে;
মণি ভেবে কত জনে তুলে পরে গলে,
মণি যবে ফণী হয়ে বিষ-দগ্ধ-মুখে
দংশে তার বুকে,
অমনি সে দলে পদতলে!
বিশ্ব যারে করে ভয় ঘৃণা অবহেলা,
ভিখরিণী! তারে নিয়ে এ কি তব অকর”ণ খেলা?
তারে নিয়ে এ কি গূঢ় অভিমান? কোন্‌ অধিকারে
নাম ধ’রে ডাকটুকু তা’ও হানে বেদনা তোমারে?
কেউ ভালোবাসে নাই? কেই তোমা’ করেনি আদর?
জন্ম-ভিখারিনী তুমি? তাই এত চোখে জল, অভিমানী কর”ণা-কাতর!
নহে তা’ও নহে-
বুকে থেকে রিক্ত-কন্ঠে কোন্‌ রিক্ত অভিমানী কহে-
‘নহে তা’ও নহে।’
দেখিয়াছি শতজন আসে এই ঘরে,
কতজন না চাহিতে এসে বুকে করে,
তবু তব চোখে-মুখে এ অতৃপ্তি, এ কী স্নেহ-ক্ষুধা
মোরে হেলে উছলায় কেন তব বুক-ছাপা এত প্রীতি সুধা?
সে রহস্য রাণী!
কেহ নাহি জানে-
তুমি নাহি জান-
আমি নাহি জানি।
চেনে তা প্রেম, জানে শুধু প্রাণ-
কোথা হ’তে আসে এত অকারণে প্রাণে প্রাণে বেদনার টান!

নাহি বুঝিয়াও আমি সেদিন বুঝিনু তাই, হে অপরিচিতা!
চির-পরিচিতা তুমি, জন্ম জন্ম ধ’রে অনাদৃতা সীতা!
কানন-কাঁদানো তুমি তাপস-বালিকা
অনন- কুমারী সতী, তব দেব-পূজার থালিকা
ভাঙিয়াছি যুগে যুগে, ছিঁড়িয়াছি মালা
খেলা-ছলে; চিন-মৌনা শাপভ্রষ্টা ওগো দেববালা!
নীরবে স’য়েছ সবি-
সহজিয়া! সহজে জেনেছ তুমি, তুমি মোর জয়লক্ষ্মী, আমি তব কবি।
তারপর-নিশি শেষে পাশে ব’সে শুনেছিনু তব গীত-সুর
লাজে-আধ-বাধ-বাধ শঙ্কিত বিধুর;
সুর শুনে হ’ল মনে- ক্ষণে ক্ষণে
মনে-পড়ে-পড়ে না হারা কন্ঠ যেন
কেঁদে কেঁদে সাধে, ‘ওগো চেন মোরে জন্মে জন্মে চেন।’
মথুরায় গিয়ে শ্যাম, রাধিকার ভুলেছিল যবে,
মনে লাগে- এই সুর গীত-রবে কেঁদেছিল রাধা,
অবহেলা-বেঁধা-বুক নিয়ে এ যেন রে অতি-অন-রালে ললিতার কাঁদা
বন-মাঝে একাকিনী দময়ন-ী ঘুরে ঘুরে ঝুরে,
ফেলে-যাওয়া নাথে তার ডেকেছিল ক্লান–কন্ঠে এই গীত-সুরে।
কানে- প’ড়ে মনে
বনলতা সনে
বিষাদিনী শকুন-লা কেঁদেছিল এই সুরে বনে সঙ্গোপনে।
হেম-গিরি-শিরে
হারা-সতী উমা হ’য়ে ফিরে
ডেকেছিল ভোলানাথে এমনি সে চেনা কন্ঠে হায়,
কেঁদেছিল চির-সতী পতি প্রিয়া প্রিয়ে তার পেতে পুনরায়!-
চিনিলাম বুঝিলাম সবি-
যৌবন সে জাগিল না, লাগিল না মর্মে তাই গাঢ় হ’য়ে তব মুখ-ছবি।

তবু তব চেনা কন্ঠ মম কন্ঠ -সুর
রেখে আমি চ’লে গেনু কবে কোন্‌ পল্লী-পথে দূরে!–
দু’দিন না যেতে যেতে এ কি সেই পুণ্য গোমতীর কূলে
প্রথম উঠিল কাঁদি’ অপরূপ ব্যথা-গন্ধ নাভি-পদ্ম-মুলে!

খুঁজে ফিরি কোথা হ’তে এই ব্যাথা-ভারাতুর মদ-গন্ধ আসে-
আকাশ বাতাস ধরা কেঁপে কেঁপে ওঠে শুধু মোর তপ্ত ঘন দীর্ঘশ্বাসে।
কেঁদে ওঠে লতা-পাতা,
ফুল পাখি নদীজল
মেঘ বায়ু কাঁদে সবি অবিরল,
কাঁদে বুকে উগ্রসুখে যৌবন-জ্বালায়-জাগা অতৃপ্ত বিধাতা!
পোড়া প্রাণ জানিল না কারে চাই,
চীৎকারিয়া ফেরে তাই-‘কোথা যাই,
কোথা গেলে ভালোবাসাবাসি পাই?
হু-হু ক’রে ওঠে প্রাণ, মন করে উদাস-উদাস,
মনে হয়-এ নিখিল যৌবন-আতুর কোনো প্রেমিকের ব্যথিত হুতাশ!
চোখ পুরে’ লাল নীল কত রাঙা, আবছায়া ভাসে, আসে-আসে-
কার বক্ষ টুটে
মম প্রাণ-পুটে
কোথা হ’তে কেন এই মৃগ-মদ-গন্ধ-ব্যথা আসে?
মন-মৃগ ছুটে ফেরে; দিগন-র দুলি’ ওঠে মোর ক্ষিপ্ত হাহাকার-ত্রাসে!
কস’রী হরিণ-সম
আমারি নাভির গন্ধ খুঁজে ফেলে গন্ধ-অন্ধ মন-মৃগ মম!
আপনারই ভালোবাসা
আপনি পিইয়া চাহে মিটাইতে আপনার আশা!
অনন- অগস-্য-তৃষাকুল বিশ্ব-মাগা যৌবন আমার
এক সিন্ধু শুষি’ বিন্দু-সম, মাগে সিন্ধু আর!
ভগবান! ভগবান! এ কি তৃষ্ণা অনন- অপার!
কোথা তৃপ্তি? তৃপ্তি কোথা? কোথা মোর তৃষ্ণা-হরা প্রেম-সিন্ধু
অনাদি পাথার!
মোর চেয়ে স্বে”ছাচারী দুরন- দুর্বার!
কোথা গেলে তারে পাই,
যার লাগি’ এত বড় বিশ্বে মোর নাই শানি- নাই!
ভাবি আর চলি শুধু, শুধু পথ চলি,
পথে কত পথ-বালা যায়,
তারি পাছে হায় অন্ধ-বেগে ধায়
ভালোবাসা-ক্ষুধাতুর মন,
পিছু ফিরে কেহ যদি চায়, ‘ভিক্ষা লহ’ ব’লে কেহ আসে দ্বার-পাশে।
প্রাণ আরো কেঁদে ওঠে তাতে,
গুমরিয়া ওঠে কাঙালের লজ্জাহীন গুর” বেদনাতে!
প্রলয়-পয়োধি-নীরে গর্জে-ওঠা হুহুঙ্কার-সম
বেদনা ও অভিমানে ফুলে’ ফুলে’ দুলে’ ওঠে ধূ-ধূ
ক্ষোভ-ক্ষিপ্ত প্রাণ-শিখা মম!
পথ-বালা আসে ভিক্ষা-হাতে,
লাথি মেরে চুর্ণ করি গর্ব তার ভিক্ষা-পাত্র সাথে।
কেঁদে তারা ফিরে যায়, ভয়ে কেহ নাহি আসে কাছে;
‘অনাথপিন্ডদ’-সম
মহাভিক্ষু প্রাণ মম
প্রেম-বুদ্ধ লাগি’ হায় দ্বারে দ্বারে মহাভিক্ষা যাচে,
“ভিক্ষা দাও, পুরবাসি!
বুদ্ধ লাগি’ ভিক্ষা মাগি, দ্বার হ’তে প্রভু ফিরে যায় উপবাসী!’’
কত এল কত গেল ফিরে,-
কেহ ভয়ে কেহ-বা বিস্ময়ে!
ভাঙা-বুকে কেহ,
কেহ অশ্র”-নীরে-
কত এল কত গেল ফিরে!
আমি যাচি পূর্ণ সমর্পণ,
বুঝিতে পারে না তাহা গৃহ-সুখী পুরনারীগণ।
তারা আসে হেসে;
শেষে হাসি-শেষে
কেঁদে তারা ফিরে যায়
আপনার গৃহ স্নেহ”ছায়ে।
বলে তারা, “হে পথিক! বল বল তব প্রাণ কোন্‌ ধন মাগে?
সুরে তব এত কান্না, বুকে তব কা’র লাগি এত ক্ষুধা জাগে?
কি যে চাই বুঝে না ক’ কেহ,
কেহ আনে প্রাণ মম কেহ- বা যৌবন ধন,
কেহ রূপ দেহ।
গর্বিতা ধনিকা আসে মদমত্তা আপনার ধনে
আমারে বাঁধিতে চাহে রূপ-ফাঁদে যৌবনের বনে।….
সর্ব ব্যর্থ, ফিরে চলে নিরাশায় প্রাণ
পথে পথে গেয়ে গেয়ে গান-
“কোথা মোর ভিখারিনী পূজারিণী কই?
যে বলিবে-‘ভালোবেসে সন্ন্যাসিনী আমি
ওগো মোর স্বামি!
রিক্তা আমি, আমি তব গরবিনী,বিজয়িনী নই!”
মর” মাঝে ছুটে ফিরি বৃথা,
হু হু ক’রে জ্ব’লে ওঠে তৃষা-
তারি মাঝে তৃষ্ণা-দগ্ধ প্রাণ
ক্ষণেকের তরে কবে হারাইল দিশা।
দূরে কার দেখা গেল হাতছানি যেন-
ডেকে ডেকে সে-ও কাঁদে-
‘আমি নাথ তব ভিখারিনী,
আমি তোমা’ চিনি,
তুমি মোরে চেন।’
বুঝিনু না, ডাকিনীর ডাক এ যে,
এ যে মিথ্যা মায়া,
জল নহে, এ যে খল, এ যে ছল মরীচিকা ছাষা!
‘ভিক্ষা দাও’ ব’লে আমি এনু তার দ্বারে,
কোথা ভিখারিনী? ওগো এ যে মিথ্যা মায়াবিনী,
ঘরে ডেকে মারে।
এ যে ক্রূর নিষাদের ফাঁদ,
এ যে ছলে জিনে নিতে চাহে ভিখারীর ঝুলির প্রসাদ।
হ’ল না সে জয়ী,
আপনার জালে প’ড়ে আপনি মরিল মিথ্যাময়ী।
কাঁটা-বেঁধা রক্ত মাথা প্রাণ নিয়ে এনু তব পুরে,
জানি নাই ব্যথাহত আমার ব্যথায়
তখনো তোমার প্রাণ পুড়ে।
তবু কেন কতবার মনে যেন হ’ত,
তব স্নিগ্ধ মদিন পরশ মুছে নিতে পারে মোর
সব জ্বালা সব দগ্ধ ক্ষত।
মনে হ’ত প্রাণে তব প্রাণে যেন কাঁদে অহরহ-
‘হে পথিক! ঐ কাঁটা মোরে দাও, কোথা তব ব্যথা বাজে
কহ মোরে কহ!
নীরব গোপন তুমি মৌন তাপসিনী,
তাই তব চির-মৌন ভাষা
শুনিয়াও শুনি নাই, বুঝিয়াও বুঝি নাই ঐ ক্ষুদ্র চাপা-বুকে
কাঁদে কত ভালোবাসা আশা!
এরি মাঝে কোথা হ’তে ভেসে এল মুক্তধারা মা আমার
সে ঝড়ের রাতে,
কোলে তুলে নিল মোরে, শত শত চুমা দিল সিক্ত আঁখি-পাতে।
কোথা গেল পথ-
কোথা গেল রথ-
ডুবে গেল সব শোক-জ্বালা,
জননীর ভালোবাসা এ ভাঙা দেউলে যেন দুলাইল দেয়ালীর আলা!
গত কথা গত জন্ম হেন
হারা-মায়ে পেয়ে আমি ভুলে গেনু যেন।
গৃহহারা গৃহ পেনু, অতি শান- সুখে
কত জন্ম পরে আমি প্রাণ ভ’রে ঘুমাইনু মুখ থুয়ে জননীর বুকে।
শেষ হ’ল পথ-গান গাওয়া,
ডেকে ডেকে ফিরে গেল হা-হা স্বরে পথসাথী তুফানের হাওয়া।
আবার আবার বুঝি ভুলিলাম পথ-
বুঝি কোন্‌ বিজয়িনী-দ্বার প্রানে- আসি’ বাধা পেল পার্থ-পথ-রথ।
ভুলে গেনু কারে মোর পথে পথ খোঁজা,-
ভুলে গেনু প্রাণ মোর নিত্যকাল ধ’রে অভিসারী
মাগে কোন্‌ পূজা,
ভুলে গেনু যত ব্যথা শোক,-
নব সুখ-অশ্র”ধারে গ’লে গেল হিয়া, ভিজে গেল অশ্র”হীন চোখ।
যেন কোন্‌ রূপ-কমলেতে মোর ডুবে গেল আঁখি,
সুরভিতে মেতে উঠে বুক,
উলসিয়া বিলসিয়া উথলিল প্রাণে
এ কী ব্যগ্র উগ্র ব্যথা-সুখ।
বাঁচিয়া নূতন ক’রে মরিল আবার
সীধু-লোভী বাণ-বেঁধা পাখী।….
…. ভেসে গেল রক্তে মোর মন্দিরের বেদী-
জাগিল না পাষাণ-প্রতিমা,
অপমানে দাবানল-সম তেজে
র”খিয়া উঠিল এইবার যত মোর ব্যথা-অর”নিমা।
হুঙ্কারিয়া ছুটিলাম বিদ্রোহের রক্ত-অশ্বে চড়ি’
বেদনার আদি-হেতু স্রষ্টা পানে মেঘ অভ্রভেদী,
ধূমধ্বজ প্রলয়ের ধূমকেতু-ধুমে
হিংসা হোমশিখা জ্বালি’ সৃজিলাম বিভীষিকা স্নেহ-মরা শুষ্ক মর”ভূমে।
…. এ কি মায়া! তার মাঝে মাঝে
মনে হ’ত কতদূরে হ’তে, প্রিয় মোর নাম ধ’রে যেন তব বীণা বাজে!
সে সুদূর গোপন পথের পানে চেয়ে
হিংসা-রক্ত-আঁখি মোর অশ্র”রাঙা বেদনার রসে যেত ছেয়ে।
সেই সুর সেই ডাক স্মরি’ স্মরি’
ভুলিলাম অতীতের জ্বালা,
বুঝিলাম তুমি সত্য-তুমি আছে,
অনাদৃতা তুমি মোর, তুমি মোরে মনে প্রাণে যাচ’,
একা তুমি বনবালা
মোর তরে গাঁথিতেছ মালা
আপনার মনে
লাজে সঙ্গোপনে।
জন্ম জন্ম ধ’রে চাওয়া তুমি মোর সেই ভিখারিনী।
অন-রের অগ্নি-সিন্ধু ফুল হ’য়ে হেসে উঠে কহে- ‘চিনি, চিনি।
বেঁচে ওঠ্‌ মরা প্রাণ! ডাকে তোরে দূর হ’তে সেই-
যার তরে এত বড় বিশ্বে তোর সুখ-শানি- নেই!’
তারি মাঝে
কাহার ক্রন্দন-ধ্বনি বাজে?
কে যেন রে পিছু ডেকে চীৎকারিয়া কয়-
‘বন্ধু এ যে অবেলায়! হতভাগ্য, এ যে অসময়!
শুনিনু না মানা, মানিনু না বাধা,
প্রাণে শুধু ভেসে আসে জন্মন-র হ’তে যেন বিরহিণী ললিতার কাঁদা!
ছুটে এনু তব পাশে
উর্ধ্বশ্বাসে,
মৃত্যু-পথ অগ্নি-রথ কোথা প’ড়ে কাঁদে, রক্ত-কেতু গেল উড়ে পুড়ে,
তোমার গোপান পূজা বিশ্বের আরাম নিয়া এলো বুক জুড়ে।

তারপর যা বলিব হারায়েছি আজ তার ভাষা;
আজ মোর প্রাণ নাই, অশ্র” নাই, নাই শক্তি আশা।
যা বলিব আজ ইহা গান নহে, ইহা শুধু রক্ত-ঝরা প্রাণ-রাঙা
অশ্র”-ভাঙা ভাষা।
ভাবিতেছ, লজ্জাহীন ভিখারীর প্রাণ-
সে-ও চাহে দেওয়ার সম্মান!
সত্য প্রিয়া, সত্য ইহা, আমিও তা স্মরি’
আজ শুধু হেসে হেসে মরি!
তবু শুধু এইটুকু জেনে রাখো প্রিয়তমা, দ্বার হ’তে দ্বারান-রে
ব্যর্থ হ’য়ে ফিরে
এসেছিনু তব পাশে, জীবনের শেষ চাওয়া চেয়েছিনু তোমা’,
প্রাণের সকল আশা সব প্রেম ভালোবাসা দিয়া
তোমারে পূজিয়াছিনু, ওগো মোর বে-দরদী পূজারিণী প্রিয়া!
ভেবেছিনু, বিশ্ব যারে পারে নাই তুমি নেবে তার ভার হেসে,
বিশ্ব-বিদ্রোহীরে তুমি করিবে শাসন
অবহেলে শুধু ভালোবাসে।
ভেবেছিনু, দুর্বিনীত দুর্জয়ীরে জয়ের গরবে
তব প্রাণে উদ্ভাসিবে অপরূপ জ্যোতি, তারপর একদিন
তুমি মোর এ বাহুতে মহাশক্তি সঞ্চারিয়া
বিদ্রোহীর জয়লক্ষ্মী হবে।
ছিল আশা, ছিল শক্তি, বিশ্বটারে টেনে
ছিঁড়ে তব রাঙা পদতলে ছিন্ন রাঙা পদ্মসম পূজা দেব এনে!
কিন’ হায়! কোথা সেই তুমি? কোথা সেই প্রাণ?
কোথা সেই নাড়ী-ছেঁড়া প্রাণে প্রাণে টান?
এ-তুমি আজ সে-তুমি তো নহ;
আজ হেরি-তুমিও ছলনাময়ী,
তুমিও হইতে চাও মিথ্যা দিয়া জয়ী!
কিছু মোরে দিতে চাও, অন্য তরে রাখ কিছু বাকী,-
দুর্ভাগিনী! দেখে হেসে মরি! কারে তুমি দিতে চাও ফাঁকি?
মোর বুকে জাগিছেন অহরহ সত্য ভগবান,
তাঁর দৃষ্টি বড় তীক্ষ্ন, এ দৃষ্টি যাহারে দেখে,
তন্ন তন্ন ক’রে খুঁজে দেখে তার প্রাণ!
লোভে আজ তব পূজা কলুষিত, প্রিয়া,
আজ তারে ভুলাইতে চাহ,
যারে তুমি পূজেছিলে পূর্ণ মন-প্রাণ সমর্পিয়া।
তাই আজি ভাবি, কার দোষে-
অকলঙ্ক তব হৃদি-পুরে
জ্বলিল এ মরণের আলো কবে প’শে?
তবু ভাবি, এ কি সত্য? তুমিও ছলনাময়ী?
যদি তাই হয়, তবে মায়াবিনী অয়ি!
ওরে দুষ্ট, তাই সত্য হোক।
জ্বালো তবে ভালো ক’রে জ্বালো মিথ্যালোক।
আমি তুমি সুর্য চন্দ্র গ্রহ তারা
সব মিথ্যা হোক;
জ্বালো ওরে মিথ্যাময়ী, জ্বালো তবে ভালো ক’রে
জ্বালো মিথ্যালোক।
তব মুখপানে চেয়ে আজ
বাজ-সম বাজে মর্মে লাজ;
তব অনাদর অবহেলা স্মরি’ স্মরি’
তারি সাথে স্মরি’ মোর নির্লজ্জতা
আমি আজ প্রাণে প্রাণে মরি।
মনে হয়-ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠি, ‘মা বসুধা দ্বিধা হও!
ঘৃণাহত মাটিমাখা ছেলেরে তোমার
এ নির্লজ্জ মুখ-দেখা আলো হ’তে অন্ধকারে টেনে লও!
তবু বারে বারে আসি আশা-পথ বাহি’,
কিন’ হায়, যখনই ও-মুখ পানে চাহি-
মনে হয়,-হায়,হায়, কোথা সেই পূজারিণী,
কোথা সেই রিক্ত সন্ন্যাসিনী?
এ যে সেই চির-পরিচিত অবহেলা,
এ যে সেই চির-ভাবহীন মুখ!
পূর্ণা নয়, এ যে সেই প্রাণ নিয়ে ফাঁকি-
অপমানে ফেটে যায় বুক!
প্রাণ নিয়া এ কি নিদার”ণ খেলা খেলে এরা হায়!
রক্ত-ঝরা রাঙা বুক দ’লে অলক্তক পরে এরা পায়!
এর দেবী, এরা লোভী, এরা চাহে সর্বজন-প্রীতি!
ইহাদের তরে নহে প্রেমিকের পূর্ণ পূজা, পূজারীর পূর্ণ সমর্পণ,
পূজা হেরি’ ইহাদের ভীর” বুকে তাই জাগে এত সত্য-ভীতি।
নারী নাহি হ’তে চায় শুধু একা কারো,
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো!
ইহাদের অতিলোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়,
যাচে বহু জন।..
যে-পূজা পূজিনি আমি স্রষ্টা ভগবানে,
যারে দিনু সেই পূজা সে-ই আজি প্রতারণা হানে।
বুঝিয়াছি, শেষবার ঘিরে আসে সাথী মোর মৃত্যু-ঘন আঁখি,
রিক্ত প্রাণ তিক্ত সুখে হুঙ্কারিয়া উঠে তাই,
কার তরে ওরে মন, আর কেন পথে পথে কাঁদি?
জ্বলে’ ওঠ্‌ এইবার মহাকাল ভৈরবের নেত্রজ্বালা সম ধ্বক্‌-ধ্বক্‌,
হাহাকার-করতালি বাজা! জ্বালা তোর বিদ্রোহের রক্তশিখা অনন- পাবক।
আন্‌ তোর বহ্নি-রথ, বাজা তোর সর্বনাশী তূরী!
হান্‌ তোর পরশু-ত্রিশুল! ধ্বংস কর্‌ এই মিথ্যাপুরী।
রক্ত-সুধা-বিষ আন্‌ মরণের ধর টিপে টুটি!
এ মিথ্যা জগৎ তোর অভিশপ্ত জগদ্দল চাপে হোক্‌ কুটি-কুটি!
কন্ঠে আজ এত বিষ, এত জ্বালা,
তবু, বালা,
থেকে থেকে মনে পড়ে-
যতদিন বাসিনি তোমারে ভালো,
যতদিন দেখিনি তোমার বুক-ঢাকা রাগ-রাঙা আলো,
তুমি ততদিনই
যেচেছিলে প্রেম মোর, ততদিনই ছিলে ভিখারিনী।
ততদিনই এতটুকু অনাদরে বিদ্রোহের তিক্ত অভিমানে
তব চোখে উছলাতো জল, ব্যথা দিত তব কাঁচা প্রাণে;
একটু আদর-কণা একটুকু সোহাগের লাগি’
কত নিশি-দিন তুমি মনে কর, মোর পাশে রহিয়াছ জাগি’,
আমি চেয়ে দেখি নাই; তারই প্রতিশোধ
নিলে বুঝি এতদিনে! মিথ্যা দিয়ে মোরে জিনে
অপমান ফাঁকি দিয়ে করিতেছ মোর শ্বাস-রোধ!
আজ আমি মরণের বুক থেকে কাঁদি-
অকর”ণা! প্রাণ নিয়ে এ কি মিথ্যা অকর”ণ খেলা!
এত ভালোবেসে শেষে এত অবহেলা
কেমনে হানিতে পার, নারী!
এ আঘাত পুর”ষের,
হানিতে এ নির্মম আঘাত, জানিতাম মোরা শুধু পুর”ষেরা পারি।
ভাবিতাম, দাগহীন অকলঙ্ক কুমারীর দান,
একটি নিমেষ মাঝে চিরতরে আপনারে রিক্ত করি’ দিয়া
মন-প্রাণ লভে অবসান।
ভুল, তাহা ভুল
বায়ু শুধু ফোটায় কলিকা, অলি এসে হ’রে নেয় ফুল!
বায়ু বলী, তার তরে প্রেম নহে প্রিয়া!
অলি শুধু জানে ভালো কেমনে দলিতে হয় ফুল-কলি-হিয়া!
পথিক-দখিনা-বায়ু আমি চলিলাম বসনে-র শেষে
মৃত্যুহীন চিররাত্রি নাহি-জানা দেশে!
বিদায়ের বেলা মোর ক্ষণে ক্ষণে ওঠে বুকে আনন্দাশ্র” ভরি’
কত সুখী আমি আজ সেই কথা স্মরি’!
আমি না বাসিতে ভালো তুমি আগে বেসেছিলে ভালো,
কুমারী-বুকের তব সব স্নিগ্ধ রাগ-রাঙা আলো
প্রথম পড়িয়াছিল মোর বুকে-মুখে-
ভুখারীর ভাঙা বুকে পুলকের রাঙা বান ডেকে যায় আজ সেই সুখে!
সেই প্রীতি, সেই রাঙা সুখ-স্মৃতি স্মরি’
মনে হয় এ জীবন এ জনম ধন্য হ’ল- আমি আজ তৃপ্ত হ’য়ে মরি!
না-চাহিতে বেসেছিলে ভালো মোরে তুমি-শুধু তুমি,
সেই সুখে মৃত্যু-কৃষ্ণ অধর ভরিয়া
আজ আমি শতবার ক’রে তব প্রিয় নাম চুমি’।
মোরে মনে প’ড়ে-
একদা নিশীথে যদি প্রিয়
ঘুশায়ে কাহারও বুকে অকারণে বুক ব্যথা করে,
মনে ক’রো, মরিয়াছে, গিয়াছে আপদ!
আর কভু আসিবে না
উগ্র সুখে কেহ তব চুমিতে ও-পদ-কোকনদ!
মরিয়াছে-অশান- অতৃপ্ত চির-স্বার্থপর লোভী,-
অমর হইয়া আছে-র’বে চিরদিন
তব প্রেমে মৃত্যুঞ্জয়ী
ব্যথা-বিষে নীলকণ্ঠ কবি!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #107

- কাজী নজরুল ইসলাম


[গান]
এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র! এস পূর্ণিমা-পূর্ণচাঁদ!
ভেদ করি পুন বন্ধ কারার অন্ধকারের পাষাণ-ফাঁদ!
এস অনাগত নব-প্রলয়ের মহা সেনাপতি মহামহিম!
এস অক্ষত মোহান্ধ-ধৃতরাষ্ট্র-মুক্ত লৌহ-ভীম!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

ছয়বার জয় করি কারা-ব্যুহ, রাজ-রাহু-গ্রাস-মুক্ত চাঁদ!
আসিলে চরণে দুলায়ে সাগর নয়-বছরের মুক্ত-বাঁধ!
নবগ্রহ ছিঁড়ি ফণি-মনসার মুকুটে তোমার গাঁথিলে হার,
উদিলে দশম মহাজ্যোতিষ্ক ভেদিয়া গভীর অন্ধকার!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

স্বাগত শুদ্ধ রুদ্ধ-প্রতাপ, প্রবুদ্ধ নব মহাবলী!
দনুজ-দমন দধীচি-অস্থি, বহ্নিগর্ভ দম্ভোলি!
স্বাগত সিংহ-বাহিনী-কুমার! স্বাগত হে দেব-সেনাপতি!
অনাগত রণ-কুরুক্ষেত্রে সারথি-পার্থ-মহারথী!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

নৃশংস রাজ-কংস-বংশে হানিতে তোমরা ধ্বংস-মার
এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র, ভাঙিয়া পাষাণ-দৈত্যাগার!
এস অশান্তি-অগ্নিকাণ্ডে শান্তিসেনার কাণ্ডারি!
নারায়ণী-সেনা-সেনাধিপ, এস প্রতাপের হারা- তরবারি!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন-পদ্মা-ভাগীরথীর!

ওগো অতীতের আজো-ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি ধূম্রশিখ!
না-আসা-দিনের অতিথি তরুণ তব পানে চেয়ে নিনিমিখ।
জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!
জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

স্বর্গ হইতে জননী তোমার পেতেছেন নামি মাটিতে কোল,
শ্যামল শস্যে হরিৎ ধান্যে বিছানো তাঁহারই শ্যাম আঁচল।
তাঁহারি স্নেহের করুণ গন্ধ নবান্নে ভরি উঠিছে ঐ,
নদীস্রোত-স্বরে কাঁদিছেন মাতা, 'কই রে আমার দুলাল কই?'
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

মোছো আঁখি-জল, এস বীর! আজ খুঁজে নিতে হবে আপন মায়,
হারানো মায়ের স্মৃতি-ছাই আছে এই মাটিতেই মিশিয়া,হায়!
তেত্রিশ কোটি ছেলের রক্তে মিশেছে মায়ের ভস্ম-শেষ,
ইহাদেরি মাঝে কাঁদিছেন মাতা, তাই আমাদের মা স্বদেশ।
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন-পদ্মা-ভাগীরথীর!

এস বীর! এস যুগ-সেনাপতি! সেনাদল তব চায় হুকুম,
হাঁকিছে প্রলয়, কাঁপিছে ধরণী, উদ্‌গারে গিরি অগ্নি-ধূম।
পরাধীন এই তেত্রিশ কোটি বন্দির আঁখি-জলে হে বীর,
বন্দিনী মাতা যাচিছে শক্তি তোমার অভয় তরবারির।
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, পাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

গল-শৃঙ্খল টুটেনি আজিও, করিতে পারি না প্রণাম পা'য়,
রুদ্ধ কণ্ঠে ফরিয়াদ শুধু গুমরিয়া মরে গুরু ব্যথায়।
জননীর যবে মিলিবে আদেশ, মুক্ত সেনানী দিবে হুকুম,
শত্রু-খড়্‌গ-ছিন্ন-মুণ্ড দানিবে ও-পায়ে প্রণাম-চুম।
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, পাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #108

- কাজী নজরুল ইসলাম


ভোর হোলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকী ছোট রে!
খুকুমণি ওঠ রে!
রবি মামা
দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান
গায় গান
শোনো ঐ, 'রামা হৈ'।
ত্যাজি' নীড়
ক'রে ভিড়
ওড়ে পাখী আকাশে,
এন্তার
গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে!
চুলবুল
বুলবুল
খুকুমনি উঠবে!
খুলি'হাল
তুলি' পাল
ঐ তরী চ'ললো,
এইবার
এইবার
খুকু চোখ খুললো!
আলসে
নয় সে
ওঠে রোজ সকালে,
রোজ তাই
চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠল
ছুটল
ঐ খোকাখুকী সব,
'উঠেছে
আহে কে'
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত
মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে
ভগবানে
তুষি'বর মাগো রে!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #109

- কাজী নজরুল ইসলাম


তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখির ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

আস্‌ছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,
সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙ্‌ল আগল।
মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে
মহাকালের চণ্ড-রূপে–
ধূম্র-ধূপে
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আস্‌ছে ভয়ঙ্কর–
ওরে ঐ হাস্‌ছে ভয়ঙ্কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপ্‌টা মেরে গগন দুলায়,
সর্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!
বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে
রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে
দোদুল্‌ দোলে!
অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর–
ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন-কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
বিন্দু তাহার নয়ন-জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
কপোল-তলে!
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর 'পর–
হাঁকে ঐ 'জয় প্রলয়ঙ্কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

মাভৈ মাভৈ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে!
জরায়-মরা মুমূর্ষদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে!
এবার মহা-নিশার শেষে
আস্‌বে ঊষা অরুণ হেসে
করুণ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু চাঁদের কর,
আলো তার ভর্‌বে এবার ঘর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঐ সে মহাকাল-সারথি রক্ত-তড়িত-চাবুক হানে,
রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্র-গানে ঝড়-তুফানে!
খুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!
গগন-তলের নীল খিলানে।
অন্ধ করার বন্ধ কূপে
দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে
পাষাণ স্তূপে!
এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর–
শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? –প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন– জীবন-হারা অ-সুন্দরে কর্‌তে ছেদন!
তাই সে এমন কেশে বেশে
প্রলয় বয়েও আস্‌ছে হেসে–
মধুর হেসে!
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!–
বধূরা প্রদীপ তুলে ধর্‌!
কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!–
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #110

- কাজী নজরুল ইসলাম


আমাদের ভালো করো হে ভগবান।
সকলের ভালো করো হে ভগবান।।

আমাদের সব লোকে বাসিবে ভালো।
আমরাও সকলেরে বাসিব ভালো।
রবে না হিংসা দ্বেষ
দেহ ও মনে ক্লেশ,
মাটির পৃথিবী হবে স্বর্গ- সমান-
হে ভগবান।।

জ্ঞানের আলোক দাও হে ভগবান।
বিপুল শক্তি দাও হে ভগবান।।

তোমারই দেওয়া জ্ঞানে চিনিব তোমায়,
তোমারই শক্তি হবে কর্মে সহায়।
ধর্ম যদি সাথী হয়
রবে না ক দুঃখ ভয়,
বিপদে পড়িলে তুমি করো যেন ত্রান-
হে ভগবান।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #111

- কাজী নজরুল ইসলাম


এই ধরণীর ধূলি-মাখা তব অসহায় সন্তান
মাগে প্রতিকার, উত্তর দাও, আদি-পিতা ভগবান!-
আমার আঁখির দুখ-দীপ নিয়া
বেড়াই তোমার সৃষ্টি ব্যাপিয়া,
যতটুকু হেরি বিস্ময়ে মরি, ভ’রে ওঠে সারা প্রাণ!
এত ভালো তুমি? এত ভালোবাসা? এত তুমি মহীয়ান্‌?
ভগবান! ভগবান!

তোমার সৃষ্টি কত সুন্দর, কত সে মহৎ, পিতা!
সৃষ্টি-শিয়রে ব’সে কাঁদ তবু জননীর মতো ভীতা!
নাহি সোয়াসি-, নাহি যেন সুখ,
ভেঙে গড়ো, গড়ে ভাঙো, উৎসুক!
আকাশ মুড়েছ মরকতে-পাছে আঁখি হয় রোদে ম্লান।
তোমার পবন করিছে বীজন জুড়াতে দগ্ধ প্রাণ!
ভগবান! ভগবান!

রবি শশী তারা প্রভাত-সন্ধ্যা তোমার আদেশ কহে-
‘এই দিবা রাতি আকাশ বাতাস নহে একা কারো নহে।
এই ধরণীর যাহা সম্বল,-
বাসে-ভরা ফুল, রসে-ভরা ফল,
সু-স্নিগ্ধ মাটি, সুধাসম জল, পাখীর কন্ঠে গান,-
সকলের এতে সম অধিকার, এই তাঁর ফরমান!’
ভগবান! ভগবান!

শ্বেত পীত কালো করিয়া সৃজিলে মানবে, সে তব সাধ।
আমরা যে কালো, তুমি ভালো জান, নহে তাহা অপরাধ!
তুমি বল নাই, শুধু শ্বেতদ্বীপে
জোগাইবে আলো রবি-শশী-দীপে,
সাদা র’বে সবাকার টুঁটি টিপে, এ নহে তব বিধান।
সন-ান তব করিতেছে আজ তোমার অসম্মান!
ভগবান! ভগবান!

তব কনিষ্ঠ মেয়ে ধরণীরে দিলে দান ধুলা-মাটি,
তাই দিয়ে তার ছেলেদের মুখে ধরে সে দুধের বাটি!
ময়ূরের মতো কলাপ মেলিয়া
তার আনন্দ বেড়ায় খেলিয়া-
সন-ান তার সুখী নয়, তারা লোভী, তারা শয়তান!
ঈর্ষায় মাতি’ করে কাটাকাটি, রচে নিতি ব্যবধান!
ভগবান! ভগবান!
তোমারে ঠেলিয়া তোমার আসনে বসিয়াছে আজ লোভী,
রসনা তাহার শ্যামল ধরায় করিছে সাহারা গোবী!
মাটির ঢিবিতে দু’দিন বসিয়া
রাজা সেজে করে পেষণ কষিয়া!
সে পেষণে তারি আসন ধসিয়া রচিছে গোরস’ান!
ভাই-এর মুখের গ্রাস কেড়ে খেয়ে বীরের আখ্যা পান!
ভগবান! ভগবান!

জনগণে যারা জোঁক সম শোষে তারে মহাজন কয়,
সন-ান সম পালে যারা জমি, তারা জমিদার নয়।
মাটিতে যাদের ঠেকে না চরণ,
মাটির মালিক তাঁহারাই হন-
যে যত ভন্ড ধড়িবাজ আজ সেই তত বলবান।
নিতি নব ছোরা গড়িয়া কসাই বলে জ্ঞান-বিজ্ঞান।
ভগবান! ভগবান!

অন্যায় রণে যারা যত দড় তারা তত বড় জাতি,
সাত মহারথী শিশুরে বধিয়া ফুলায় বেহায়া ছাতি!
তোমার চক্র রুধিয়াছে আজ
বেনের রৌপ্য-চাকায়, কি লাজ!
এত অনাচার স’য়ে যাও তুমি, তুমি মহা মহীয়ান্‌ ।
পীড়িত মানব পারে না ক’ আর, সবে না এ অপমান-
ভগবান! ভগবান!
ঐ দিকে দিকে বেজেছে ডঙ্কা শঙ্কা নাহি ক’ আর!
‘ মরিয়া’র মুখে মারণের বাণী উঠিতেছে ‘মার মার!’
রক্ত যা ছিল ক’রেছে শোষণ,
নীরক্ত দেহে হাড় দিয়ে রণ!
শত শতাব্দী ভাঙেনি যে হাড়, সেই হাড়ে ওঠে গান-
‘ জয় নিপীড়িত জনগণ জয়! জয় নব উত্থান!
জয় জয় ভগবান!’

তোমার দেওয়া এ বিপুল পৃথ্বী সকলে কবির ভোগ,
এই পৃথিবীর নাড়ী সাথে আছে সৃজন-দিনের যোগ।
তাজা ফুল ফলে অঞ্চলি পুরে
বেড়ায় ধরণী প্রতি ঘরে ঘুরে,
কে আছে এমন ডাকু যে হরিবে আমার গোলার ধান?
আমার ক্ষুধার অন্নে পেয়েছি আমার প্রাণের ঘ্রাণ-
এতদিনে ভগবান!

যে-আকাশে হ’তে ঝরে তব দান আলো ও বৃষ্টি-ধারা,
সে-আকাশ হ’তে বেলুন উড়ায়ে গোলাগুলি হানে কা’রা?
উদার আকাশ বাতাস কাহারা
করিয়া তুলিছে ভীতির সাহারা?
তোমার অসীম ঘিরিয়া পাহারা দিতেছে কা’র কামান?
হবে না সত্য দৈত্য-মুক্ত? হবে না প্রতিবিধান?
ভগবান! ভগবান!

তোমার দত্ত হসে-রে বাঁধে কোন্‌ নিপীড়ন-চেড়ী?
আমার স্বাধীন বিচরণ রোধে কার আইনের বেড়ী?
ক্ষুধা তৃষা আছে, আছে মোর প্রাণ,
আমিও মানুষ, আমিও মহান্‌ !
আমার অধীনে এ মোর রসনা, এই খাড়া গর্দান!
মনের শিকল ছিঁড়েছি, পড়েছে হাতের শিকলে টান-
এতদিনে ভগবান!
চির-অবনত তুলিয়াছে আজ গগনে উ”চ শির।
বান্দা আজিকে বন্ধন ছেদি’ ভেঙেছে কারা-প্রাচীর।
এতদিনে তার লাগিয়াছে ভালো-
আকাশ বাতাস বাহিরেতে আলো,
এবার বন্দী বুঝেছে, মধুর প্রাণের চাইতে ত্রাণ।
মুক্ত-কন্ঠে স্বাধীন বিশ্বে উঠিতেছে একতান-
জয় নিপীড়িত প্রাণ!
জয় নব অভিযান!
জয় নব উত্থান!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #112

- কাজী নজরুল ইসলাম


ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা দুলাল কাঁদে
অঝোর নয়নে রে।
দু'হাতে তুলিয়া পানি ফেলিয়া দিলেন অমনি
পড়িল কি মনে রে।।

দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি ছাহিয়ে রে
দুষ্মনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে,
শাদীর নওশা কাসেম শহীদ এই পানি বহনে রে।।

এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকীনার,
এই পানিরই ঢেউয়ে ওঠে তারি মাতম হাহাকার,
শহীদানের খুন মিশে আছে এই পানিরই সনে রে।।

বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হলো এরি তরে রে,
এই পানি বিহনে জয়নাল খিমায় তৃষ্ণায় মরে রে,
শোকে শহীদ হলেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #113

- কাজী নজরুল ইসলাম


সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,
সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস্‌ লো মাথা!
যার অন্তরে ক্রন্দন
করে হৃদি মন্থন
তারে হরি-চন্দন
কমলী মালা-
সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!
বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!
এল খুন-মাখা তৃণ নিয়ে খু’নেরা ফাগুন!
সে যেন হানে হুল্‌-খুনসুড়ি,
ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি
আইবুড়ো আইবুড়ো
বুকে ধরে ঘুণ!
যত বিরহিণী নিম্‌-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!

আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু চুর!
সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!
হ’ল মাদার আশোক ঘা’ল,
রঙন তো নাজেহাল!
লালে লাল ডালে-ডাল
পলাশ শিমুল!
সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল্‌!

নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!
চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি’।
কত ঘাটে ঘাটে সই-সই
ঘট ভরে নিতি ওই,
চোখে মুখে ফোটে খই,-
আব-রাঙা গাল,
যত আধ-ভাঙা ইঙ্গিত তত হয় লাল!

আর সইতে পারিনে সই ফুল-ঝামেলা!
প্রাতে মল্লী চাঁপা, সাঁজে বেলা চামেলা!
হের ফুটবো মাধী হুরী
ডগমগ তরুপুরী,
পথে পথে ফুলঝুরি
সজিনা ফুলে!
এত ফুল দেখে কুলবালা কূল না ভুলে!

সাজি’ বাটা-ভরা ছাঁচিপান ব্যজনী-হাতে
করে স্বজনে বীজন কত সজনী ছাতে!
সেথা চোখে চোখে সঙ্কেত
কানে কথা-যাও ধেৎ,-
ঢ’লে-পড়া অঙ্কেতে
মন্‌মথ-ঘায়!
আজ আমি ছাড়া আর সবে মন-মত পায়।

সখি মিষ্টি ও ঝাল মেশা এল এ কি বায়!
এ যে বুক যত জ্বালা করে মুখ তত চায়!
এযে শরাবের মতো নেশা
এ পোড়া মলয় মেশা,
ডাকে তাহে কুলনাশা
কালামুখো পিক।
যেন কাবাব করিতে বেঁধে কলিজাতে শিক্‌!

এল আলো-রাধা ফাগ ভরি’ চাঁদের থালায়
ঝরে জোছনা-আবীর সারা শ্যাম সুষমায়!
যত ডাল-পালা নিম্‌খুন,
ফুলে ফুলে কুঙ্কুম্‌,
চুড়ি বালা রুম্‌ঝুম,
হোরির খেলা,
শুধু নিরালায় কেঁদে মরি আমি একেলা!

আজ সঙ্কেত-শঙ্কিত বন-বীথিকায়
কত কুলবধূ ছিঁড়ে শাড়ি কুলের কাঁটায়!
সখি ভরা মোর এ দু’কুল
কাঁটাহীন শুধু ফুল!
ফুলে এত বেঁধে হুল?
ভালো ছিল হায়,
সখি ছিঁড়িত দু’কূল যদি কুলের কাঁটায়!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #114

- কাজী নজরুল ইসলাম


বঁধু, মিটিলনা সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।

আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয় ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।

যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
সেই গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল আমারে গেরুয়া শাড়ি

বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে
সকলের প্রেম নিয়ে দিনু তব পায়।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #115

- কাজী নজরুল ইসলাম


এতদিন ছিলে ভুবনের তুমি
আজ ধরা দিলে ভবনে,
নেমে এলে আজ ধরার ধুলাতে
ছিলে এতদিন স্বপনে!
শুধু শোভাময়ী ছিলে এত দিন
কবির মানসে কলিকা নলিন,
আজ পরশিলে চিত্ত- পুলিন
বিদায় গোধূলি- লগনে।
ঊষার ললাট- সিন্দুর- টিপ
সিথিঁতে উড়াল পবনে।।

প্রভাতে ঊষা কুমারী, সেজেছে
সন্ধ্যায় বধূ ঊষসী,
চন্দন- টোপা- তারা- কলঙ্কে
ভ'রেছে বে-দাগ- মু'শশী।
মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন
লাজ সুখে আজ যাচে গুন্ঠন,
নোটন- কপোতি কন্ঠে এখন
কূজন উঠিছে উছসি'।
এতদিন ছিলে শুধু রূপ- কথা,
আজ হলে বধূ রূপসী।।

দোলা চঞ্চল ছিল এই গেহ
তব লটপট বেণী ঘা'য়,
তারি সঞ্চিত আনন্দে ঝলে
ঐ ঊর- হার মনিকায়।
এ ঘরের হাসি নিয়ে যাও চোখে,
সে গৃহ- দ্বীপ জ্বেলো এ আলোকে,
চোখের সলিল থাকুক এ-লোকে-
আজি এ মিলন মোহানায়
ও- ঘরের হাসি বাশিঁর বেহাগ
কাঁদুক এ ঘরে সাহানায়।।

বিবাহের রঙ্গে রাঙ্গা আজ সব,
রাঙ্গা মন, রাঙ্গা আভরণ,
বলো নারী- 'এই রক্ত- আলোকে
আজ মম নব জাগরণ!'
পাপে নয় পতি পুণ্যে সুমতি
থাকে যেন, হ'ইয়ো পতির সারথি।
পতি যদি হয় অন্ধ, হে সতী,
বেঁধো না নয়নে আবরণ;
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন
তোমার সত্য আচরণ।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #116

- কাজী নজরুল ইসলাম


ওগো বাদলের পরী!
যাবে কোন্‌ দূরে, ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী!
ওগো ও ক্ষণিকা, পুব-অভিসার ফুরাল কি আজি তব?
পহিল্‌ ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন্‌ দেশ অভিনব?

তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পান্ডুর কেয়া-রেণু,
তোমারে স্মরিয়া ভাদরের ভরা নদীতটে কাঁদে বেণু।

কুমারীর ভীরু বেদনা-বিধুর প্রণয়-অশ্রু সম
ঝরিছে শিশির-সিক্ত শেফালি নিশি-ভোরে অনুপম।

ওগো ও কাজল-মেয়ে,
উদাস আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে'।
কাশফুল সম শুভ্র ধবল রাশ রাশ শ্বেত মেঘে
তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে'।

ওগো ও জলের দেশের কন্যা! তব ও বিদায়-পথে
কাননে কাননে কদম-কেশর ঝরিছে প্রভাত হ'তে।
তোমার আদরে মুকুলিতা হয়ে উঠিল যে বল্লরী
তরুর কণ্ঠ জড়াইয়া তা'রা কাঁদে নিশিদিন ভরি'।

'বৌ-কথা-কও' পাখি
উড়ে গেছে কোথা, বাতায়নে বৃথা বঊ করে ডাকাডাকি।
চাঁপার গেলাস গিয়াছে ভাঙিয়া, পিয়াসী মুধুপ এসে'
কাঁদিয়া কখন গিয়াছে উড়িয়া কমল-কুমদী দেশে।

তুমি চলে যাবে দূরে,
ভাদরের নদী দুকূল ছাপায়ে কাঁদে ছলছল সুরে!

যাবে যবে দূর হিম-গিরি শিরে, ওগো বাদলের পরী,
ব্যথা ক'রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি'?
সেথা নাই জল, কঠিন তুষার, নির্মম শুভ্রতা,--
কে জানে কি ভাল বিধুর ব্যথা -- না মধুর পবিত্রতা।
সেথা মহিমার উর্ধ্ব শিখরে নাই তরলতা হাসি,
সেথা রজনীর রজনীগন্ধা প্রভাতে হয় না বাসি।
সেথা যাও তব মুখর পায়ের বরষা-নূপুর খুলি',
চলিতে চকিতে চমকি' উঠ না, কবরে ওঠে না দুলি'।
সেথা র'বে তুমি ধেয়ান-মগ্না তাপসিনী অচপল,
তোমার আশায় কাঁদিবে ধরায় তেমনি "ফটিক জল"।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #117

- কাজী নজরুল ইসলাম


বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল।
আজো তা’র ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি, তন্দ্রাতে বিলোল।

আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশিদিন,
আসেনি, যখন’ হাওয়া গজল গাওয়া, মৌমাছি বিভোল।।

কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি’ আসবে বাহিরে,
গিশিরের স্পর্শমুখে ভাঙ্গবে, রে ঘুম রাঙবে, রে কপোল।।

ফাগুনের মুকুল জাগা দুকুল ভাঙ্গা আসবে ফুলের বান,
কুঁড়িদের ওষ্ঠপুটে লুটবে হাসি, ফুটবে গালে টোল।।

কবি তুই গন্ধে ভু’লে ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর,
ফুলে তোর বুক ভরেছিল, আজকে জলে ভরবে আঁখির কোল |


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #118

- কাজী নজরুল ইসলাম


বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার
ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।।

মুখেতে কালেমা হাতে তলোয়ার,
বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার,
হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহর
চল আগে চল বাজে বিষান।
ভয় নাই তর গলায় তাবিজ
বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান।।

নহি মোরা জীব ভোগ- বিলাসের,
শাহাদাত ছিল কাম্য মোদের,
ভিখারির সাজে খলীফা যাদের
শাসন করিল আধা জাহান-
তারা আজ পড়ে ঘুমায়ে বেহুঁশ
বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান।।

ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,
তখনো জাগিনি যখন যোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাত শামিল হওরে এশাতে
এখনো জমাতে আছে স্থান।।

শুকনো রুটিকে সম্বল ক’রে
যে ঈমান আর যে প্রানের জোরে
ফিরেছে জগত মন্থন ক’রে
সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।
আল্লাহ আকবর রবে পুনঃ
কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #119

- কাজী নজরুল ইসলাম


বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী!
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হয়ে এল বিদায়ের রাতি!
আজ হ'তে হ'ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি,
আজ হ'তে হ'ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি।...

অস্ত-আকাশ-অলিন্দে তার শীর্ণ কপোল রাখি’
কাঁদিতেছে চাঁদ, "মুসাফির জাগো, নিশি আর নাই বাকি।"
নিশীথিনী যায় দূর বন-ছায়, তন্দ্রায় ঢুলুঢুল্,
ফিরে ফিরে চায়, দু’হাতে জড়ায় আঁধারের এলোচুল।--
চমকিয়া জাগি, ললাটে আমার কাহার নিশাস লাগে?
কে করে বীজন তপ্ত ললাটে, কে মোর শিয়রে জাগে?
জেগে দেখি, মোর বাতায়ন-পাশে জাগিছে স্বপনচারী
নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাক-তরুর সারি!

তোমাদের আর আমার আঁখির পল্লব-কম্পনে
সারা রাত মোরা কয়েছি যে কথা, বন্ধু, পড়িছে মনে!--
জাগিয়া একাকী জ্বালা ক'রে আঁখি আসিত যখন জল,
তোমাদের পাতা মনে হ’ত যেনো সুশীতল করতল
আমার প্রিয়ার!--তোমার শাখার পল্লবমর্মর
মনে হ’ত যেন তারি কন্ঠের আবেদন সকাতর।
তোমার পাতায় দেখেছি তাহারি আঁখির কাজল-লেখা,
তোমার দেহেরই মতন দীঘল তাহার দেহের রেখা।
তব ঝিরঝির মিরমির যেন তারি কুন্ঠিত বাণী,
তোমার শাখায় ঝুলানো তারির শাড়ির আঁচলখানি।
--তোমার পাখার হাওয়া
তারি আঙ্গুলি-পরশের মত নিবিড় আদর-ছাওয়া!

ভাবিতে ভাবিতে ঢুলিয়া পড়েছি ঘুমের শ্রান্ত কোলে,
ঘুমায়ে স্বপন দেখেছি,-- তোমারি সুনীল ঝালর দোলে
তেমনি আমার শিথানের পাশে। দেখেছি স্বপনে, তুমি
গোপনে আসিয়া গিয়াছ আমার তপ্ত ললাট চুমি’।

হয়ত স্বপনে রাড়ায়েছি হাত লইতে পরশখানি,
বাতায়নে ঠেকি’ ফিরিয়া এসেছে, লইয়াছি লাজে টানি’।
বন্ধু, এখন রুদ্ধ করিতে হইবে সে বাতায়ন!
ডাকে পথ, হাঁকে যাত্রীরা, ‘কর বিদায়ের আয়োজন’।

--আজি বিদায়ের আগে
আমারে জানাতে তোমারে জানিতে কত কি যে সাধ জানে!
মর্মের বাণী শূনি তব, শুধু মুখের ভাষায় কেন
জানিতে চায় ও বুকের ভাষারে লোভাতুর মন হেন?
জানি--মুখে মুখে হবে না মোদের কোনদিন জানাজানি,
বুকে বুকে শুধু বাজাইবে বীণা বেদনার বীণাপাণি।

হয়তো তোমারে দেখিয়াছি , তুমি যাহা নও তাই ক'রে,
ক্ষতি কি তোমার, যদি গো আমার তাতেই হৃদয় ভরে?
সুন্দর যদি করে গো তোমারে আমার আঁখির জল,
হারা-মোমতাজে লয়ে কারো প্রেম রচে যদি তাজম'ল,
--বল তাহে কার ক্ষতি?
তোমারে লইয়া সাজাব না ঘর, সৃজিব অমরাবরী।।..

হয়ত তোমার শাখায় কখনো, বসেনি আসিয়া পাখী
তোমার কুঞ্জে পত্রপুঞ্জে কোকিল ওঠেনি ডাকি'।
শূন্যের পানে তুলিয়া ধরিয়া পল্লব-আবেদন
জেগেছে নিশীথে জাগেনি ক' সাথে খুলি' কেহ বাতায়ন।
-- সব আগে আমি আসি'
তোমারে চাহিয়া জেগেছি নিশীথ, গিয়াছি গো ভালোবাসি!
তোমার পাতায় লিখিলাম আমি প্রথম প্রণয়-লেখা,
এইটুকু হোক সান্ত্বনা মোর, হোক বা না হোক্‌ দেখা।...

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।
কোলাহল করি' সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না
--নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।--

শুধাইতে নাই, তবুও শুধাই আজিকে যাবার আগে--
ঐ পল্লব-জাফ্‌রি খুলিয়া তুমিও কি অনুরাগে
দেখেছ আমারে--দেখিয়াছি যবে তামি বাতায়ন খুলি'?
হাওয়ায় না মোর অনুরাগে তব পাতা উঠিয়াছে দুলি'।
তোমার পাতার হরিৎ আঁচলে চাঁদিনী ঘুমায়ে যবে,
মূর্ছিতা হবে সুখের আবেশে,--সে আলোর উৎসবে
মনে কি পড়িবে এই ক্ষণিকের অতিথির কথা আর?
তোমার নিশ্বাস শূন্য এ ঘরে করিবে কি হাহাকার?
চাঁদের আলোক বিস্বাদ কি গো লাগিবে সেদিন চোখে?
খড়খড়ি খুলি' চেয়ে র'বে দূর অস্ত অলখ-লোকে?-
--অথবা এমনি করি'
দাঁড়ায়ে রহিবে আপন ধেয়ানে সারা দিনমান ভরি'?

মলিন মাটির বন্ধনে বাঁধা হয় অসহায় তরু,
পদতলে ধূলি, উর্দ্ধে তোমার শূন্য গগন-মরু।
দিবসে পুড়িছ রৌদ্রের দাহে, নিশীথে ভিজিছ হিমে,
কাঁদিবারও নাই শকতি, মৃত্যু-আফিসে পড়িছ ঝিমে!
তোমার দুঃখ তোমারেই যদি, বন্ধু, ব্যথা না হানে,
কি হবে রিক্ত চিত্ত ভরিয়া আমার ব্যথার দানে!...
* * *
ভুল করে' কভু আসিলে স্মরণে অমনি তা যেনো ভুলি'।
যদি ভুল ক'রে কখনো এ মোর বাতায়ন যায় খুলি',
বন্ধ করিয়া দিও পুনঃ তায়!.......তোমার জাফ্‌রি-ফাঁকে
খুঁজো না তাহারে গগন-আঁধারে--মাটিতে পেলে না যাকে!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #120

- কাজী নজরুল ইসলাম


কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে?
হয়ত তোমায় স-ন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।
না-ই হ’লে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি;
তোমাদের ছেলে আমাদেরই মতো, তারা আমাদের জ্ঞাতি;
আমাদেরই মতো খ্যাতি যশ মান তারাও লভিতে পারে,
তাহাদের সাধনা হানা দিতে পারে সদর স্বর্গ-দ্বারে।-
স্বর্গবেশ্যা ঘৃতাচী-পুত্র হ’ল মহাবীর দ্রোণ,
কুমারীর ছেলে বিশ্ব-পূজ্য কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন.
কানীন-পুত্র কর্ণ হইল দান-বীর মহারথী
স্বর্গ হইতে পতিতা গঙ্গা শিবেরে পেলেন পতি,
শান-নু রাজা নিবেদিল প্রেম পুনঃ সেই গঙ্গায়-
তাঁদেরি পুত্র অমর ভীষ্ম, কৃষ্ণ প্রণমে যায়!
মুনি হ’ল শুনি সত্যকাম সে জারজ জবালা-শিশু,
বিস্ময়কর জন্ম যাঁহার-মহাপ্রেমিক সে যিশু!-
কেহ নহে হেথা পাপ-পঙ্কিল, কেহ সে ঘৃণ্য নহে,
ফুটিছে অযুত বিমল কমল কামনা-কালীয়-দহে!
শোনো মানুষের বাণী,
জন্মের পর মানব জাতির থাকে না ক’ কোনো গ্লানি!
পাপ করিয়াছি বলিয়া কি নাই পুণ্যেরও অধিকার?
শত পাপ করি’ হয়নি ক্ষুন্ন দেবত্ব দেবতার।
অহল্যা যদি মুক্তি লভে, মা, মেরী হ’তে পারে দেবী,
তোমরাও কেন হবে না পূজ্যা বিমল সত্য সেবি’?
তব সন্তানে জারজ বলিয়া কোন্‌ গোঁড়া পাড়ে গালি,
তাহাদের আমি এই দু’টো কথা জিজ্ঞাসা করি খালি-
দেবতা গো জিজ্ঞাসি-
দেড় শত কোটি সন্তান এই বিশ্বের অধিবাসী-
কয়জন পিতা-মাতা ইহাদের হ’য়ে নিষ্কাম ব্রতী
পুত্রকন্যা কামনা করিল? কয়জন সৎ-সতী?
ক’জন করিল তপস্যা ভাই সন্তান-লাভ তরে?
কার পাপে কোটি দুধের বা”চা আঁতুড়ে জন্মে’ মরে?
সেরেফ্‌ পশুর ক্ষুধা নিয়ে হেথা মিলে নরনারী যত,
সেই কামানার সন্তান মোরা! তবুও গর্ব কত!
শুন ধর্মের চাঁই-
জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোনো সে প্রভেদ নাই!
অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #121

- কাজী নজরুল ইসলাম


হে মোর রাণি! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
আমার সমর-জয়ী অমর তরবারী
দিনে দিনে ক্লানি- আনে, হ’য়ে ওঠে ভারী,
এখন এ ভার আমার তোমায় দিয়ে হারি,
এই হার-মানা-হার পরাই তোমার কেশে।।

ওগো জীবন-দেবী।
আমায় দেখে কখন তুমি ফেললে চোখের জল,
আজ বিশ্বজয়ীর বিপুল দেউল তাইতে টলমল!
আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত-রথের চূড়ে,
বিজয়িনী! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে,
যত তৃণ আমার আজ তোমার মালায় পূরে’,
আমি বিজয়ী আজ নয়ন-জলে ভেসে।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #122

- কাজী নজরুল ইসলাম


তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না,
জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।
ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,
শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।।
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা,
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ
দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
চলার তোমার বাকী পথটুকু-
পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক-
হায়, অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না,
ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।।

দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি
তব ব্যথা কেউ বোঝে না,
তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী,
পথে ফেরে যারা পথ-হারা,
কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না,
বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি?
দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে?
এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে!
তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায়
কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায়
আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়-
পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক!
কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো
মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না,
ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #123

- কাজী নজরুল ইসলাম


পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু
এ নহে পথের আলাপন।
এ নহে সহসা পথ-চলা শেষে
শুধু হাতে হাতে পরশন।।
নিমেষে নিমেষে নব পরিচয়ে
হ’লে পরিচিত মোদের হৃদয়ে,
আসনি বিজয়ী-এলে সখা হ’য়ে,
হেসে হ’রে নিলে প্রাণ-মন।।
রাজাসনে বসি’ হওনি ক’ রাজা,
রাজা হ’লে বসি, হৃদয়ে,
তাই আমাদের চেয়ে তুমি বেশী
ব্যথা পেলে তব বিদায়ে।
আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তার দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।।


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro



Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #124

- কাজী নজরুল ইসলাম


বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর -
চির উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি' ছমকি'
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ,
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম্
ভরপুর মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর -
চির উন্নত মম শির।

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, - আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, - কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত
বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক'রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা'র কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! -
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!

আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আণি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি' ভূমি-কম্প!
ধরি বাসুকির ফনা জাপটি', -
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি'!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরী তানে পাশরি'
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে' যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা -
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!!
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!


ফ্রী হাজার হাজার কবিতা আপনার মোবাইলে পেতে "কবিতা সমগ্র" অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি কবিতা এসএমএস, শেয়ার, রেটিং, লেখার ডিজাইন পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bangaliapps.bangla_kobita_samogro





Bangla Kobita of Kazi Nazrul Islam #125

- কাজী নজরুল ইসলাম


এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে।

কেন কি কথা স্মরণে রাজে?
বুকে কার হতাদর বাজে?
কোন্‌ ক্রন্দন হিয়া-মাঝে
ওঠে গুমরি’ ব্যর্থতাতে
আর জল ভরে আঁখি-পাতে।।

মম বর্থ জীবন-বেদনা
এই নিশীথে লুকাতে নারি,
তাই গোপনে একাকী শয়নে
শুধু নয়নে উথলে বারি।
ছিল সেদিনো এমনি নিশা,
বুকে জেগেছিল শত তৃষা
তারি ব্যর্থ নিশাস মিশা
ওই শিথিল শেফালিকাতে
আর পূরবীতে বেদনাতে।।





Tags:
Bangla kobita, Bangla poem, Bangla kobita Samogro,bangla kobita,bangla sms kobita,bangla premer kobita,premer kobita,bangla love kobita,bangla kobit ,mp3,shesher kobita,www.bangla kobita.com,bengali kobita,bangla kobita collection,bangla kobita sms,kobita o gaan,kobita bangla,bangla kobita.com,bangla romantic kobita,valobashar kobita,valobasar Kobita,bangla kobita download,bangla kobita abritti,bangla kobita free download,bangla kobita love,kazi nazrul islam kobita,bangla valobashar kobita,bangla kobita lyrics,bangla kobita pdf,bangla ad kobita,kobita mp3,romantic bangla kobita,shesher kobita pdf,bengali songs

13 comments:

  1. Thank you. This a great job. We need Nazrul idea and ideology
    "সমাধি হইতে আর যেন নাহি উঠি প্রলয়ের আগে!”
    After covid 19 we need nazrul to be unitrd as human being

    ReplyDelete
  2. পাপী কবিতা পড়তে চাই।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো সংগ্ৰহ

    ReplyDelete
  4. বর প্রার্থনা কবিতাটি দিলে খুব ভালো হতো।

    ReplyDelete
  5. বরপ্রার্থনা কবিতাটি পেলাম না

    ReplyDelete
  6. সব্যসাচী কবিতা টি পেলাম না।

    ReplyDelete
  7. একটা পুরোনো গান বের করে দেয়া যাবে?

    ReplyDelete